নির্লিপ্ত রেল, সহযাত্রী ডাক্তারই ত্রাতা

না আরপিএফ, না রেলের কোনও কর্মী। চিকিৎসকই দু’জনের ব্যাগ বয়ে, টোটো ভাড়া করে চললেন হাসপাতালে। 

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৭
Share:

রামপুরহাট হাসপাতালে সুদীপ ভাদুড়িকে দেখছেন চিকিৎসক মলয় দাস। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

রবিবার রাত পৌনে ৩টে। সুনসান রামপুরহাট স্টেশনে নামলেন দু’জন। এক জন অসুস্থ। অন্য জন চিকিৎসক। স্টেশনে কোথাও কেউ নেই। না আরপিএফ, না রেলের কোনও কর্মী। চিকিৎসকই দু’জনের ব্যাগ বয়ে, টোটো ভাড়া করে চললেন হাসপাতালে।

Advertisement

এ-হেন মানবিকতার নজির গড়লেন যিনি, সেই মলয় দাস সদ্য যোগ দিয়েছেন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রবিবার রাতে কলকাতা থেকে পদাতিক এক্সপ্রেসে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এসি টু টিয়ার কামরায় শুয়ে পড়ার কিছু ক্ষণ পরেই হাজির হন টিকিট পরীক্ষক। জানান, ওই কামরাতেই এক জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, বুকে ব্যথা হচ্ছে।

মলয়বাবু গিয়ে দেখেন, আলিপুরদুয়ার শহরের অরবিন্দনগরের বাসিন্দা সুদীপ ভাদুড়ি নামে মাঝবয়সি ওই ব্যক্তি বুকের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তাঁকে ব্যথা কমার ওষুধ দেন মলয়বাবু। ঘণ্টাখানেক পরে টিকিট পরীক্ষক আবার এসে জানান, রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ট্রেন তখন বোলপুর ঢুকছে। মলয়বাবুর কথায়, ‘‘ট্রেনে কী করে বুকে ব্যথার চিকিৎসা সম্ভব! ওঁকে বোলপুরে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলি। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ৩৫ বছর পার, ফিরলেন ঘাসিরাম

তাই নিজের কর্মস্থল রামপুরহাটেই সুদীপবাবুকে ট্রেন থেকে নামিয়ে নেন মলয়বাবু। এসি টু কামরা ট্রেনের পিছনের দিকে। একাই রোগী নিয়ে পুরো প্ল্যাটফর্ম পেরিয়ে কোনও মতে হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসা শুরু করেন। যোগাযোগ করেন রোগীর পরিবারের সঙ্গে। তাঁদের আশ্বস্ত করেন, সুদীপবাবুকে সুস্থ করে তবেই বাড়ি পাঠাবেন। অপরিচিত চিকিৎসকের ভূমিকায় আপ্লুত পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সুদীপবাবুও। বললেন, ‘‘দেবদূতের মতো পাশে থাকলেন ডাক্তারবাবু।’’

কিন্তু ট্রেনে যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়া সত্ত্বেও রামপুরহাট স্টেশনে রেলের কেউ ছিলেন না কেন? অথচ আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের সাহায্য করার কথা তো খোদ রেলমন্ত্রীই বারবার বলেছেন। রেল সূত্রে খবর, এমন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্টেশন ম্যানেজারকে ট্রেন থেকেই মেমো পাঠানোর নিয়ম। তিনি কোনও মেমো পাননি বলে দাবি রামপুরহাটের স্টেশন ম্যানেজার পুষ্কর কুমারের। সংশ্লিষ্ট টিকিট পরীক্ষক প্রদীপ পালও স্বীকার করেছেন যে, তিনি মেমো পাঠাননি।

আরও পড়ুন: মিছিলে পা চালিয়েই ব্রিগেডের পথে বাম

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্টেশনের ব্যবস্থাপনা কেন ঠিক হল না, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’

দিন কয়েক আগেই রাতের ট্রেনে বেঙ্গালুরু থেকে বল্লারী যাচ্ছিলেন এক তরুণী। ট্রেনে উঠে তিনি ঋতুকালীন সমস্যার মুখে পড়েন। তাঁর এক বন্ধুকে ফোনে জানালে তিনি রেলমন্ত্রীকে টুইট করেন। তার পরেই প্রয়োজনীয় সাহায্য নিয়ে পৌঁছন রেলের আধিকারিকেরা।

রবিবার রাতে রামপুরহাট স্টেশনে মলয়বাবুকে কেউ সাহায্য না করলেও গেটে থাকা টিকিট পরীক্ষক কিন্তু তাঁর কাছে টিকিট চেয়েছেন। সঙ্গী রোগী শুনে কথা বাড়াননি। শুধু শুধিয়েছেন, ‘‘ওঁর টিকিট আছে তো?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন