নির্মল মাজি।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের যাবতীয় অনুষ্ঠানে তাঁর মঞ্চে উপস্থিতিটা এত দিন ছিল দস্তুর। নতুন বছরে সেই হাসপাতালেই আরও একটি অনুষ্ঠান। কিন্তু ক্ষুব্ধ তিনি অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি, নির্মল মাজি। মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান এবং ‘এক্স স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর ভাইস-চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা।
নির্মলের অভিযোগ, তাঁর আপত্তির তোয়াক্কা না-করেই মেডিক্যালের প্রাক্তনীদের ওই সংগঠন আয়োজিত আলোচনাসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে। কার্যত নির্মলের ‘গড়’ বলেই পরিচিত কলকাতা মেডিক্যাল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাজ্যপালকে আমন্ত্রণের সিদ্ধান্ত যে চিকিৎসকেরা নিয়েছেন, তাঁরা একদা পরিচিত ছিলেন নির্মল-ঘনিষ্ঠ হিসেবেই।
প্রাক্তনী সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ২৮ জানুয়ারি হাসপাতালে যে ৮৩তম আলোচনাসভাটি হবে, তার বিষয়বস্তু মরণোত্তর অঙ্গদান। সেখানেই প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজ্যপালকে। প্রাথমিক ভাবে আমন্ত্রণ গ্রহণ করে রাজ্যপালের দফতর থেকে চিঠিও এসে গিয়েছে। সংগঠন সূত্রের দাবি, তুমুল অশান্তি করে শেষ মুহূর্তে সব পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন নির্মল। কিন্তু সেখানেই তিনি জোর ধাক্কা খেয়েছেন। এত দিন যে সংগঠনে হয়ে ছড়ি ঘুরিয়েছেন, সেখানকার সদস্যরাই আজ তাঁর বিরুদ্ধে একজোট।
রাজ্যপালকে নিয়ে নির্মলের আপত্তি কীসের?
এই সেই আমন্ত্রণপত্র।
মেডিক্যালের চিকিৎসক মহলের খবর, সাম্প্রতিক অতীতে প্রথমে রাজ্যের টোল প্লাজাগুলিতে সেনার উপস্থিতি নিয়ে রাজ্যপালের মন্তব্য, তার পর কলকাতায় বিজেপির দফতরে হামলা সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহের জেরে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে রাজ্যপালের। ঘনিষ্ঠ মহলে নির্মল তাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তাঁর ‘নিজের এলাকা’ কলকাতা মেডিক্যালের অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল প্রধান অতিথি হয়ে এলে দলনেত্রীর রোষে পড়তে পারেন তিনি। ক্ষুব্ধ নির্মল নাকি এ-ও বলেন, ‘‘আমি সবাইকে জানিয়ে দেব, রাজ্যপালকে নিমন্ত্রণের ব্যাপারে কিছু জানি না। ওই অনুষ্ঠানে থাকবও না। সে দিন হাসপাতালে সমাবর্তন আছে, সেখানে থাকব।’’
‘সবাইকে’ বলতে কাকে? সরাসরি জবাব দেননি নির্মল। তবে বলেছেন, ‘‘ডাক্তারদের চিকিৎসা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে নন-ডাক্তাররা কী বুঝবেন? শুধু এসে ফোড়ন কাটবেন! আমি হলে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বা এইমস এর কোনও চিকিৎসককে বা স্টেম সেলের কোনও নামী চিকিৎসক-গবেষককে প্রধান অতিথি করে আনতাম। রাজ্যপালকে নিমন্ত্রণ করতাম না।’’
যদিও এর পরে প্রাক্তনী সংগঠনে এত দিন নির্মল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পদাধিকারীরাও ঠারেঠোরে নিজেদের বিরক্তি বুঝিয়ে দিয়েছেন। সংগঠনের সচিব অভিজিৎ চৌধুরী এবং সভাপতি প্রশান্তকুমার ভট্টাচার্য সাফ জানিয়েছেন, মেডিক্যালের অনুষ্ঠানে কোনও রাজনীতি থাকবে না। প্রতি বারই এই আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হন কোনও এক বিশিষ্ট। এ বছর রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা গর্বিত যে, উনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। এই প্রথম মেডিক্যালে পা রাখছেন। তাতে অন্য কার কী মনে হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’’
কিন্তু কেন এই বিদ্রোহ?
এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রোগী কল্যাণ সমিতির কর্তা হিসেবে উনি (নির্মল) এমনিতেই হাসপাতালের সমস্ত বিষয়ে নাক গলান। তা বলে প্রাক্তনী সংগঠন এক জন রাজনৈতিক নেতার কথায় চলবে কেন?’’ মেডিক্যাল সূত্রের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে নির্মলের খবরদারির জেরে অনেকেই এখন তিতিবিরক্ত। ক্ষোভ রয়েছে তাঁর দুর্ব্যবহার নিয়েও। তারই প্রতিফলন এখন দেখা যাচ্ছে।