সামনেই বিমান বসুর গাড়ি। ইনসেটে, বক্তৃতা করছেন তিনি। রবিবার গোঘাটে ছবি দু’টি তুলেছেন মোহন দাস।
গোঘাটের সভায় যাওয়ার পথে কালো পতাকা দেখানো হল বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে। গোঘাট তৃণমূল অফিসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে রাস্তায় জনা ছ’য়েক যুবক দাঁড়িয়ে ওই কাণ্ড করে। সভা সেরে ফেরার পথে আবার স্থানীয় বকুলতলায় বিমানবাবুকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি উড়ে আসে।
সভায় বিমানবাবু পরে বলেন, “আমাকে কালো কাপড় দেখিয়ে কয়েক জন নাচানাচি করছিল। ওরা কাপুরুষের দল। কিছু লোককে পয়সা দিয়ে ওই কাজ করতে বলেছে।” কটূক্তি প্রসঙ্গে তিনি আবার সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যে নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে এনে শাসক দলের সমালোচনা করেন। তাঁর কথায়, “এখন ধর্ষণের কথা তো রাজ্যবাসীকে প্রতিদিনই শুনতে হচ্ছে। আমাদের সময়ে একেবারে হয়নি তা বলব না। কিন্তু যে ক’টি হয়েছে তার প্রশাসনিক তদন্তের ব্যবস্থা ছিল। এখন তো মা-মাটি-মানুষের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, এটা তুচ্ছ ঘটনা।”
তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত অবশ্য কালো পতাকা দেখানো বা কটূক্তি প্রসঙ্গে তাঁদের দলের কারও জড়িত থাকার অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, “এলাকার সাধারণ মানুষ এমনটা করে থাকতে পারে। এত বছর ধরে দিন ওরা তো ওই সব এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।”
তৃণমূল এ রাজ্যে মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ শুরু করেছে বলে এ দিন শাসক দলের কড়া সমালোচনা করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু। আরামবাগের সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিকের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে গোঘাটের কামারপুকুর চটির কাছে সিপিএমের জোনাল অফিস সংলগ্ন ছোট মাঠে সভা করেন তিনি। সঙ্গে প্রার্থী ছাড়াও ছিলেন জেলা ও রাজ্যস্তরের বাম নেতৃত্ব।
এ দিন আগাগোড়াই তৃণমূল সরকারকে তুলোধোনা করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। কিছু ক্ষেত্রে কংগ্রেস এবং বিজেপিরও সমালোচনা করেছেন তিনি। বর্ষীয়ান এই বাম নেতার কথায়, “নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। শ্রমিকেরা কাজ হারাচ্ছেন। নতুন কোনও কলকারখানা তৈরি হচ্ছে না রাজ্যে, যা ছিল তা-ও বন্ধ হচ্ছে। চাকরির নামে চুক্তির ভিত্তিতে কিছু নিয়োগ হচ্ছে।” বিমানবাবুর কথায়, “কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্তের স্বার্থে এই সরকার কিছুই করেনি। এ হচ্ছে তোলাবাজির সরকার। লুটেপুটে খাওয়ার সরকার।” তৃণমূলের জমানায় গ্রামীণ সংস্কৃতিও ধ্বংস হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ দিন মানকুণ্ডু সার্কাস ময়দানেও হুগলির সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহার সমর্থনে সভা করেছেন বিমানবাবু। সেখানে তিনি রাজ্যের বর্তমান সরকারের সমালোচনা করেন।
হাজার তিনেক লোক হয়েছিল গোঘাটের সভায়। সিপিএমের অভিযোগ, বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাদের কর্মী-সমর্থকদের সভায় আসতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। এমনকী, তাদের হুমকিতে কেউ সভার জন্য জায়গাও দেয়নি। তা ছাড়াও মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে গোঘাট রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে বাস থেকে নামিয়ে কয়েক জনকে মারধর করার অভিযোগও উঠেছে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।