দিলীপ ঘোষ।
ত্রিপুরায় মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদ চলতে চলতেই এ বার ভাঙার রাজনীতির সরাসরি অভিঘাত চলে এল বাংলায়!
দক্ষিণ কলকাতায় কেওড়াতলা শ্মশানে বুধবার ‘ভারত কেশরী’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি ভাঙার চেষ্টা করার পাশাপাশি কালি লাগিয়েছে নকশালপন্থী একটি সংগঠনের সমর্থক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান কিছু পড়ুয়া। ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে লেনিনের মূর্তি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতেই এমন কাণ্ড বলে তাদের দাবি। ত্রিপুরার বিলোনিয়ার ঘটনার পরে যে বিজেপি বিড়ম্বনায় পড়েছিল, কলকাতার ঘটনার পরে তারাই এখন পাল্টা আক্রমণাত্মক হওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘লেনিনের বাচ্চা’দের ‘কুকুরের মতো তাড়া’ করে মারার হুমকি দিয়েছেন! আর বিজেপি-আরএসএসকে প্ররোচনা জোগানোর দায়ে অতি-বাম ওই বিক্ষোভকারীদের কড়া সমালোচনা করেছে বামেরা।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই ঘটনাতেও সিপিএম আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খোলার আগেই নকশালদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূর্তিতে কালি লাগানোয় অভিযুক্ত পাঁচ বিক্ষোভকারীকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশিই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘যারা এ কাজ করেছে, তারা ভারতীয় সংস্কৃতির উপরে আঘাত হেনেছে। আমরা কোনও রকম মূর্তি ভাঙারই বিরুদ্ধে। শ্যামাপ্রসাদকে কালি লাগিয়ে কী বীরত্ব দেখাচ্ছেন?’’
সিপিএম নেতারা অবশ্য তৃণমূলকেও পুরনো ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়েছেন সিপিএম নেতারা। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম যেমন এ দিন বলেছেন, ‘‘রাজ্যে পরিবর্তনের পরে গড়বেতা, যাদবপুর বা খেজুরিতে কারা লেনিন মূর্তি ভেঙেছিল? রাজ্যে বামপন্থীদের যে অজস্র পার্টি অফিস তৃণমূল ভেঙেছে বা দখল করেছে, সেখানে মার্ক্স-লেনিন থেকে জ্যোতি বসু, কার ছবি বা মূর্তি নষ্ট করা হয়নি?’’
আরও পড়ুন: মূর্তি ভাঙচুর দক্ষিণেও, ছাড় বিজেপি নেতাকে
তবে বিক্ষোভকারীদের এক হাত নিয়েছেন সিপিএম এবং সিপিআই নেতৃত্ব। সিপিএমের শ্যামল চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সারা দেশ যখন লেনিন মূর্তি ভাঙার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব, সেই সময়ে মার্ক্সবাদীদেরও একাসনে বসিয়ে প্রচারকে ভোঁতা এবং শত্রুকে সুবিধা করে দেওয়া এঁদের কাজ!’’
এই বিতর্কে অবশ্য অন্য মাত্রা এনে ফেলেছেন বিজেপি-র দিলীপবাবু তাঁর ভাষার দৌলতে! তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘লেনিনের বাচ্চারা যদি মনে করে থাকে শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভেঙে তাঁকে এবং বিজেপিকে অপমান করবে, তা হলে ভুল করবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই দেশদ্রোহীদের আঁতুড়ঘর। যারা ওই মূর্তি ভেঙেছে, তাদের আমরা চেনে রেখেছি। তারা পালাতে পারবে না, পালিয়ে বাংলার বাইরে গেলেও দেশের বেশির ভাগ রাজ্যে আমরাই ক্ষমতায় আছি। কুকুরের মতো তাড়া করে মারব!’’ তিনি জানিয়েছেন, শ্যামপ্রসাদের এই মূর্তিকে ‘শুদ্ধ’ করতে আড, বৃহস্পতিবার দুধ দিয়ে স্নান করানো হবে। ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনে’র অধিকর্তা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ও ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন।