বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ, ধৃত প্রতিবেশী যুবক

চাকদহ ব্লকের চান্দুরিয়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গঙ্গাপ্রসাদপুরের সেই ভিটেতেই প্রতিবেশী এক যুবক সোমবার রাতে ওই বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর থেকেই কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছেন বৃদ্ধা। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:১১
Share:

—প্রতীকী ছবি

ভাল করে চলাফেরা করতে পারতেন না, কানেও শুনতেন না। পারিবারিক সূত্রের খবর, ইদানীং অনেক কিছু ভুলে‌ যাচ্ছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধা। নিজে বাড়ি করার পর বহু বার তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ছেলে। কিন্তু শ্বশুরের ভিটে ছাড়বেন না বলে জেদ করে বৃদ্ধা সেখানে একাই থেকে গিয়েছিলেন।

Advertisement

চাকদহ ব্লকের চান্দুরিয়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গঙ্গাপ্রসাদপুরের সেই ভিটেতেই প্রতিবেশী এক যুবক সোমবার রাতে ওই বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর থেকেই কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছেন বৃদ্ধা। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছেন।

ওই ঘটনায় অভিযুক্ত বৃদ্ধার প্রতিবেশী যুবক। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ অভিযুক্ত অর্ঘ্য বিশ্বাস ওরফে অভিজিৎ নামের বছর কুড়ির যুবককে গ্রেফতার করেছে। বুধবার তাকে কল্যাণী আদালতে হাজির করা হয়েছিল। বিচারক তাঁর চোদ্দো দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবারই কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ওই বৃদ্ধার যাবতীয় শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে। আপাতত তিনি চাকদহ শহরে ছেলের বাড়িতে রয়েছেন। তাঁর ছেলের কথায়, ‘‘এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না এমন হয়েছে। শেষ জীবনে মায়ের কপালে এই লাঞ্ছনা লেখা ছিল! মা কথা বলতে পারছেন না। তবে পুলিশের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে।’’

Advertisement

পুলিশের দাবি, জেরায় ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে অর্ঘ্য। জানিয়েছে, মদ খেয়ে হুঁশ হারিয়ে এ কাজ করে ফেলেছে। তবে এলাকায় তাঁর ভাবমূর্তি একেবারেই ভাল নয়। পাড়ার লোক জানিয়েছে, সে ওয়্যারিংয়ের কাজ করত। মাঝেমধ্যে ছোটখাট সংস্থার হয়ে পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে মাইকে প্রচার করত। প্রতিদিন মদ খাওয়া ছিল তার নেশা। অর্ঘ্যর বাবা সুশান্ত বিশ্বাস বুধবার বলেন, “ছেলে যদি এই জঘন্য অপরাধ করে থাকে, তা হলে যেন ওর শাস্তি হয়।”

প্রসঙ্গত, এই নদিয়া জেলাতেই রানাঘাটে ‘কনভেন্ট অব জেসাস অ্যান্ড মেরি’-র ৭১ বছর বয়সি এক সন্ন্যাসিনী ২০১৫ সালে ধর্ষিতা হয়েছিলেন। আবার গত ১৪ সেপ্টেম্বর চা খাওয়ানোর নাম করে ডেকে নিয়ে গিয়ে বছর সত্তরের এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল বর্ধমান শহরে। বর্ধমান স্টেশন লাগোয়া একটি মিষ্টির দোকানের সামনে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় কয়েক জন তাঁকে উদ্ধার করেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। ডাক্তারি রিপোর্ট পাওয়ার পরে রাতে বর্ধমান থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ধর্ষণের মামলা রুজু করেছিল।

চাকদহের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বৃদ্ধার ছেলে। পারিবারিক সূত্রের খবর, বৃদ্ধার বাড়ির পাশেই তাঁর দেওরের বাড়ি। অসুস্থ থাকায় ঘরের দরজা ভেজিয়ে ঘুমোতেন বৃদ্ধা। ঘরের আলোও নেভানো হত না। সোমবার রাত আড়াইটে নাগাদ দেওরের বাড়ির কয়েক জন বৃদ্ধার ঘরে জিনিসপত্র পড়ার আওয়াজ শুনতে পান। তাঁরা ছুটে এসে দেখেন, খাটের উপরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধা। পাশে মেঝেতে বসে রয়েছে অর্ঘ্য। বৃদ্ধার বাড়ির তিনটি বাড়ি পরেই তার বাড়ি। লোকজন দেখে সে খাটের তলায় ঢুকে পড়ে। বৃদ্ধার আত্মীয়েরা তাঁকে টেনে বের করেন। তার পর মারধর শুরু করলে অর্ঘ্য ধর্ষণের কথা সর্বসমক্ষে স্বীকার করে বলে দাবি করেছেন বৃদ্ধার আত্মীয়েরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন