বরাবরই বেতন কাটার বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রী।
খোদ মন্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন থেকে বাড়িভাড়া বাবদ অর্থ কাটার ব্যাপারে বিশেষ তৎপর হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকী বিভিন্ন কলেজে টেলিফোন করে তিনি বেতন থেকে বাড়িভাড়ার টাকা কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ।
উচ্চশিক্ষা দফতরের সেই জয়েন্ট ডিপিআই বা যুগ্ম শিক্ষা অধিকর্তা তুষার ঘড়াকে পে-প্যাকেট সেকশন (কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতনের দায়িত্বপ্রাপ্ত) থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। সূত্রটি জানাচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও ওই শিক্ষাকর্তার উপরে বেশ রুষ্ট। এবং তুষারবাবুকে ওই দায়িত্ব থেকে সরারিয়ে দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ সেটাও। তবে শিক্ষামন্ত্রী সেই বিতর্কে যেতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, তুষারবাবুর দায়িত্বে রদবদল নেহাতই ‘রুটিন ঘটনা’।
রাজ্যের অর্থ দফতর ২০১২ সালে একটি নির্দেশিকা জারি করে জানায়, কোনও সরকারি কর্মচারীর স্বামী বা স্ত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও বাড়িভাড়া খাতে মিলিত ভাবে তাঁদের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ছ’হাজার ছাড়াতে পারবে না। ২০১৪-র শেষ থেকে ওই নির্দেশিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কিছু কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরেও। তার জেরে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা বাড়িভাড়া বাবদ প্রাপ্য অর্থ পাচ্ছেন না। অন্য খাতেও সেই টাকা দেওয়া হচ্ছে না।
আচমকা বেতন কমে যাওয়ায় ওই সব শিক্ষক-শিক্ষিকা সমস্যায় পড়েছেন। আলাদা ভাবে কোনও নির্দেশিকা জারি না-করেও উচ্চশিক্ষা দফতর কী করে এ ভাবে বেতন কাটতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। যদিও উচ্চশিক্ষা দফতরের একাংশের দাবি, সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বেতন দেয় অর্থ দফতর। সেই দফতরের নির্দেশ মেনেই সরকারি কর্মীদের বাড়িভাড়া বাবদ বেতন কাটা হচ্ছে। তাই ওই নির্দেশের ভিত্তিতেই শিক্ষকদের বেতনও কাটা যেতে পারে। তার জন্য পৃথক নির্দেশিকা জারি করার দরকার নেই।
কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী নিজে আগাগাড়া এর বিরোধিতা করে আসছেন। বেতন না-কাটার জন্য তিনি মৌখিক ভাবে নির্দেশও দেন উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তাদের। শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসুও জানিয়েছিলেন, টাকা কাটার এই প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা।
কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। বিভিন্ন কলেজে বাড়িভাড়া বাবদ বেতন কাটা অব্যাহত। এবং এর পিছনে তুষারবাবুর সক্রিয় ভূমিকা আছে বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। বিকাশ ভবনের অন্দরের খবর, এই ‘অতিসক্রিয়’ স্বভাবের জন্য ওই কর্তা দফতরেও তেমন জনপ্রিয় নন। খোদ মন্ত্রী যে-বিষয়ে বারবার আপত্তি জানিয়েছেন, যে-প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখা হবে বলে জানাচ্ছেন দফতরের শীর্ষ কর্তারাই, সেই ব্যাপারে তুষারবাবুর উদ্যোগ মোটেই ভাল ভাবে নেওয়া হয়নি বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও ওই কর্তাকে সংযত হওয়ার বার্তা দিয়েছেন বলেই খবর। দফতরের একাংশ জানান, বিকাশ ভবনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তুষারবাবুকে ফের সরকারি কলেজে শিক্ষকতার চাকরিতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
যদিও এ-সবের সঙ্গে বুধবারের দায়িত্ব বদলের সম্পর্ক নেই বলেই উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে। তাদের ব্যাখ্যা, সামগ্রিক ভাবে কর্তাদের দায়িত্ব রদবদলের নির্দেশ জারি হয়েছে। চেষ্টা করেও তুষারবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি টেলিফোন ধরেননি। এসএমএস করেও জবাব মেলেনি।
বাড়িভাড়া কাটা হচ্ছে স্কুলেও। দু’ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতায় সরব শিক্ষক-শিক্ষিকারা মামলা করেছেন হাইকোর্টে। আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী এক্রামুল বারি বলেন, ‘‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বামী বা স্ত্রীর বেতনের বিষয়টি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতনে প্রভাব ফেলতে পারে কোন যুক্তিতে, সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না।’’ এ মাসেই বেতন সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে বলে জানান ওই আইনজীবী।