ভাঙনের ভয় তৃণমূলপন্থী কর্মী সংগঠনে

নবান্নের খবর, কর্মী সংগঠনের অন্দরে প্রবীণ-নবীন এবং প্রাক্তন-বর্তমান নেতাদের মধ্যে বিভাজনও স্পষ্ট হয়েছে।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০৪:০৮
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

কেউ বলছেন, এমন হওয়ারই ছিল। কেউ ব্যস্ত ‘আত্মসমালোচনায়’। কেউ আবার ভোটের ফলকে বলছেন, ‘ছাইচাপা আগুন’! ভোটের ফল বেরনোর পরে এমনই আলোচনা চলছে তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের অন্দরে। এই পাল্টা হাওয়া নিয়ে শঙ্কিত নেতাদের অনেকেই।

Advertisement

একদা সরকারি কর্মীদের বেশির ভাগ বাম-প্রভাবিত রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১১-র পর থেকে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে তৃণমূলপন্থী সংগঠনের প্রভাব বাড়তে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে সংগঠনের একাধিক শাখাকে একত্রিত করে ফেডারেশন এক ছাতার তলায় আসে। কো-অর্ডিনেশন কমিটিতে কিছুটা হলেও ভাঙন ধরাতে সক্ষম হয় ফেডারেশন। কিন্তু মহার্ঘ ভাতা বা বেতন কমিশনের দাবিতে বাম সংগঠনের মতো সরব হতে পারেননি ফেডারেশনের নেতারা। ওই সংগঠনের সদস্যদের অনেকেই বলছেন, নিজেদের সমর্থক তথা সরকারি কর্মীদের প্রশ্ন-উষ্মা সাময়িক ভাবে সামাল দিলেও ইতিবাচক দিশা দেখাতে পারেননি নেতৃত্ব।

লোকসভা ভোটের ফলের পরে সদস্য তথা সরকারি কর্মীদের সংগঠনের পক্ষে ধরা রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ফেডারেশনের নেতৃত্বের একটা বড় অংশের মধ্যে। ফেডারেশনের এক নেতার কথায়, ‘‘আমাদের সমর্থকদের যে আশ্বস্ত করতে পারিনি। দ্বিধাগ্রস্ত কর্মীরা আমাদের সংগঠন থেকে মুখ ফেরালে, তা আমাদের আটকানোর ক্ষমতা নেই। তার ইঙ্গিতও পাচ্ছি।’’

Advertisement

নবান্নের খবর, কর্মী সংগঠনের অন্দরে প্রবীণ-নবীন এবং প্রাক্তন-বর্তমান নেতাদের মধ্যে বিভাজনও স্পষ্ট হয়েছে। অভিজ্ঞদের পিছনে ঠেলে দিয়ে যাঁরা ফেডারেশনের রাশ হাতে নিয়েছেন, তাঁরা কর্মীদের মনোভাব কতটা বুঝতে সক্ষম, এই পরিস্থিতিতে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রবীণ নেতাদের একাংশ। সংগঠনের নেতা তথা মেন্টর গ্রুপের সদস্য মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সংগঠন থেকে মুখ ফেরানোর প্রবণতা নিশ্চয় রয়েছে। কারণ, এত দিন সংগঠন কার্যত পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল। নতুন নেতৃত্বকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু প্রবীণ নেতাদের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মহার্ঘ ভাতা এবং বেতন কমিশন নিয়ে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে যে ভাবে ক্ষোভ বেড়েছে, তা-ও সামাল দেওয়া হয়নি।’’

সম্প্রতি একাধিক সরকারি দফতর থেকে সংগঠন তুলে দেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হলেও ফেডারেশন নেতারা মুখ খোলেননি। এখন সেই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন ফেডারেশনের প্রবীণ-নবীন প্রায় সকল নেতাই। মনোজবাবুর কথায়, ‘‘সংগঠন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না। আশা করব, গোটা বিষয়টা নিয়ে পর্যালোচনা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ফের ঠিক পথে এগোবে ফেডারেশন।’’ আরেক নেতার মতে, ‘‘সংগঠন করার অধিকার কার্যত কেড়ে নেওয়া হল! কর্মীদের কাছে তা ইতিবাচক বার্তা দেয়নি।’’

তবে কো-অর্ডিনেশন কমিটির দাবি, তাদের সংগঠন থেকে সমর্থকেরা আর মুখ ফেরাবেন না। এই তত্ত্বের সমর্থনও মিলেছে বিজেপির সরকারি কর্মচারী পরিষদের তরফে। পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীল বলেন, ‘‘বুথ ফেরত সমীক্ষা বেরনোর পর থেকেই নানান জেলা থেকে সংগঠনে যোগদানের আগ্রহ দেখিয়ে বহু তৃণমূলপন্থী সরকারি কর্মীর ফোন পাচ্ছি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের যোগদানের দিন চূড়ান্ত হবে। তবে কো-অর্ডিনেশন কমিটির কোনও সমর্থকের অনুরোধ এখনও পাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন