দক্ষ: জৈব সার ব্যবহার করে চারা তৈরি চলছে। নিজস্ব চিত্র
গোটা দেশের একশো চুয়াল্লিশটি বাছাই পঞ্চায়েতকে পিছনে ফেলে সেরার খেতাব জিতে নিল পাথরপ্রতিমার দিগম্বরপুর পঞ্চায়েত।
প্রতিযোগিতা কিসের?
গ্রামের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ছিল প্রতিযোগিতা। পরিচালনায়, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতর। যারা দৌড়ে নেমেছিল, কেউ খুব এলেবেলে নয়। সকলেই দেশের ‘মডেল’। তবু সেই তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকার এই গ্রাম পঞ্চায়েত।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রকল্প তৈরি, রূপায়ণ এবং চতুর্দশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচ-সহ কয়েকটি বিষয় ছিল প্রতিযোগিতার মূল মাপকাঠি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভোটের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি বলা সম্ভব নয়। তবে দিগম্বরপুর দেশের মধ্যে ১ নম্বর হয়েছে, এ কথা ঠিক। প্রতিটি রাজ্য থেকে পাঁচটি করে মডেল পঞ্চায়েতের নাম পাঠানো হয়েছিল।’’ চলতি সপ্তাহেই কেন্দ্রের চিঠি এসেছে বলে জানা গিয়েছে। দিগম্বরপুর ছাড়াও হাওড়ার চামড়াইল, পশ্চিম মেদিনীপুরের তররুই, সাঁকোয়া এবং জলপাইগুড়ির মাটিয়ালি পঞ্চায়েতের নাম পাঠানো হয়েছিল দিল্লিতে।
কী ভাবে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছল দিগম্বরপুর?
জানা গিয়েছে, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পঞ্চায়েতে কাজের ধারা গত কয়েক বছরে বদলানো হয়েছে। সমস্ত হিসেব-নিকেশ আপলোড হচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে। আইএসজিপি প্রকল্পে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধিত্বে উন্নয়নের পরিকল্পনা একেবারে গ্রামস্তরে গ্রহণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে শিশুবিকাশ এবং মহিলাদের প্রথম সারিতে রাখার মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ে পঞ্চায়েতকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে দিগম্বরপুর। এলাকায় জৈব চাষ, কঠিন ও তরল বর্জ্য থেকে সার তৈরি, বাল্য বিবাহ রোধে দীর্ঘ দিন থেকে মহিলা সমবায় সমিতিগুলি কাজ করছে।
কিন্তু এই কাজগুলি কমবেশি অন্যত্রও দেখা যায়। তা হলে কোথায় এগিয়ে গেল দিগম্বরপুর?
প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পঞ্চায়েত আইনে বলা কয়েকটি পন্থা অনুসরণ করেই এই সাফল্য এসেছে ঝুলিতে। অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা যেমন বরাবর বলেন, সিলেবাসের মূল বইগুলো খুঁটিয়ে পড়লেই অনেক উপকার হয়। পঞ্চায়েতের কাজও সেই মতোই সিলেবাস মেনে এগিয়েছে।
দিগম্বরপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান রবীন্দ্রনাথ বেরা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারি আইনে ঠিক যা যা বলা হয়েছে, মূলত সেগুলই অনুসরণ করা হয়েছে। যেমন, একেবারে নিচুতলা থেকে শুরু করে গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যন্ত প্রতিনিধিত্ব, আলোচনামূলক উন্নয়নের প্রকল্প হাতে নেওয়ার মতো কাজ। দিগম্বরপুর ঠিক এ সবই করেছে।’’ শুধু প্রকল্প হাতে নেওয়াই নয়, তার বাস্তবায়নে টাকা সঠিক ভাবে খরচ হয়েছে কিনা, তা-ও দেখা হয়েছে প্রতিযোগিতায়। সে দিক থেকেও এগিয়ে থেকেছে দিগম্বরপুর। এই সাফল্যের জন্য তারা কেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কারও পাবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
তবে পরীক্ষার ফলাফল যা-ই হোক না কেন, বিরোধীরা কিন্তু খুশি নয়।
পাথরপ্রতিমার বিজেপি নেতা শ্রীধরচন্দ্র বগোরি বলেন, ‘‘এই তকমা কেন্দ্রীয় সরকার দিক আর যে-ই দিক, প্রকৃত উন্নয়ন এখানে হয়নি। সবই কাগজে-কলমে দেখানো। এ ভাবে পঞ্চায়েতের বিচারের প্রক্রিয়াটিকেও আমরা সমর্থন করি না।’’