তাঁর শেষ কাজের দিন খাদ্য দফতরের কর্মীরা রীতিমতো কান্নাকাটি করেছেন। ধান সংগ্রহ থেকে ডিজিট্যাল রেশন কার্ড— সর্বত্র স্বচ্ছ কাজ করে নানা মহলের মন জিতে নিয়েছিলেন সদ্য বদলি হওয়া খাদ্যসচিব অনিল বর্মা।
বৃহস্পতিবার এই আইএএস অফিসারকে নবান্নে ডেকে পাঠিয়ে বিশেষ পদ তৈরি করে ‘মুখ্যমন্ত্রীর খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা’ নিযুক্ত করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেই তাঁর বসার ব্যবস্থা হচ্ছে। এর সঙ্গে তিনি স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিষয়ক দফতরের সচিবও থাকছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার অনিল বর্মাকে নবান্নে ডেকে পাঠিয়ে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার জন্য বড়সড় উদ্যোগ নিতে বলেন। পাশাপাশি বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার কথাও তাঁকে জানান। দীর্ঘ আলোচনার পরে শেষ পর্যন্ত খাদ্য সুরক্ষা বিষয়ে অনিলের পরামর্শ পেতে তাঁকে নিজের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করার ফাইলে এ দিনই সই করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সিএমও-তে খাদ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত কোনও পদ না থাকায় এই পদ তৈরির জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হবে। নবান্ন সূত্রে খবর, সেই কাজ শেষ করে দু’এক দিনের মধ্যেই সরকারি আদেশনামা বেরোবে।
ধান-চাল সংগ্রহে স্বচ্ছতা আনতে চেয়ে বেশ কিছু নিয়ম চালু করেছিলেন সদ্য প্রাক্তন খাদ্যসচিব অনিল বর্মা। এর মধ্যে অনলাইনে টাকা দেওয়া ও চাষিদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে ধান বিক্রির ব্যবস্থা অন্যতম। কিন্তু আড়তদার, ফড়ে, চালকল মালিকদের মতো মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের একাংশ এ নিয়ে আপত্তি তোলেন। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে দফতরের ৮ সচিবকে মুখ্যমন্ত্রী জেলাগুলিতে পাঠান। তাঁদের অনেকে ফিরে এসে চালকল মালিকদের সুরেই রিপোর্ট দেন নবান্নে। তার জেরে বিরূপ হয়ে অনিলবাবুকে সম্প্রতি স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিষয়ক দফতরের সচিব করে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এই বদলি নিয়ে প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। বুধবার অনিলবাবুর শেষ কাজের দিন খাদ্য দফতরের কর্মীরা তাঁকে বিদায় সম্বর্ধনা জানান। সেখানে অনেকে কান্নাকাটি পর্যন্ত করেন। এর পরে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বর্মাকে নবান্নে ডেকে পাঠিয়ে তাঁকে বাড়তি দায়িত্ব দিতে উদ্যোগী হন।
প্রথমে তাঁকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর কিংবা কৃষি বিপণন দফতরের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কৃষি বিপণন ও খাদ্য, কোনও দফতরের কোনও দায়িত্ব নিতে চাননি অনিলবাবু। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন ‘খাদ্যসাথী’ এবং ডিজিটাল রেশন কার্ড প্রকল্প চালুর অন্যতম হোতা প্রাক্তন এই খাদ্যসচিবকে তিনি নিজের কাছেই রাখবেন। রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষার কাজে খাদ্য দফতর ছাড়াও অন্যান্য কিছু দফতর যুক্ত। সব দফতরের সুষ্ঠু সমন্বয় করে পরিকল্পনার কাজে মুখ্যমন্ত্রীকে সাহায্য করবেন তিনি। অনিলবাবুর সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা আলোচনার পরে এ দিনই সেই নিয়োগ চূড়ান্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।