খড়্গপুর আইআইটি-তে একের পর এক পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কথা বললেন ডিরেক্টর সুমন চক্রবর্তী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
খড়্গপুর আইআইটিতে পড়ুয়াদের মধ্যে ‘সঙ্কট’ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই ‘সঙ্কট’ আইআইটি তৈরি করেনি। একের পর এক পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এ কথাই বললেন আইআইটি খড়্গপুরের ডিরেক্টর সুমন চক্রবর্তী। তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আত্মহত্যা পড়়ুয়াদের কাছে যেন একটা গ্ল্যামারাস স্টোরি (চটকদার কাহিনি)-তে পরিণত হয়েছে।’’
দিন পাঁচেক আগেই হর্ষকুমার পাণ্ডে নামে এক গবেষক পড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ মিলেছে খড়্গপুর আইআইটির হস্টেল থেকে। এই নিয়ে চলতি বছরে ছ’জন পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের হাল নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার খড়্গপুর আইআইটির ডিরেক্টর সুমন বলেন, ‘‘খড়্গপুর আইআইটিতে অন্তত ১৬ হাজার পড়ুয়া রয়েছে। ওদের মধ্যে যে সঙ্কট দেখা গিয়েছে, তা আইআইটি তৈরি করেনি। তৈরি করেছে আমাদের এই সময়ের শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থা। জেইই পাশ করে আইআইটিতে ভর্তি হওয়ার সময়েই একজন পড়ুয়ার মধ্যে কোটি টাকার চাকরির মানসিকতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। সে ভাবছে, কোটি টাকার চাকরি না-পেলে বোধহয় জীবন বৃথা। কিন্তু এই মানসিকতার বদল ঘটাতে তো আমরা সকলের জন্য কাউন্সিলরের ব্যবস্থা করতে পারি না। তাই আমাদের বুঝতে হবে, এটা একটা সামাজিক ব্যাধি।’’
ডিরেক্টর জানান, এই সামাজিক ব্যাধি দূর করার যথাসম্ভব চেষ্টা করছে আইআইটি। কিন্তু এটা কর্তৃপক্ষের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। অভিভাবকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ডিরেক্টরের মত, ‘‘আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে, এই আত্মহত্যার বিষয়টা এখন বিপণনে পরিণত হয়েছে। পড়ুয়াদের কাছে এটা এখন একটা যেন গ্ল্যামারাস স্টোরি। সম্প্রতি আমার কাছে একটি হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজ এসেছিল। সেখানে একজন পড়ুয়া লিখছে, আমি ভেবেছিলাম আজ আত্মহত্যা করব। কিন্তু দেখলাম ও (অন্য কেউ) করে নিয়েছে! ফলে আত্মহত্যা এখন যেন বিপণনে পরিণত হয়েছে।’’
খড়্গপুর আইআইটিতে পর পর পড়ুয়ামৃত্যু নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্টও। বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, নিশ্চয়ই কিছু একটা গলদ রয়েছে শিক্ষাব্যবস্থায়। বিচারপতিরা প্রশ্নও তুলেছিলেন, “আইআইটি খড়্গপুরে সমস্যা কোথায়? কেন পড়ুয়ারা আত্মহত্যা করছেন? আপনারা কি এটি ভেবে দেখেছেন?”
এই পরিস্থিতিতে আইআইটি কর্তৃপক্ষও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পড়ুয়াদের মন ভাল রাখতে সম্প্রতি ‘সেতু’ অ্যাপ থেকে ‘ক্যাম্পাস মাদার’— এমন নানা ব্যবস্থা চালু করেছেন প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর। পড়ুয়ারা যাতে পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারেন, ইতিমধ্যেই তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি, কর্তৃপক্ষের তরফেও পড়ুয়াদের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার কথা ভাবা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সূত্রের বক্তব্য, অনেক সময় নানা রকম পারিবারিক চাপ পড়ুয়াদের মাথায় ঘোরে। এতে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিও হয়। পড়ুয়াদের উপর অন্য কোনও বিষয় যাতে চাপিয়ে না-দেওয়া হয়, তা নিয়ে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে সময় সময়ে কথা বলারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি, পড়ুয়াদের জন্য পূর্ণ সময়ের মনোবিদ নিয়োগ করার কথাও ঘোষণা করেছিলেন ডিরেক্টর সুমন।
নিয়মিত পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনাও নিয়ে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পড়ুয়াদের থাকার হলগুলিতে সিলিং ফ্যানের পরিবর্তে এ বার স্প্রিং ফ্যান লাগানো হবে। আইআইটি খড়্গপুরে ২১টি হলে প্রায় ১৬ হাজার পড়ুয়া থাকেন। প্রতিটি হলে একাধিক ঘর। সিঙ্গল, ডবল এবং ট্রিপল বেড রয়েছে ঘরগুলিতে।