TMC 21st July Rally Kolkata

মঞ্চে মমতা, অভিষেক টি-শার্টে, নতুন নামে জগাই-মাধাই-গদাই, চশমা নেই, নেই ডিম্ভাতও, মেলা বসল ধর্মতলার কাছে বকুলতলায়

ধর্মতলায় তৃণমূলের মঞ্চের অদূরে বসেছিল ‘বকুলতলার মেলা’। সেখানে ভিড়ও জমালেন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা। এ বারের একুশে জুলাইয়ে ডিম-ভাতের বদলে দেখা গেল মাংস-ভাত। ডেকার্স লেনেও খিচুড়ির দোকানে লম্বা লাইন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ১৯:১৫
Share:

তৃণমূলের ২১ জুলাই সমাবেশে কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

গরমে অসুস্থ

Advertisement

তৃণমূলের শহিদ দিবসের কর্মসূচিতে সাধারণত প্রতি বছর বৃষ্টি হয়। গত বছর এবং তার আগের বছরেও হয়েছিল। কিন্তু সোমবার বৃষ্টি হয়নি। উল্টে গা-জ্বালানো রোদ্দুর! ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে এসে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়লেন নেতা-নেত্রীদের অনেকে। মঞ্চের সামনের দিকে বসেছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ কীর্তি আজাদ। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রও অসুস্থ হয়ে এসএসকেএমে ভর্তি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আসানসোলের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হাকে মঞ্চ থেকে ধরাধরি করে নামিয়ে নীচের অস্থায়ী ঘরে নিয়ে গিয়ে বসানো হয়েছিল। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মালদহের মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রও। একটু সুস্থ বোধ করায় বাড়ি ফিরে যান।

বৃষ্টি নেই, খিচুড়ি আছে

Advertisement

২১ জুলাইয়ের কর্মসূচির জেরে প্রবল ভিড় ‘অফিসপাড়ার ক্যান্টিন’ ডেকার্স লেনে। তবে সেখানে সব খাবার দোকানেই যে ভিড়, তা নয়। লম্বা লাইন মূলত খিচুড়ির দোকানে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করতে করতে খিচুড়ি, আলুর দম আর পাঁপড়ভাজা খেলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। ভিড় সামলাতে হিমশিম খিচুড়ির দোকানের কর্মীদের। একটি দোকানের কর্মী বলেই ফেললেন, ‘‘সাধারণত এক হাঁড়ি খিচুড়িই আমরা সারা দিন ধরে বিক্রি করি। আজ সাড়ে ১১টার পর দেখলাম, আরও এক হাঁড়ি না বানালে সামলাতে পারব না।’’

ডেকার্স লেনে খিচুড়ি খাচ্ছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

রাম-বাম-শ্যাম

জগাই-মাধাই-গদাই। সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেসকে বরাবর এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করেই বিঁধে এসেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ২১ জুলাইয়ের ভাষণে সেই নাম বদলালেন তিনিই। নিয়ে এলেন নতুন নাম ‘রাম-বাম-শ্যাম’। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, মমতা ‘রাম’ বলতে বিজেপির কথাই বলেছেন। ‘বাম’ তো বামই। সিপিএম। ‘শ্যাম’ বলতে বুঝিয়েছেন কংগ্রেসকে। কেন কংগ্রেস ‘শ্যাম’, তা অবশ্য বোঝা গেল না। ব্যাখ্যাও করলেন না মমতা। তবে রসিকজনেরা বলছেন, সম্ভবত অন্ত্যমিল।

ডিম্ভাতের দিনবদল

এতকাল তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচির অন্যতম পরিচিতি ছিল ডিম্ভাত। এ বার তা বদলেছে। মধ্য কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় জড়ো হয়ে পাত পেড়ে মাংস-ভাত (মূলত চিকেনকষা) খেলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ইডেন গার্ডেন্সের সামনের চত্বর, মৌলালি থেকে শিয়ালদহ যাওয়ার রাস্তা এবং সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে কলেজ স্ট্রিট যাওয়ার দিকে— সর্বত্রই সেই দৃশ্য।

পাত পেড়ে বসে মাংস-ভাত (মূলত চিকেনকষা) খাচ্ছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

মঞ্চে মমতা, টি-শার্টে অভিষেক

২১ জুলাইয়ে মঞ্চের পটভূমিকায় শুধু মমতার ছবি। মঞ্চে কোথাও ছিল না অভিষেক বা অন্য কারও ছবি। তবে প্রথম থেকেই তেমন পরিকল্পনা ছিল। শহিদ সমাবেশের প্রস্তুতিপর্বে অভিষেক নিজেই দলকে জানিয়েছিলেন, ধর্মতলার মঞ্চে শুধু দলের সর্বময় নেত্রী মমতার ছবিই থাকবে। বাস্তবে তা-ই হয়েছে। তবে দলের যুব সংগঠনের বহু সদস্যকে দেখা গেল সাদা টি-শার্ট পরিহিত। বুকে অভিষেকের ছবি।

তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। —নিজস্ব ছবি।

চশমে বদ্দুর

সাধারণত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চশমা ছাড়া দেখা যায় না। অন্তত প্রকাশ্যে। চোখের সমস্যার কারণে রোদচশমাও পরতে হয় তাঁকে। সড়ক দুর্ঘটনায় চোখে আঘাত লাগার পর থেকে একাধিক বার অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর চোখে। সম্প্রতি বিদেশে চোখের পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলেন। কয়েক দিন আগেই ফিরেছেন। ধর্মতলার সমাবেশে চশমা ছাড়াই এলেন অভিষেক। পুরো সময়টাই চশমাহীন রইলেন তিনি। পরে জানা গেল, চশমার বদলে কনট্যাক্ট লেন্স পরেছিলেন তিনি।

তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

বকুলতলায় মেলা

ধর্মতলায় তৃণমূলের বিরাট মঞ্চের এক-দেড় কিলোমিটার দূরে সোমবার বসেছিল ‘বকুলতলার মেলা’। প্রতীকী অবশ্য। কী ছিল না সেই মেলায়! জামাকাপড়, চুড়ি, কানের দুল থেকে শুরু করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত ‘বর্ণপরিচয়’— সবই বিক্রি হতে দেখা গেল ইডেন গার্ডেন্সের সামনের মেলায়। দূরদূরান্ত থেকে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শুনতে আসা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা সেই মেলায় গেলেন। ঘুরেঘুরে নানা জিনিস কিনলেন। কেউ ৭৫ টাকায় ছেলের জন্য গেঞ্জি কিনেছেন তো কেউ চুড়ি-কানের দুল। যাঁরা মেলায় দোকান দিয়েছেন, তাঁদের কারও কারও ধর্মতলাতেও দোকান রয়েছে। কেউ মেটিয়াবুরুজের হাটে বসেন। সকলেই বলছেন, ‘‘এত লোক এসেছে। বিক্রিবাটা ভাল হবে এই আশায় এসেছি।’’ বিক্রি মন্দ হয়নি।

ইডেন গার্ডেন্সের সামনে বসা মেলায় কেনাকাটা করছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক মহিলারা। —নিজস্ব চিত্র।

তৈবুরের পাঞ্জাবি

প্রতিবারই ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে হাজির থাকেন তিনি। এবং প্রতিবারই তাঁর পরনে থাকে নজরকাড়া পাঞ্জাবি। যে পাঞ্জাবির জন্য একটা গোটা বছর ধরে তিনি টাকা জমান। হুগলির খানাকুলের বাসিন্দা তৈবুর মণ্ডলকে সোমবারও দেখা গেল ধর্মতলার সমাবেশে। এ বার তাঁর পরনে তৃণমূলের জোড়াফুল প্রতীক আঁকা পাঞ্জাবি। তাতে বুকের কাছে লাগানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংবলিত তৃণমূলের ব্যাজ। বলে দিলেন, ‘‘বাড়ি ফিরে আবার টাকা জমাতে শুরু করব। পরের বছরের মে মাস পর্যন্ত টাকা জমাব। তার পরে জুন মাসে পাঞ্জাবি বানাতে দেব। সেই পাঞ্জাবি পরে আবার পরের বছরের ২১ জুলাইয়ের সমাবশে আসব।’’

হুগলির খানাকুলের বাসিন্দা তৈবুর মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement