Health

স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পরিকাঠামো নেই কেন, প্রশ্ন ডাক্তারদের

স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব ছাড়া এ দিনের বাজেটে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আর কোনও কিছুই ঘোষণা হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

অন্তবর্তীকালীন বাজেট পেশ করার সময়ে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই জোর দিলেন পরিকাঠামো উন্নয়নে। রাজ্য জুড়ে একগুচ্ছ উড়ালপুল, রাস্তা তৈরির প্রস্তাবও দেওয়া হল। কিন্তু শুক্রবার বাজেট ঘোষণার পরে প্রশ্ন উঠেছে, পরিকাঠামোই যদি আসল হবে, তা হলে রাজ্যের স্বাস্থ্যের পরিকাঠামো কেন প্রাধান্য পেল না।

Advertisement

স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব ছাড়া এ দিনের বাজেটে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আর কোনও কিছুই ঘোষণা হয়নি। তাতেই বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের প্রশ্ন, যদি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সমস্ত পরিকাঠামো ঠিক থাকে, তা হলে গ্রাম বা জেলা থেকে প্রতি মুহূর্তে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে শহরে ছুটে আসতে হয় কেন? সংগঠনগুলির কর্তারা আরও বলছেন, ‘‘শুধু হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেই তো চলবে না। পরিকাঠামো না থাকলে ওই কার্ড মূল্যহীন।’’ কারণ সাম্প্রতিক কালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও, চিকিৎসা না পাওয়ার মতো অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে।

মুখ্যমন্ত্রী বাজেট ঘোষণায় জানান, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে একটি পরিবার প্রতি বছর ৫ লক্ষ টাকা অবধি বিনামূল্যে, নগদ জমা ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। ধারাবাহিক ভাবে চলা ওই প্রকল্পে পরে যে কোনও সময় ইচ্ছুক ব্যক্তিরা যুক্ত হতে পারবেন। প্রতি তিন বছর অন্তর স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পুনর্নবীকরণ করা যাবে।

Advertisement

শুধু ওই প্রকল্প নয়, আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া একান্ত জরুরি ছিল বলেই মত চিকিৎসকদের একাংশের। ‘সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের কথায়, ‘‘কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত কিংবা রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী—এই দু’টি কার্ডের ব্যবহারের জন্যই সরকারি বা বেসরকারি স্তরে উন্নত পরিকাঠামোর প্রয়োজন। স্বাস্থ্যে বাজেট বাড়ানোর কথা বলে কেন্দ্র আদতে ধোঁকা দিয়েছে। সেখানে রাজ্যের উপর আশা ছিল। কিন্তু আশাহত হতে হল।’’

চিকিৎসকদের একাংশ এটাও জানাচ্ছেন, রাজ্যে যে হারে নতুন হাসপাতালের ঘর-বাড়ি তৈরি হয়েছে, সেখানে রোগীর অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর সহ সভাপতি কৌশিক লাহিড়ী বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তোলার যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি সমস্ত পরিকাঠামো ঠিক না থাকলে সেটি চলবে কি ভাবে, তা দেখাও জরুরি। এখানে গোড়া কেটে আগায় জল দেওয়া হচ্ছে।’’

কেন্দ্রের ‘ব্যাকওয়ার্ড রি‌জ়িয়ন ডেভলেপমেন্ট গ্রান্ট’ –এর টাকায় রাজ্য জুড়ে তৈরি ৪৩টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, গ্রামীণ ও ব্লক স্তরে প্রায় ৩৫০টির মতো হাসপাতাল এবং অসংখ্য প্রাথমিক ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও, সেগুলি ব্যবহারের সঠিক পরিকাঠামো নেই বলেও এ দিন অভিযোগ করেন, ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মানস গুমটা। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য মানে শুধু কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা নয়। পুষ্টি, পানীয় জল, মা-শিশুর স্বাস্থ্য, টিকাদান এই সমস্ত বিষয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নেও জোর দেওয়া প্রয়োজন ছিল।’’

বিরোধীরা অপপ্রচার করছেন দাবি করে ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক তথা শাসক দলের সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘দেশের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে সরকারি পরিকাঠামোতে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তার সঙ্গে বেসরকারি পরিকাঠামোতেও যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পান, তার জন্যই ১০ কোটি মানুষের হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পৌঁছেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন