SIR in West Bengal

৮৫ বছর বা বেশি বয়সি, অসুস্থ এবং বিশেষ ভাবে সক্ষমদের যেতে হবে না শুনানিকেন্দ্রে! বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিল কমিশন

শনিবার থেকে রাজ্যে ভোটারদের শুনানি শুরু হয়েছে। বহু বয়স্ক ভোটারকে শুনানিকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সে করে শুনানিকেন্দ্রে পৌঁছোতেও দেখা গিয়েছে। পর পর ঘটনাগুলি নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূলও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৩১
Share:

বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসআইআর-এর কাজ করছেন কমিশন নিযুক্ত আধিকারিকেরা। — ফাইল চিত্র।

৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সি ভোটারদের শুনানিকেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অসুস্থ এবং বিশেষ ভাবে সক্ষমদেরও শুনানিকেন্দ্রে যেতে হবে না। তাঁদের বাড়িতেই শুনানির ব্যবস্থা করা হবে। সোমবার এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করল নির্বাচন কমিশন। এই সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতর। তবে এত দিন তা লিখিত আকারে ছিল না। এ বার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল সিইও দফতর।

Advertisement

বিজ্ঞপ্তিতে সিইও দফতর জানিয়েছে, এই তিন ধরনের ভোটার যদি অনুরোধ করেন, তাঁকে শুনানিতে ডাকা হবে না। সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএলও, ইআরও এবং এইআরও-দের বিষয়টি খেয়াল রাখতে বলেছে সিইও দফতর। কমিশন এ-ও জানিয়েছে, এমন কোনও ভোটারকে নোটিস পাঠানো হলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ইআরও, বিএলও বা এইআরও-কে। তাঁকে নথি যাচাইয়ের জন্য শুনানিকেন্দ্রে না আসার অনুরোধ করতে হবে। পরে সংশ্লিষ্ট ভোটারের বাড়িতে গিয়ে শুনানির কাজ সেরে আসতে হবে।

তবে সিইও দফতরের এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরেও কিছু জায়গায় বিভ্রান্তিও ছড়িয়েছে। অসুস্থতার কথা উল্লেখ করলেও কী ধরনের অসুস্থতাকে বিবেচনা করা হবে, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে। অর্থাৎ, কেউ কতটা অসুস্থ হলে তাঁকে শুনানিকেন্দ্রে যেতে হবে না— সে বিষয়ে কোনও আলোকপাত করা হয়নি।

Advertisement

বয়স্ক ভোটারদের কথা বিবেচনা করে আগেই নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। বর্তমানে ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সি ভোটারদের বাড়ি গিয়েই ভোট নিয়ে আসা হয়। সে ক্ষেত্রে শুনানি পর্বেও যাতে ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সি ভোটারদের বাড়ি গিয়ে শুনানি হয়, তিনি সেই প্রস্তাব দেন কমিশনকে। তাতে সম্মতি দেয় কমিশনও। একই সঙ্গে যাঁরা অসুস্থ, শুনানিকেন্দ্রে যাওয়ার অবস্থায় নেই— এমন ভোটারদের বিষয়েও ক্ষেত্রবিশেষে বিবেচনা করে দেখার কথা ছিল।

কিন্তু গত শনিবার রাজ্যে ভোটারদের শুনানি শুরু হওয়ার পরে দেখা যায় বয়স্ক ভোটারেরাও লাইন দিয়েছেন শুনানির জন্য। এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সে করে শুনানিকেন্দ্রে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। পর পর এই ঘটনাগুলিকে কেন্দ্র করে কমিশনের ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। সরব হয় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলও। রবিবারই সমাজমাধ্যমে এক পোস্টে তৃণমূল লেখে, এসআইআর-এর শুনানিকে রাজ্যবাসীর জন্য এক শাস্তিমূলক প্রক্রিয়ায় পরিণত করা হয়েছে। প্রশ্ন তোলেন হুগলির শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কমিশনকে ‘অমানবিক’ বলে বিঁধে কল্যাণ প্রশ্ন কেন, “এটা কি হিয়ারিং হচ্ছে? অসুস্থ মানুষদের টেনে তুলে নিয়ে যেতে হচ্ছে।”

এরই মধ্যে সোমবার দুপুরেই সিইও দফতরে যায় তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে ছিলেন পার্থ ভৌমিক, শশী পাঁজা, বিরবাহা হাঁসদা, বাপি হালদার এবং পুলক রায়। তাঁরা দলের তরফে কমিশনের হাতে একটি দাবিপত্র তুলে দেন। সেখানেও বয়স্কদের সমস্যার কথা উল্লেখ ছিল। প্রবীণ এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম ভোটারদের যাতে বাড়িতে গিয়ে শুনানি করা হয়, সেই দাবি জানিয়েছিল তৃণমূল। এর পরেই দেখা গেল, এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করল সিইও দফতর।

বস্তুত, প্রবীণদের জন্য সিইও দফতর আগে থেকেই এই ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তব চিত্রের সঙ্গে তার কোনও সামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছিল না। বিভিন্ন জায়গায় শুনানিকেন্দ্রের বাইরে ভিড় করছিলেন বয়স্ক এবং অসুস্থেরা। এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানাল সিইও দফতর। কমিশন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেই সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, “প্রবীণদের, বিশেষ করে ষাটোর্ধ্বদের এবং যাঁদের শারীরিক অসুস্থতা বা কো-মর্বিডিটি রয়েছে— তাঁদের দিকটি মানবিকতার সঙ্গে বিবেচনার জন্য আমরা আবেদন করেছি কমিশনের কাছে। আমরা আশা করছি, এই ধরনের ব্যক্তিদের শুনানির জন্য ডাকা হবে না।”

৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সিদের বাড়ি গিয়ে শুনানির পাশাপাশি বুথস্তরের আধিকারিক (বিএলও)-দেরও বুথে গিয়ে বসার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, এসআইআর-এ এখন অভিযোগ এবং আপত্তি জানানোর প্রক্রিয়া চলছে। এই সময়ে বিএলও-দের বুথে গিয়ে বসতে হবে। কমিশনের মতে, ভোটারদের কাছ থেকে ফর্ম-৬, ৭ এবং ৮ জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য বিএলও-দের বুথে বসতে হবে। সপ্তাহে তিনটি কর্মদিবসে অন্তত দু’ঘণ্টা এবং ছুটির দিনে অন্তত চার চার ঘণ্টা করে তাঁরা বুথে বসবেন বলে জানিয়েছে কমিশন।

কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্য পুলিশের ডিজিপি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে শুনানিকেন্দ্রে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। শুনানিকেন্দ্রে রাজনৈতিক দলের বিএলএ-দের প্রবেশ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা-ও দেখার। তবে অন্য রাজ্যের মতো এখানেও বিএলএ-দের প্রবেশে কোনও অনুমতি নেই। শুনানিতে কেউ বাধা দিলে ইআরও এবং এইআরও পদক্ষেপ করবেন। কমিশন সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে, শুনানিতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকার ডিইও পদক্ষেপ করবেন। তিনিই রিপোর্ট দেবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement