ডেঙ্গি এবং ‘অজানা’ জ্বরের প্রকোপে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হয়েই চলেছে। এই অবস্থায় ডেঙ্গি দমনে প্রাকৃতিক দাওয়াইকেই ভরসা বলে মেনে নিয়েছেন আমজনতা। সবাই বসে আছেন শীতের অপেক্ষায়। পতঙ্গবিদেরা বলছেন, হেমন্ত গড়িয়ে শীত জাঁকিয়ে পড়লেই মশাদের উৎপাত অনেকটাই কমে যাবে।
কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানাচ্ছেন, শীতের শুকনো আবহাওয়ায় মশাদের ডিম পাড়ার জায়গা কমে যায়, ডিম ফুটে বের হওয়া লার্ভার বৃদ্ধিও স্থগিত হয়ে যায়। তাপমাত্রা যদি ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নেমে যায় তবে ডেঙ্গিবাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা থেকে আর ভয় নেই বলে জানাচ্ছেন দেবাশিসবাবু। কারণ মশার হুল সেই সময় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: মহামারি বলে ঘোষণা করা হোক ডেঙ্গিকে, মামলা অধীরের
কিন্তু শীত পড়বে কবে? গত কয়েকটা দিন ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব ছিল। চামড়ায় টানও ধরছিল। কিন্তু রবিবার থেকে ফের ভ্যাপসা আবহাওয়া ফিরে আসায় মন ভাল নেই বঙ্গবাসীর।
তবে ঠান্ডা পড়া মানেই যে ডেঙ্গি থেকে পুরোপুরি মুক্তি, তা নয়। দেবাশিসবাবু জানাচ্ছেন, বাড়ির ভিতরে অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে জায়গায়, চৌবাচ্চা কিংবা কোনও পাত্রের গায়ে পাড়া মশার ডিম এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। পরিষ্কার জল জমলে সেই ডিম ফুটে নতুন মশা জন্ম নেয়।
আমবাঙালির অবশ্য এত শত তথ্যে মন নেই। তাঁদের একটাই প্রশ্ন, ডেঙ্গি থেকে মুক্তি দিয়ে কড়া ঠান্ডা পড়বে কবে? আবহবিদেরা আপাতত তামিলনাড়ুর বৃষ্টি, বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহ এবং উত্তরভারতে তাপমাত্রা কতটা নামল তার উপরে নজর রাখছেন। তামিলনাড়ুর অতিবৃষ্টির ফলেই দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। দক্ষিণ ভারতে বৃষ্টি কমলে শুকনো আবহাওয়া ফিরে আসবে। উত্তর ভারত থেকে ঠান্ডা হাওয়া আসার পথ প্রশস্ত হবে।
সেই দিনটার অপেক্ষাতেই রয়েছেন বঙ্গবাসী। সোমবারও রাজ্যে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খুকি দেবনাথের মৃত্যু হয়েছে। কলকাতার আইডি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে নিউটাউনের ৪০ বছরের শ্যামল বসুর। দু’জনেরই ডেঙ্গির উপসর্গ ছিল বলে দাবি। কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে মারা গিয়েছেন চন্দননগরের সীমা চৌধুরী এবং চুঁচুড়ার ভগীরথ প্রধান। ডেথ সার্টিফিকেটে সেপটিসেমিয়া এবং মেনিঙ্গেএনসেফ্যালাইটিস বলে লেখা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাইনুর বিবির অবশ্য রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই মৃত্যু হয়েছে।