আসল বোতলে নামী তকমার ঢালাও নকল মদ

এ বার আসল বোতলে নকল ব্ল্যাক লেবেল পাওয়া গেল নদিয়ার করিমপুরে। অতিরিক্ত আবগারি কমিশনার সুব্রত বিশ্বাস জানান, কলকাতা থেকে আসল ব্ল্যাক লেবেলের খালি বোতল এনে নকল মদ বানানো হচ্ছিল করিমপুরের একটি বাড়ির একতলায়।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০০
Share:

একেবারে লেফাফা-দুরস্ত্‌! আধারটি আসল। ভিতরের পদার্থ নকল।

Advertisement

এর আগে শহরের ঝুপড়িঘরে পাওয়া গিয়েছে জ্যাক ড্যানিয়েল, গ্লেনফিডিশ, শিবাস রিগাল, ব্ল্যাক লেবেলের মতো নামী ব্র্যান্ডের স্কচ, অ্যাবসলিউটের মতো বিদেশি ভদকার আসল বোতলে নকল মদ। ধরা পড়েছে নকলবাজির দুষ্টচক্র। এ বার আসল বোতলে নকল ব্ল্যাক লেবেল পাওয়া গেল নদিয়ার করিমপুরে। অতিরিক্ত আবগারি কমিশনার সুব্রত বিশ্বাস জানান, কলকাতা থেকে আসল ব্ল্যাক লেবেলের খালি বোতল এনে নকল মদ বানানো হচ্ছিল করিমপুরের একটি বাড়ির একতলায়। কলকাতা ও আশেপাশে আবগারি দফতরের নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় নকল মদের কারবারিরা শহরতলিতে জাল মদ বানাচ্ছে বলে সুব্রতবাবুদের সন্দেহ।

আগে কলকাতায় নকল বিদেশি মদ বাজেয়াপ্ত করতে গিয়ে জানা গিয়েছে, সেগুলি মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ডে পাঠানো হত। যাঁরা নিয়মিত বিদেশি মদ খান, তাঁরা ওই নকল মদে চুমুক দিলেই ধরে ফেলেন। সেই জন্য নকল মদ বিক্রির জন্য বেছে নেওয়া হয় শহরতলির সেই সব বাসিন্দাকে, যাঁরা হয় কখনও বিদেশি মদ খাননি, খেলেও এক-দু’বারের বেশি নয়।

Advertisement

ও-পার বাংলায় মদ্যপান নিষিদ্ধ। কিন্তু করিমপুরের নকল মদের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে বাংলাদেশের নামও। এ দেশ থেকে সেখানে প্রচুর মদ পাচার হয়। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ে। বিদেশি বোতলে নকল মদের দামও কম। বাজারে আসল ব্ল্যাক লেবেলের দাম চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। নকল ব্ল্যাক লেবেল অনায়াসে মেলে দেড়-দু’হাজারে। বিদেশি মদের ছাপ মারা নকল মদের কিছুটা পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে।

সুব্রতবাবু জানান, করিমপুরে নকল মদের প্রধান কারবারিকে ধরা যায়নি। তিনি কোথায় থাকেন, কোথায় নকল মদ সরবরাহ করেন— জানা যায়নি। গত শুক্রবার নকল মদ বাজেয়াপ্ত করার সময়ে নিখিল মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তিনিই জানান, আসল কারবারি তাঁকে বিদেশি মদের আসল বোতল, নকল মদ তৈরির সরঞ্জাম দিতেন। তিনি শুধু নকল মদ তৈরি করে ভরে দেন। মূল কারবারি তা নিয়ে যান। নিখিলকে বেতন দেন মাসে মাসে।

নকল মদ যে-বাড়িতে তৈরি হচ্ছিল, তার উল্টো দিকের বাড়ির কর্তা নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছেন। তার ফুটেজে ছবি দেখে মূল কারবারিকে শনাক্ত করেছেন নিখিল। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘গত নভেম্বরে করিমপুরের এক জায়গায় হানা দিয়ে ১৪০ লিটার ক্যারামেল পাওয়া গিয়েছিল। ক্যারামেল হল চিনি পুড়িয়ে তৈরি করা রস, যা নকল মদ তৈরির কাজে লাগে।’’ অভিযোগ, ক্যারামেলের সঙ্গে রয়্যাল স্ট্যাগের মতো সস্তার হুইস্কি, কখনও বা জল মেশানো স্পিরিট দিয়ে বানানো হচ্ছে নকল বিদেশি মদ। তার স্বাদ সাধারণ মদের মতো। ক্যারামেলের বেশি থাকায় তার রং আসল ব্ল্যাক লেবেলের রঙের তুলনায় কিছুটা গাঢ়।

নকল ব্ল্যাক লেবেলের হদিস মিলেছে ক্যারামেলের সূত্র ধরেই। নিখিলের ডেরায় পাওয়া গিয়েছে ২০ লিটার ক্যারামেল এবং ৬০ বোতল নকল ব্ল্যাক লেবেল। যার বাজারদর আনুমানিক তিন লক্ষ টাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন