দর্শক টানতে পড়ুয়ারাই ভরসা। —ফাইল চিত্র।
১৯০ বছর পার হল প্রথম সিপাহি বিদ্রোহের। আর, মঙ্গল পান্ডের নেতৃত্বে সিপাহি বিদ্রোহ পার হল ১৫৭ বছর। দুয়েরই কেন্দ্রস্থল ব্যারাকপুর। কিন্তু সেই খাস ব্যারাকপুরেই আলো ও ধ্বনিতে বিদ্রোহের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে ফাঁপরে পড়েছে প্রশাসন। কারণ, দর্শক মিলছে না। এই অবস্থায় সর্বশিক্ষা মিশনের সহায়তা নিতে চলেছে পর্যটন দফতর।
ভারতে গ্রিক পর্যটকদের বিবরণ অনুসারে, খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকেও বারাকপুরে জনপদের কথা জানা যায়। বিপ্রদাস পিপলাইয়ের মনসামঙ্গল-এও আছে তার কথা। এলাকার বর্তমান নাম অবশ্য ১৭৭২-এ ব্রিটিশদের প্রথম ব্যারাক প্রতিষ্ঠার পরে। ১৮২৪-এ ফর্টিসেভেন্থ বেঙ্গল নেটিভ-এর বাহিনী ‘কালাপানি’ পেরোতে অস্বীকার করায় সিপাই বিন্দা তিওয়ারি-সহ ক’জনের প্রাণদণ্ড হয়। আর, ১৮৫৭-র সিপাহি বিদ্রোহের কথা তো বহু আলোচিত।
এ সবের উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় সহায়তায় তৈরি হয় ‘আলো ও ধ্বনি’ অনুষ্ঠান। কিন্তু তা চালু হওয়ার দু’মাস পরেও দর্শক মিলছে না। অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যের পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভীষ্ম দাশগুপ্তের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন পর্যটন-অধিকর্তা উমাপদ চট্টোপাধ্যায়। প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে প্রকল্পটি। শনি ও রবি, সপ্তাহান্তে দু’দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৪০ মিনিটের অনুষ্ঠান। অন্তত ৩০০ দর্শকের একসঙ্গে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। টিকিট ২০ টাকা করে, শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা।
কিন্তু সমস্যা হল, বেশির ভাগ শো-তে ৩০ জন দর্শকও মিলছে না। অথচ চুক্তিমতো প্রদর্শককে একটা নির্দিষ্ট অর্থ দিতেই হচ্ছে। ভাড়া করতে হচ্ছে প্রকৃতিবান্ধব জেনারেটরও। এ কথা জানিয়ে ভীষ্মবাবু বলেন, “দর্শক আসছে সামান্যই। টিকিট বিক্রি করে ৪০০ টাকাও উঠছে না। কলকাতা থেকে গঙ্গাবক্ষে ব্যারাকপুরে পর্যটক নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। চেষ্টা হবে, ওঁদের ‘আলো ও ধ্বনি’ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার। শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানে আনার জন্যও স্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা আবেদন জানিয়েছিলাম। সাড়া পাইনি।”
অবশ্য, ব্যারাকপুর গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছন্দা দাশগুপ্ত, ব্যারাকপুর মডেল এবি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল মুখোপাধ্যায় এবং ব্যারাকপুর রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন স্কুলের তরফে সুব্রত সেনগুপ্ত জানান, এমন অনুষ্ঠানের কথা তাঁরা জানেনই না। এ প্রসঙ্গে এমডি বলেন, “নিগমের ম্যানেজার কিছু স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ওঁরা বলেছিলেন, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের পরে যোগাযোগ করতে। যাই হোক, এ বার লিখিত ভাবে স্কুলগুলোকে জানাচ্ছি। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহের মাঝে পড়ুয়াদের নিয়ে আসতে আগ্রহী হলে আমরা বিশেষ অনুষ্ঠান করতেও রাজি।”
উমাপদবাবু বলেন, “ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে সর্বশিক্ষা মিশন সহায়তা করে। আমরা ওঁদের সাহায্য চাইব।” এই সঙ্গে অবশ্য তিনি দাবি করেন, এ রকম কোনও অনুষ্ঠানে আর্থিক লাভ হয় না। ভর্তুকি দিয়েই চালাতে হয়। আন্দামানে সেলুলার জেলের আলো ও ধ্বনি ছাড়া দেশের প্রায় সর্বত্র একই সমস্যা।