গাছ কেটে সড়ক সম্প্রসারণ নিয়েও চিন্তা-ভাবনা

যশোহর রোডে দুর্ঘটনা কমাতে বসেছে রিফ্লেক্টর

যশোহর রোডের দু’পাশে প্রচুর গাছ। যার বেশির ভাগই বেশ প্রাচীন। ওই রাস্তায় দুর্ঘটনার বড় কারণও এই গাছ। আকছার ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সম্প্রতি পেট্রাপোল থেকে বনগাঁ মহকুমা জুড়ে রাস্তার দু’পাশে গাছের গায়ে রিফ্লেক্টর বসানোর কাজ শেষ করেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাদা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০১:৫১
Share:

রক্ষাকবচ এই রিফ্লেক্টরই। বনগাঁয় যশোহর রোডে তোলা নিজস্ব চিত্র।

যশোহর রোডের দু’পাশে প্রচুর গাছ। যার বেশির ভাগই বেশ প্রাচীন। ওই রাস্তায় দুর্ঘটনার বড় কারণও এই গাছ। আকছার ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সম্প্রতি পেট্রাপোল থেকে বনগাঁ মহকুমা জুড়ে রাস্তার দু’পাশে গাছের গায়ে রিফ্লেক্টর বসানোর কাজ শেষ করেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় রাস্তার বাঁ দিকের রিফ্লেক্টরগুলি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এ ভাবে দুর্ঘটনা কমবে বলে আশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

যশোহর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের বনগাঁ মহকুমার সহকারী বাস্তুকার জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন ‘‘প্লেটগুলি এমন ভাবে বসানো হয়েছে, যাতে যান চালকেরা বাঁ দিকের গাছ সম্পর্কে বুঝতে পারেন। হাবরা থেকে বনগাঁর দিকে আসার সময়ে হোক কিংবা বনগাঁ থেকে হাবরার দিকে যাওয়ার সময়ে, চালকেরা বাঁ দিকের গাছের অবস্থান বুঝতে পারবেন।” বারাসতের পর থেকে হাবরা পর্যন্ত এর আগেও পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু কিছু গাছে বসানো হয়েছিল রিফ্লেক্টর। এ বার পুরো রাস্তা জুড়েই এই ব্যবস্থা নেওয়া হল।

সংকীর্ণ যশোহর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধারে থাকা সারিসারি গাছগুলি যেন গাড়ি চালকদের কাছে মৃত্যুফাঁদ। রাতের অন্ধকারে গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়ই চালকেরা ওই সব গাছের উপস্থিতি বুঝতে না পেরে জোরে তাতে ধাক্কা মেরে ফেলেন। চালক-খালাসির মৃত্যু বা জখম হওয়াটা প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ সামনে চলে আসা গাছ থেকে বাঁচতে গিয়ে উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির সঙ্গে ধাক্কাও লাগছে। পণ্য-বোঝাই ট্রাকও সড়কের ধারে উল্টে পড়ছে। নতুন চালকের পক্ষে ওই গাছ আরও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাবধানে চালাতে গিয়ে গাড়ির গতিও কমে। জাতীয় সড়ক হওয়া সত্ত্বেও যশোহর রোডের দীর্ঘ অংশে কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই। শুধু বাজার এলাকায় আলো রয়েছে, তা-ও স্থানীয় ভাবে ব্যবস্থা করা।

Advertisement

এই সড়ক দিয়ে ভিন রাজ্য থেকে পণ্য নিয়ে ট্রাক চালকের পেট্রাপোল বন্দরে যান। বনগাঁ মহকুমার মানুষ কলকাতা বা জেলা সদর বারাসতে যেতে হলে ওই সড়ক পথেই যাতায়াত করেন। বাস-ট্যাক্সি-অটো-পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়াও ঢাকা-কলকাতা বাসও চলে এই রাস্তায়। তা ছাড়া, ব্যক্তিগত ব্যবহারের প্রচুর গাড়িও চলে।

সড়কের দু’ধার দখল করে দোকান-পাট তৈরি হওয়ায় ফুটপাথ বলে কিছু নেই। রাস্তার বাঁকে বাঁকে ওই সব গাছ রাস্তাটি আরও সংকীর্ণ করে দিয়েছে। জাতীয় সড়ক সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ মহকুমায় পেট্রাপোল থেকে গাইঘাটা পর্যন্ত প্রায় ১ হাজারটি রিফ্লেক্টর বসানো হয়েছে রাস্তার দু’ধারের গাছে। এক একটি প্লেট ৬ ইঞ্চি গোলাকার।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যশোহর রোডের দু’ধারে গাছগুলি রাস্তার ধার ঘেঁষে লাগানো। অন্ধকারে কালো গাছ চালকেরা বুঝতে পারেন না। রিফ্লেক্টর লাগানোর ফলে এই সমস্যা কাটানো যাবে। রঞ্জিত কুমার নামে পঞ্জাবের এক ট্রাক চালক বলেন, ‘‘প্রায়ই এই রাস্তা দিয়ে মালপত্র নিয়ে আসি। গাছের জন্য সাবধানে গাড়ি চালাতে হত। এখন কিছুটা জোরে চালাতে পারছি।’’ এক বাস চালক জানালেন, গাছগুলি এমন ভাবে রয়েছে, একটু অসর্তক হলেই বিপদ। শীতের রাতে কুয়াশা পড়লে বা বৃষ্টির সময়ে একটু দূরেও গাছ দেখা যায় না। রিফ্লেক্টর বসানোর ফলে দূর থেকেই গাছের অবস্থান বুঝতে পারছি। নির্ভয়ে গাড়ি চালাচ্ছি।’’

উপকৃত হয়েছেন পথচারীরাও। তবে যশোহর রোডের আশপাশের বাসিন্দারা একাংশের মতে, গাছ কেটে ফেলে রাস্তা চওড়া না করলে সমস্যা পুরোপুরি মিটবে না। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে জয়ন্তবাবু গাছ কাটার বিষয়টি তোলেন।

তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র সড়ক চওড়া করতে ফান্ড দিতে প্রস্তুত।’’ শীঘ্রই জেলাশাসক, ডিএফও এবং খাদ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে বৈঠক করবেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘যশোহর রোড যে সব এলাকার উপর দিয়ে গিয়েছে, সেখানকার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও পুরসভার চেয়ারম্যানদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। জানতে চাওয়া হবে, তাঁরা গাছ কাটার বিষয়ে কী ভাবে সাহায্য করতে পারবেন।’’ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘কেন্দ্র বরাদ্দ টাকা দিতে গরিমসি করছে। আমরা গাছ কেটে সড়ক সম্প্রসারণ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন