Ayan Sil

এক এজেন্টের হাতে ২৬ কোটি দেন অয়ন! ইডির দাবি, ‘প্রভাবশালী সরকারি কর্মী’র কাছে যায় ওই টাকা

শনিবার নগর দায়রা আদালতে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত অয়নের জামিনের আবেদনের মামলা চলছিল। অয়নের আইনজীবীরা যে কোনও শর্তে জামিন চেয়েছিলেন। যদিও সেই জামিন মঞ্জুর করেনি আদালত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:৩১
Share:

১১ এপ্রিল পর্যন্ত প্রোমোটার অয়নকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক। — ফাইল ছবি।

‘অযোগ্য’দের চাকরি পাইয়ে দিতে ২৬ কোটি টাকা এক ‘এজেন্ট’কে দিয়েছিলেন অয়ন শীল। শনিবার আদালতে এই দাবিই করেছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র আইনজীবী। তিনি জানিয়েছেন, অয়নকে জেরা করেই এই তথ্য পেয়েছে ইডি। তদন্তকারী সংস্থা এ-ও মনে করছে যে, ওই টাকা এক ‘প্রভাবশালী সরকারি কর্মী’-র কাছেই গিয়েছে।

Advertisement

শনিবার নগর দায়রা আদালতে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত অয়নের জামিনের আবেদনের মামলা চলছিল। অয়নের আইনজীবীরা যে কোনও শর্তে জামিন চেয়েছিলেন। যদিও সেই জামিন মঞ্জুর করেনি আদালত। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত প্রোমোটার অয়নকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক। জেলে গিয়ে তাঁকে জেরা করতে পারবেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

অয়নের জামিনের বিরোধিতা করে ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বেশ কিছু তথ্য আদালতে পেশ করেছেন। ইডির তরফে জানানো হয়েছে, চাকরি দেওয়ার নামে এক হাজার প্রার্থীর থেকে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন অয়ন। তাঁর প্রায় ৩০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একাধিক দফায় আট কোটি টাকা ঢুকেছে। ইডি আরও দাবি করেছে, প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এক কোটি টাকা দিয়েছিলেন অয়ন। তাঁর ৪০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, আটটি ফ্ল্যাট, পাঁচটি গাড়ি, একটি পেট্রোল পাম্প, একটি হোটেলের হদিস পেয়েছে ইডি। আদালতে ইডি দাবি করেছে, দুর্নীতির টাকাতেই এ সব হয়েছে।

Advertisement

অয়নের বিরুদ্ধে পুরসভার নিয়োগ পরীক্ষার ওএমআর শিট (উত্তরপত্র)-এ কারচুপিরও অভিযোগ তুলেছে ইডি। তারা দাবি করেছে, কিছু উত্তরপত্রে নম্বর কমানোর জন্য কারচুপি করা হয়েছে। কী ভাবে হয়েছিল সেই কারচুপি? ইডি জানিয়েছে, যে সব প্রার্থী বেশি নম্বর পেতেন, তাঁদের উত্তরপত্রে সঠিক উত্তরের অপশনের পাশাপাশি ভুল উত্তরেও অপশনও দাগিয়ে দেওয়া হত। এর ফলে সেই যোগ্য প্রার্থীর উত্তরপত্র বাতিল (ডিসকোয়ালিফাই) হয়ে যেত। তাঁদের স্থানে নিজেদের ‘অযোগ্য’ প্রার্থীর উত্তরপত্রে সঠিক উত্তর পূরণ করে দিতেন। এই প্রসঙ্গে অয়নের আইনজীবী সঞ্জীব দাঁ জানিয়েছেন, চার্জশিট পেশ হলেই এই নিয়ে তিনি কথা বলবেন।

অয়নের সংস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারক। শনিবার তিনি জানতে চেয়েছেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত টেন্ডার অয়নের যে এবিএস ইনফোজোন সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল, সেই সংস্থা কী করত? জবাবে অয়নের আইনজীবী জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল এক জন ব্যবসায়ী। পুরকর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত কাজ করত অয়নের সংস্থা। আর যা করা হয়েছে, সবটা টেন্ডার ডেকেই করা হয়েছে। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল চাকরি দেওয়ার কেউ নন। নিয়োগ তাঁর হাতে ছিল না। তাঁরা প্রার্থী নির্বাচন করে তা উদ্দিষ্ট পুরসভার হাতে পাঠিয়ে দিতেন। তার পর পুরসভা নিয়োগ করত। অয়নের সংস্থা খুবই ভাল কাজ করত। তার মাধ্যমেই টাকা রোজগার করেছে। এর সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির যোগ নেই।

গত ২০ মার্চ নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন গ্রেফতার হন। তার আগে অয়ন এবং তাঁর বাবা-মাকে জেরা করে ইডি। অয়নের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ইডির তরফে জানানো হয়েছিল, তল্লাশিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা সম্বলিত কয়েকটি নথিও ছিল। ইডি সূত্রের দাবি, প্রায় শতাধিক উত্তরপত্রের (ওএমআর শিট) প্রতিলিপিও উদ্ধার হয়েছে। ছিল সম্পত্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিও। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কোনও সরকারি কর্তাব্যক্তি না হয়েও এক জন প্রোমোটারের অফিসে এই নথি এল কী ভাবে, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রের দাবি, এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই অয়নকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন