মমতাকে লেখা চিঠি ছিঁড়লেন অভিজিৎ। — নিজস্ব চিত্র।
অভিজিৎ যে ব্রাত্যের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন না, তা বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরেই ব্রাত্য বলেন, ‘‘উনি নিজেই আমার কাছে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠি জমা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে জানিয়েছেন, তিনি আসবেন না। কসবার ঘটনার প্রতিবাদে আসেননি, এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। শিক্ষা দফতর পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নয়। তা ছাড়া, এখানে এলেন না, কিন্তু এসএসসি দফতরে গেলেন? ওটাও তো সরকারি অফিস!’’
শিক্ষামন্ত্রীর মতে, অভিজিতের না আসার নেপথ্যে ভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর পরেই বিজেপি সাংসদকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘উনি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিতে চাওয়ায় দলীয় রাজনীতিতে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হল কি না, দল ওঁকে বারণ করল কি না, সে সব উনিই বলতে পারবেন।’’
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বুধবারের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য সরকারকেই দুষেছেন অভিজিৎ। মমতাকে লেখা চিঠি ছিঁড়ে ফেলার সময় তিনি বলেন, ‘‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক বানচাল হয়ে গেল। এর জন্য দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর প্রশাসন।’’
বুধবার এসএসসি দফতরে গিয়ে চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলেন অভিজিৎ। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আজকের কথাবার্তার মধ্য দিয়ে আমাদের ধারণা হয়েছে যে, এসএসসি চাইলে ওএমআরের মিরর ইমেজ থেকে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে পারে।’’ অভিজিতের দাবি, এই মর্মে কথা না দিলেও কথোপকথনে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন এসএসসি চেয়ারম্যান। এর পরেই মিরর ইমেজ প্রকাশ্যে আনার জন্য এসএসসিকে দু’দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, শুক্রবারের মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা করে সেই তালিকা বার করতে হবে। অন্যথায় শনিবার বৃহত্তর আন্দোলনের পক্ষে হাঁটবেন তাঁরা।
মমতাকে লেখা চিঠি ছিঁড়লেন অভিজিৎ। — নিজস্ব চিত্র।
বুধবার বিকাশ ভবনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার কথা ছিল অভিজিতের। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা সেই চিঠি ব্রাত্য বসুর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু কসবায় বিক্ষোভরত শিক্ষকদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সেই চিঠি ছিঁড়ে ফেলেন তিনি।
অভিজিৎ জানিয়েছেন, বিক্ষোভরত চাকরিহারাদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে বিকাশ ভবন যাবেন না তিনি। উল্লেখ্য, বুধবার সকালে চাকরিহারাদের একাংশ জড়ো হয়েছিলেন কসবায় স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) অফিসের সামনে। তবে তাঁরা যাতে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারেন, সেই জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। ব্যারিকেডের পাশাপাশি ডিআই অফিসের গেটে তালা লাগানো ছিল। কিন্তু বেলা গড়াতে ওই তালা ভেঙে দফতরের ভিতরে ঢুকে পড়েন চাকরিহারারা।
এসএসসি দফতর থেকে বেরোলেন অভিজিৎ। জানালেন, তিনি বিকাশ ভবন যাবেন না। কসবায় আন্দোলনরত চাকরিহারাদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত।
চাকরিহারাদের সঙ্গে কথা বলার পর মঙ্গলবার দুপুরেই সাংবাদিক বৈঠক করে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে অভিজিৎ বলেন, ‘‘যোগ্যদের চাকরি বাঁচানোর দায় মুখ্যমন্ত্রীরই। তাঁর জন্যই যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা যাচ্ছে না।’’ এ ছাড়াও তাঁর দাবি, এসএসসি চাইলেই যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথক করতে পারে। কিন্তু এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের হাত-পা বেঁধে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক কারণেই যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ্যে আনতে দেওয়া হচ্ছে না। অভিজিতের দাবি, যোগ্যদের তালিকা এখনও বার করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা বলছেন, ওঁরা ওএমআরের হার্ডকপি পুড়িয়ে ফেলেছেন! এ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। তবে যদি সত্যিই তা হয়ে থাকে, তা হলে আসল-নকল বাছাইয়ের উপায় নেই।’’
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আইনি পরামর্শের জন্য মঙ্গলবার দুপুরেই অভিজিতের সঙ্গে দেখা করেছিলেন চাকরিহারাদের একাংশ। দুপুর ৩টে নাগাদ ‘এসএসসি ২০১৬ প্যানেলের বৈধ চাকরিহারা সমাজ’ মঞ্চের তরফে প্রতিনিধিরা অভিজিতের সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকেই অভিজিৎ জানিয়ে দেন, তাঁদের নিয়ে এসএসসি অভিযানে যাবেন তিনি।
কিন্তু মঙ্গলবার গেলেও চেয়ারম্যানের দেখা মেলেনি। পাশাপাশি, সাংসদের সঙ্গীরা অভিযোগ তোলেন, এসএসসির দফতরে তাঁদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করা হয়েছে। দফতর থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনেই গোটা ঘটনাক্রম নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। এ বিষয়ে কৌস্তভ বাগচী বলেন, ‘‘এক জন সাংসদের সঙ্গে এমন ব্যবহার আশা করা যায় না। ওঁকে বলা হল, তাঁরা নাকি এ বিষয়ে শুনতে আগ্রহী নন! আমরা কাল একই দাবি নিয়ে আবার আসব।’’ সেইমতো বুধবার ফের সেখানে গিয়েছেন তাঁরা।
এসএসসি দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে চাকরিহারারা। — নিজস্ব চিত্র।
এসএসসি দফতরের বাইরে অবস্থানে বসলেন চাকরিহারারা। রাস্তার মাঝেই বসে পড়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ প্রকাশ্যে আনতে হবে।
এসএসসি দফতরের ভিতরে গেলেন অভিজিৎ। সঙ্গে ভিতরে গিয়েছেন আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী-সহ আরও কয়েক জন। চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন তাঁরা।
চাকরিহারাদের নিয়ে এসএসসি দফতরে অভিজিৎ। — নিজস্ব চিত্র।
চাকরিহারাদের নিয়ে মঙ্গলবারের পর বুধেও এসএসসি দফতর ‘অভিযানে’ গেলেন প্রাক্তন বিচারপতি তথা বর্তমান বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এসএসসি দফতরে গিয়ে চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে দেখা করবেন তাঁরা।