Durga Puja

পুজোর আগেই পুজো, শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আজ থেকেই পুজো শুরু, বলে দিলেন মমতা

শহরবাসী থেকে আদিবাসী, টেলিতারকা থেকে ছাত্র-ছাত্রী— আবেগ মিশল সকলের। জোড়াসাঁকো থেকে কলুটোলা, ডোরিনা ক্রসিং হয়ে রেড রোডে পৌঁছবে মিছিল। মিছিলে সামনের সারিতে হাঁটলেন মমতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:২৭
Share:

ইউনেসকোকে ধন্যবাদ জানিয়ে মমতার ডাকে জোড়াসাঁকো থেকে শুরু পদযাত্রা।

বুধবারই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, এ বার পুজো শুরু এক মাস আগেই। কথাটা যে ভুল বলেননি, টের মিলল বৃহস্পতিবার সকালেই। শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, ঢাকের তালে ধুনুচি নাচ— এক মাস আগেই পুজো শুরু হয়ে গেল বাংলায়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার সূচনা করে মমতা বলেও দিলেন, ‘‘আজ থেকেই আমাদের দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গেল। সমস্ত ধর্ম, বর্ণকে নিয়ে এগিয়ে চলব আমরা। ইউনেসকোকে ধন্যবাদ। সারা বিশ্বকে ধন্যবাদ।’’

Advertisement

বাংলা দুর্গাপুজোকে ‘আবহমান ঐতিহ্য’-এর তালিকায় স্থান দিয়েছে ইউনেসকো। তাদের ধন্যবাদ জানিয়েই বৃহস্পতিবার শোভাযাত্রার ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বলেছিলেন, ‘দলমতনির্বিশেষে’ ওই পদযাত্রায় যোগ দিতে। তিনি নিজেও হাঁটবেন রেড রোড পর্যন্ত সেই পদযাত্রায়। এমনই কথা ছিল। বাস্তবে তার ব্যতিক্রম হয়নি। আগাগোড়া মিছিলে হাঁটছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। আর তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হয়েছেন রাজ্যের নেতা-মন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রী।

বৃহস্পতিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী টুইটারে লিখেছেন, ‘দুর্গাপুজো একটা আবেগ, সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে, যা আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে। আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে শিল্পের মিশেল ঘটায় পুজো। দুর্গাপুজোকে আবহমান ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ইউনেসকোকে।’

Advertisement

বস্তুত, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে ওই শোভাযাত্রায় মমতা বিরোধী বিজেপিকে একটি ‘রাজনৈতিক বার্তা’-ও দিতে চেয়েছেন। গত বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যনেতারা বলতেন, বাংলায় দুর্গাপুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে! তার যে কোনও ভিত্তি ছিল না বা নেই, সেটিও মমতা বোঝাতে চেয়েছেন দুর্গাপুজো নিয়ে এই সাড়ম্বর শোভাযাত্রার আয়োজন করে। যদিও বিরোধী বিজেপির নেতা দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবারেই বলেছন, ‘‘সরকারি টাকা খরচ করে মোচ্ছব হচ্ছে!’’

তবে আবেগ ছিল। সেই আবেগ ধরা পড়ল বৃহস্পতিবারের পদযাত্রায়। শহরবাসী থেকে আদিবাসী, টেলিতারকা থেকে ছাত্র-ছাত্রী— আবেগ মিশল সকলের। জোড়াসাঁকো থেকে কলুটোলা, ডোরিনা ক্রসিং হয়ে রেড রোড পর্যন্ত রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন সাধারণ মানুষ। মিছিলের কোথাও ছৌনাচ, কোথাও ধামসা-মাদল নিয়ে নাচ। ছিল রংবেরঙের বেলুন, পতাকা। ছিল দুর্গামূর্তিও। কোথাও আবার ধুনুচি নাচ। আর সব ছাপিয়ে দুর্গাপুজোর আবশ্যিক অনুষঙ্গ ঢাকের আওয়াজ। সঙ্গে রাস্তার পাশের লাউডস্পিকার থেকে ভেসে-আসা পুজোর গান। যার গীতিকার এবং সুরকার মমতা স্বয়ং। গেয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।

পদযাত্রা শুরু আগে অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। সেই বর্ষণ মাথায় নিয়েই জড়ো হয়েছিলেন মানুষ। তবে তাঁদের কারও হাতে কালো ছাতা ছিল না। বলেই দেওয়া হয়েছিল, এই শোভাযাত্রায় কোথাও কালো রং থাকবে না (ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরাও পরিচিত কালো সাফারি স্যুটের বদলে সাদা সাফারি স্যুট পরেছিলেন)। ফলে বিভিন্ন রঙের ছাতা মাথায় শোভাযাত্রায় শামিল হন মানুষ। পদযাত্রার শুরুতে মমতা বলেন, ‘‘ঝর ঝর বহিছে বারিধারা। শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিনে বর্ষণ হয়। কখনও কার্তিকেও হয়। কিছু করার নেই। সব বর্ণ, সব শক্তিকে নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে। গরম থেকে বৃষ্টি ভাল। সব ধর্ম, বর্ণকে নিয়ে এগিয়ে চলুন।’’ মমতা পৌঁছনোর আগেই ঢাকের তালে ধুনুচি হাতে কয়েক পাক নেচে নেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সঙ্গে বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী।

শোভাযাত্রার শেষে রেড রোডেই আয়োজন হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। শহরের বিভিন্ন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারাও পদযাত্রায় অংশ নেন। ছিল কলকাতার তিন প্রধান ক্লাবও। মিছিলের জন্য সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন