ক্ষমতায় আসার পর সরকারি কাজে দুর্নীতি রোধে স্বচ্ছতা আনতে ই-টেন্ডার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ খোদ শাসক দলের এক নেতার বিরুদ্ধেই এই প্রক্রিয়ায় আপত্তির অভিযোগ উঠেছে। তাঁর ‘আব্দার’, ই-টেন্ডার নয় স্থানীয় ভাবে টেন্ডার ডাকতে হবে! তাঁর পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়েই কাজ করাতে হবে।
নেতার এই আব্দারের চোটে প্রায় দেড় বছর ধরে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে সরকারি প্রকল্পের টাকা। যা বরাদ্দ হয়েছিল স্কুলের সংস্কারের জন্য। যদিও প্রধান শিক্ষক চান, সরকারি নিয়ম মোতাবেক ই-টেন্ডার ডেকে কাজের বরাত দিতে। কিন্তু পরিচালন কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা দেবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ হেন চাপে পড়ে প্রধান শিক্ষক শিক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন। অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় বিধায়কের কাছেও। বিষয়টি নিয়ে ডামাডোল চলছে হুগলির জাঙ্গিপাড়ার দ্বারকানাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে (ডি এন হাইস্কুল)।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতাদের ‘দাদাগিরি’ বন্ধের কথা বলছেন বার বার। বাঁকুড়ায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ঠিকাদার কে হবেন, তা নিয়ে নাক গলানোয় দিন কয়েক আগেই দলের নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে সেখানকার জেলা সভাধিপতিকে রীতিমত ধমকেছেন তৃণমূলনেত্রী। এ বার হুগলির স্কুলে সরকারি প্রকল্পের টাকা খরচ নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ সামনে আসায় জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব স্পষ্টতই অস্বস্তিতে। দেবদাসবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘প্রধান শিক্ষক লক্ষ-লক্ষ টাকার দুর্নীতি করেছেন। কিছু বিষয়ে আমি লিখিত জানতে চেয়েছি। হিসাবপত্র ফের অডিটের দাবি জানিয়েছি। আসলে চুরির ব্যাপার ধামাচাপা দিতেই উনি ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।’’ যদিও প্রধান শিক্ষক গৌতম সিংহ রায় অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
১৯১৯ সালে তৈরি জাঙ্গিপাড়ার এই স্কুলটি বছর দুয়েক পরেই শতবর্ষ পালন করতে চলেছে। সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই স্কুলে এক সময় শিক্ষকতা করেছিলেন। এ হেন একটি স্কুলে এমন ঘটনায় অভিভাবক এবং এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। তাঁরা চাইছেন, অবিলম্বে সমস্যার সমাধান হোক। জাঙ্গিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। এটা চলতে পারে না। আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব। ওই ব্যক্তির স্কুলের সভাপতি পদ খারিজের আবেদনও জানাব।’’
প্রশাসন ও বিদ্যালয় সূত্রে খবর, স্কুলের পুরনো ভবন সংস্কারের জন্য স্কুলশিক্ষা দফতর ১৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা মঞ্জুর করে। গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে ওই টাকা স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পড়ে আছে। গত বছর জুন মাসে পরিচালন কমিটির সভাপতি হন স্থানীয় তৃণমূল নেতা দেবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি আবার হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য দীপান্বিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী। দেবদাসবাবু জাঙ্গিপাড়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন। গত বিধানসভা ভোটের মুখে স্নেহাশিসবাবুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তিনি পদত্যাগ করেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষের একাংশের বক্তব্য, টাকা খরচের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতির সই জরুরি। কিন্তু বার বার বলা সত্ত্বেও সভাপতি ওই টাকা খরচের বিষয়ে উচ্চবাচ্য করছেন না। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘বহু বার ওঁকে বলা হয়েছে। কিন্তু উনি ‘দেখছি, দেখব’ করছেন। ই-টেন্ডার করতে আপত্তি জানাচ্ছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গত বছরেই ওই টাকায় কাজ শেষ করার কথা ছিল। শিক্ষা দফতর কাজের ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ চাইছে। আশঙ্কা হচ্ছে, টাকা ফেরত না চলে যায়।’’