Election Commissioner

ভোটে অফিসারদের রক্ষাকবচ কমিশনের

এ বার ভোটে নিযুক্ত সেই সব নির্বাচনী আধিকারিকদের এক বছরের জন্য ‘রক্ষাকবচ’ দিল নির্বাচন কমিশন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:০৮
Share:

—ফাইল চিত্র

ভোটপর্ব শেষ হওয়ার পরে অনেক সময়েই শাস্তি পেতে হয় ‘নিরপেক্ষ’ অফিসারদের। রাজ্যের মসনদে থাকা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর রোষানলে পড়ে যান সংশ্লিষ্ট অফিসার।

Advertisement

এ বার ভোটে নিযুক্ত সেই সব নির্বাচনী আধিকারিকদের এক বছরের জন্য ‘রক্ষাকবচ’ দিল নির্বাচন কমিশন। বলা হয়েছে, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক থেকে যুগ্ম মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক স্তর পর্যন্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে হলে আগে থেকে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে। শুক্রবার ক্যাবিনেট সচিব, সব মুখ্যসচিবকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে কমিশন এ কথা জানিয়েছে। ভোটের পরে প্রশাসনের উপর থেকে কমিশনের নিয়ন্ত্রণ উঠে যাওয়ার এক বছর পর্যন্ত এই বিধি মানতে বাধ্য থাকবে রাজ্য সরকারগুলি। এর ফলে প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচন কমিশনে কর্মরত অফিসারেরা অনেকটাই নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ফুল বেঞ্চ রাজ্যে আসার আগেই কমিশনের এই নির্দেশ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এতে নির্ভয়ে কমিশনের যাবতীয় নির্দেশ কার্যকর করবেন সংশ্লিষ্টরা। এই কারণে, নির্দেশিকাটি সব রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদেরও পাঠিয়ে তাঁদের ‘আশ্বস্ত’ করতে চেয়েছে কমিশন।

Advertisement

নির্দেশিকায় কমিশন জানিয়েছে, ভোটের পরে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক থেকে অতিরিক্ত, যুগ্ম, উপ ও সহকারী মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের অনেকের বিরুদ্ধে অনেক সময়ে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের উদাহরণ রয়েছে। নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকার আগে তাঁরা যে সব পদে কাজ করেছেন, সেই সময়ের কোনও ‘তুচ্ছ’ কারণে এই ধরনের পদক্ষেপের মুখে পড়তে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। সেই কারণে ন্যায়নিষ্ঠ, কর্তব্যে অবিচল এবং সৎ অফিসারদের মধ্যে ভীতি তৈরি হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় এবং অনেক সময়ে তাঁদের মনোবল ভেঙে যায় বলে প্রশাসনের একটি মহল জানিয়েছে। কমিশনের মতে, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনার চেষ্টাকে এই আশঙ্কা প্রভাবিত করে।

অভিযোগ, এই কারণে অনেকেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দায়িত্ব নিতে চান না। যাঁদের দায়িত্ব নিতে হয়, তাঁদের মধ্যেও ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা ঘোরাফেরা করে। এই কারণ দেখিয়েই কমিশন জানিয়েছে, এই ধরনের ‘হেনস্থা’-র ভয় থেকে অফিসারদের মুক্ত করতে তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া জরুরি। তবেই অবাধ, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ এবং ভয়হীন নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। কমিশন আরও জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট অফিসারদের কোনও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হলে ভোট-প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সব অফিসারেরাই জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে আসেন। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি থাকে কমিশনের হাতে। কিন্তু আচরণবিধির মেয়াদ শেষ হলে সংশ্লিষ্টরা ফের চলে আসেন রাজ্য প্রশাসনের অধীনে। পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, সমস্যাটা তখন থেকেই শুরু হয়। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসার পরে কথা না শোনার অপরাধে রাজনৈতিক ‘প্রভু’রা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছেন, এমন উদাহরণ কম নেই। এমনকি, কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীনই অফিসারদের ভবিষ্যতে এমন সম্ভাব্য পরিণতির প্রচ্ছন্ন ভয় দেখানোরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। কমিশন মনে করছে, তাদের নির্দেশ কার্যকর করার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা ত্রস্ত হয়ে থাকলে ভোট-প্রক্রিয়া বাধাহীন থাকে না।

নির্দেশিকায় সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়েরও উল্লেখ করেছে কমিশন। ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, নির্বাচনের কাজে যুক্ত থাকা কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে নিজে থেকে পদক্ষেপ করতে পারবে না রাজ্য সরকার। তেমনই কমিশনের কোনও সুপারিশ অবজ্ঞাও করতে পারবে না তারা। এই নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ডিওপিটি-ও নির্দেশিকা দেয়। এই সব কিছু উল্লেখ করে এ দিন এই নির্দেশিকা দেওয়ায় জল্পনা বেড়েছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন