নিয়ম শিকেয়: দমদমের প্ল্যাটফর্মে তৃণমূল সমর্থিত হকার্স ইউনিয়নের রক্তদান শিবিরের মঞ্চ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
দু’টি প্ল্যাটফর্ম জুড়ে ঢাউস মঞ্চ। রক্তদান শিবির, স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন দমদম জংশনের চার ও পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্ত থেকে ভূগর্ভস্থ পথের মুখ পর্যন্ত কার্যত দখল করে রেখেছে। এমন অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি রেল। তবু তৃণমূল সমর্থিত হকার্স ইউনিয়নের কর্মসূচি আটকাল না! শনিবারের বারবেলায় উত্তুরে হাওয়ায় পতপত করে ওড়া তৃণমূলের পতাকা লাগানো মঞ্চের নীচে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো বক্তৃতা দিলেন দলীয় নেতারা।
প্রতি বছরই চার ও পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপরে তৃণমূল সমর্থিত হকার্স ইউনিয়ন এই শিবির করে। নিত্যযাত্রীদের একাংশের দাবি, গত বছর প্যান্ডেলের একাংশ চার নম্বর রেললাইনের উপরে হেলে পড়েছিল। যার জেরে ব্যাহত হয় রেল পরিষেবা। কয়েক জন যাত্রী জখমও হয়েছিলেন। এ ছাড়া দু’টি প্ল্যাটফর্মের মাঝের অংশ মঞ্চের জন্য পুরোপুরি বন্ধ থাকায় যাত্রীদের নামা-ওঠা করতে সমস্যা হয়। দমদমের মতো ব্যস্ত স্টেশনে তা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে বলে মত যাত্রীদের একাংশের।
সম্প্রতি অমৃতসরে দশেরার সময় যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা স্মরণ করিয়ে রেলের তরফে উদ্যোক্তাদের বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই প্রতিবারের মতো বক্স সহযোগে মঞ্চ বাঁধা হয়। শুধু ছাউনি করা হয়নি, এই যা! মঞ্চে উপস্থিত তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, শান্তনু সেন-সহ তৃণমূল কাউন্সিলরদের বক্তৃতা শোনার জন্য কর্মীদের বসার জায়গাও করা হয়। সভাস্থলের পরে আলাদা করে স্টেশন চত্বর জুড়ে রক্তদান শিবির ও স্বাস্থ্য শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: সাগরমেলায় সরকারি প্রকল্প নিয়ে প্রচারে ঝাঁপ তৃণমূলের
পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের এক কর্তার বক্তব্য, প্ল্যাটফর্মে সামাজিক অনুষ্ঠান করার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে অনুমতি নিতে হয়। তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কোনও আবেদন জমা পড়েনি। হকার্স ইউনিয়নের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট তথা তৃণমূল নেতা প্রবীর পাল বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু রেল নিজের অবস্থানে অনড় ছিল।’’
আরও পড়ুন: বঙ্গে শয্যা-পিছু রোগী ১১৭০, বলছে রিপোর্ট
অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও অনুষ্ঠান চলল কী ভাবে? আরপিএফের এক আধিকারিক জানান, সাংসদ, কাউন্সিলরেরা উপস্থিত হওয়ায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়েছিল। দুপুরের দিকে অনুষ্ঠান বন্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে।
সৌগতবাবু তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘হকারেরা যে মণ্ডপ করে পুজো করছে না, তা ডিআরএম-কে বলি। প্ল্যাটফর্মের এক প্রান্তে সতর্কতা বজায় রেখে অনুষ্ঠান হবে তা-ও জানাই। তবু উনি অনুমতি দেননি। আমরা বললাম, কর্মসূচি হবে। রেল পারলে কর্মসূচি বন্ধ করুক!’’ পরে ওই মন্তব্যের ব্যাখ্যায় সৌগতবাবু বলেন, ‘‘আমি মঞ্চে বলার সময় ওই কথা বলেছি। ডিআরএমের সঙ্গে কোনও কথা কাটাকাটি হয়নি। আমাদের কিছু রাজনৈতিক, সামাজিক বাধ্যবাধকতা থাকে।’’ কিন্তু প্ল্যাটফর্ম তো রক্তদান শিবিরের জায়গা হতে পারে না! তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘গত ৯ বছর ধরে রক্তদান শিবির হচ্ছে। কোনও বার তো সমস্যা হয় না। এ বারই কেন বাধাদানের খেয়াল হল! প্ল্যাটফর্ম উঁচু, স্টেশনের শৌচাগারের নোংরা জল আন্ডারপাসে জমা হচ্ছে। দমদম স্টেশনে রেল কোনও দায়িত্ব পালন করছে না। যত আপত্তি শুধু সামাজিক কর্মসূচিতে।’’ অনুমতি না-দেওয়ার পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তুলে শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের কর্মসূচি হওয়ায় সামাজিক কাজে রাজনৈতিক আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy