West Bengal News

দিলীপের মমতা-স্তুতিতে স্তম্ভিত গোটা দল, তোলপাড় শুরু বিজেপিতে

বসিরহাট দক্ষিণের প্রাক্তন বিধায়ক তথা দলের অন্যতম মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। রবিবার তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কোনও মতামত দেব না।’’ তবে দলের অন্দরে তিনি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনিও দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে বেজায় অসন্তুষ্ট বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। আরও পড়ুন: এক জন বাঙালির প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত, মমতাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন দিলীপ ঘোষ সবচেয়ে স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘‘জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে দিলীপ ঘোষ যা বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। এর সঙ্গে বিজেপির অবস্থান, মতাদর্শ বা বাস্তবতার কোনও মিল নেই।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১৩:১৫
Share:

দিলীপ ঘোষের মন্তব্য ঘিরে বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে ব্যাপক তোলপাড়। —ফাইল চিত্র

সবাইকে চমকে গিয়ে শনিবার মমতা-স্তুতিতে পঞ্চমুখ হয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পরবর্তী ১২ ঘণ্টায় তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপির অন্দর মহলে। রাজ্য বিজেপির অধিকাংশ সিনিয়র নেতাই দলের অন্দরে দিলীপের তীব্র সমালোচনায় সরব হয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। অধিকাংশই প্রকাশ্যে মন্তব্য করছেন না। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র খুব স্পষ্ট মত, দিলীপের এই মতামতের সঙ্গে ‘বাস্তবতা’র কোনও সম্পর্ক নেই। লোকসভা নির্বাচনের এত কাছাকাছি এসে দিলীপের এই মমতা-স্তুতি দলের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক হয়েছে বলে রাজ্য বিজেপির একাধিক সিনিয়র নেতা মনে করছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, দিলীপের বিরুদ্ধে নালিশ পৌঁছে গিয়েছে খোদ অমিত শাহের কাছে।

Advertisement

দিলীপ ঘোষ শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়ার পর থেকেই রাজ্য বিজেপির সিনিয়র নেতারা ঘনিষ্ঠ মহলে বিষ্ময় প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন। তাঁদের অধিকাংশই অবশ্য প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাইছিলেন না। কিন্তু রাজ্য বিজেপি সভাপতির এই মন্তব্যে যে দলের অন্দরে সমালোচনার তুফান বইছে, বিজেপি সূত্রেই সে খবর পাওয়া যাচ্ছে। মুকুল রায় এ প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমাদের ক্যাপ্টেনের মন্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।’’ তবে তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনও ক্ষমতাই মমতার নেই।’’ অর্থাৎ দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মন্তব্য এড়িয়ে গেলেও মুকুল কিন্তু স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর অবস্থান দিলীপের মতামতের ঠিক উল্টো মেরুতে।

বসিরহাট দক্ষিণের প্রাক্তন বিধায়ক তথা দলের অন্যতম মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। রবিবার তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কোনও মতামত দেব না।’’ তবে দলের অন্দরে তিনি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনিও দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে বেজায় অসন্তুষ্ট বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: জোট ঘোষণার মুখেই সিবিআইয়ের খাঁড়া নামল অখিলেশের উপর

সবচেয়ে স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘‘জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে দিলীপ ঘোষ যা বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। এর সঙ্গে বিজেপির অবস্থান, মতাদর্শ বা বাস্তবতার কোনও মিল নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা সবাই ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করতেই পারি। কিন্তু তাতে যেন দলের অপূরণীয় ক্ষতি না হয়, সেটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।’’ দিলীপ ঘোষ যাঁর মধ্যে ‘প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনা’ দেখেছেন, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বাবুলের কটাক্ষ, ‘‘ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা আমিও জানাচ্ছি। আমি চাই তিনি সুস্থ-সবল ভাবে দীর্ঘদিন বাঁচুন। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘায়ু কামনা করছি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন যত সংক্ষিপ্ত হবে, বাংলার, বাঙালির এবং দেশের ততই মঙ্গল হবে।’’

আরও পড়ুন: প্ল্যাটফর্মে রক্তদান! পারলে থামাক, বললেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত

দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের জেরে ঝড় শুধু রাজ্য বিজেপির অন্দরে সীমাবদ্ধ নেই। বিতর্ক পৌঁছে গিয়েছে সর্বভারতীয় নেতৃত্বের দরবারেও। বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় তো বটেই, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের কাছেও নালিশ পৌঁছেছে বলে খবর। লোকসভা ভোটের কাছাকাছি এসে যখন বিজেপি-তৃণমূল সংঘাত চরমে, নরেন্দ্র মোদীকে দেশের সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরে যখন প্রচারে ঝাঁপাতে মরিয়া বিজেপি, ঠিক সেই সময় দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য দলকে চরম বিড়ম্বনায় ফেলেছে বলেই মনে করছেন বিজেপির একাধিক নেতা। দিলীপের এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়ার দাবিও উঠে গিয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় এই মন্তব্যের এই খবর দিল্লিতে পৌঁছনোর পর জাতীয় নেতৃত্বের তরফ থেকে দিলীপ ঘোষের কাছে ফোন এসেছিল। রাজ্য বিজেপির একটি অংশের দাবি, সেই ফোনালাপ দিলীপবাবুর জন্য মোটেই সুখকর ছিল না। তবে দিলীপ ঘনিষ্ঠরা কেউই এমন কোনও ফোনালাপের কথা মানেননি। আগামী ১০ এবং ১১ জানুয়ারি দিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কার্যকারিণীর বর্ধিত সভায় যোগ দিতে ৯ তারিখই রাজধানী পৌঁছবেন দিলীপ ঘোষ। সেই সময়ই এই ‘বেফাঁস’ মন্তব্যের জন্য তাঁকে জাতীয় নেতৃত্বের সামনে এক গুচ্ছ প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে।

রাজ্য বিজেপির এক সিনিয়র নেতার দাবি, দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য কোনও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি এমন অবস্থান নিচ্ছেন, যাতে তৃণমূলের সুবিধা হচ্ছে। ওই নেতার বক্তব্য, কখনও দলের অন্দরে, কখনও বিধানসভায়, কখনও প্রকাশ্যে এমন কিছু পদক্ষেপ বা মন্তব্য করছেন দিলীপ ঘোষ, যা আসলে তৃণমূলেরই সুবিধা করে দিচ্ছে। এর চেয়ে বিশদে তিনি কিছু বলতে চাননি। তবে তাঁর এই মন্তব্য বিশেষ অর্থবহ বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।

রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু অবশ্য বিষয়টিকে লঘু করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ যা বলেছেন, তা নিখাদ সৌজন্য থেকেই বলেছেন। ওই কথার কোনও বিশেষ তাৎপর্য খুঁজে বার করার প্রয়োজন নেই। আমাদের লড়াই থেমে যাচ্ছে না। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক লড়াই যে ভাবে চলছিল, সে ভাবেই চলবে।’’

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন