অতিরিক্ত ওষুধ চিংড়িতে, চাপে রফতানিকারীরা

বিলেত-আমেরিকায় পাঠানোর পর ভারতের ফল-আনাজপাতি বহু সময়ে দেশে ফেরত এসেছে। বিপজ্জনক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মেলায়। এ বার পশ্চিমবঙ্গে চাষ হওয়া ভ্যানামেই চিংড়ি আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইউরোপের নানা দেশ, আমেরিকা ও ভিয়েতনাম।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৭ ০৪:০৭
Share:

বিলেত-আমেরিকায় পাঠানোর পর ভারতের ফল-আনাজপাতি বহু সময়ে দেশে ফেরত এসেছে। বিপজ্জনক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মেলায়। এ বার পশ্চিমবঙ্গে চাষ হওয়া ভ্যানামেই চিংড়ি আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইউরোপের নানা দেশ, আমেরিকা ও ভিয়েতনাম। তাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা চিংড়িতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ধরা পড়েছে। রাজ্যের ভ্যানামেই চিংড়ি রফতানিকারক সংস্থাগুলিকে ওই সব দেশ সম্প্রতি জানিয়েছে, ফের অ্যান্টিবায়োটিক ধরা পড়লে সমস্ত বরাত বাতিল করে দেওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে চিংড়ি ‌আমদানি করা হবে না।

Advertisement

এখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদেশের বাজারে বছরে প্রায় ৫০ হাজার টন ভ্যানামেই চিংড়ি রফতানি হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা। রফতানির বরাত বাতিল হলে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়বেন এই রাজ্যের মৎস্যচাষি ও ব্যবসায়ীরা। মৎস্যবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ফ্যাকাসে ভ্যানামেই চিংড়ি বাগদা চিংড়ির তুলনায় স্বাস্থ্যবান। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির চিংড়ি চাষি অ্যান্টিবায়োটিক অকারণে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। রোগ ধরার আগেই অনর্থক রক্ষাকবচ হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। সেই চিংড়ি পেয়েই ক্ষুব্ধ আমদানিকারক সংস্থাগুলি। কারণ, অন্য দেশ থেকে ওই সব দেশে খাদ্যদ্রব্য রফতানির প্রথম ও প্রধান শর্ত, মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষা। আর এখানেই ধাক্কা খেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাঠানো ভ্যানামেই চিংড়ি। আমদানিকারক সংস্থাগুলি জানিয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া চিংড়ি পাঠাতে হবে। মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি উদ্বেগের। জানার পর অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু হয়েছে।’’

দেশের সমুদ্রপণ্য রফতানিকারক সমিতির পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিংড়ি চাষিদের এখনই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে। যিনি করবেন, তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ না করলে রাজ্যের চিংড়ি রফতানি বন্ধ হয়ে যাবে।’’

Advertisement

সম্প্রতি কেন্দ্রের ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর এক প্রতিনিধি দল সমীক্ষা চালিয়ে দেখে, পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যচাষিদের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। রাজ্য সরকারের কাছে রফতানিকারক সংস্থাগুলির দাবি, মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হোক।

গত কয়েক বছর ধরে প্রচুর ভ্যানামেই চিংড়ির চাষ হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে। সম্প্রতি মৎস্য দফতরের উদ্যোগে কাঁথির মৎস্যমেলায় রফতানিকারক সংস্থাগুলি অ্যান্টিবায়োটিকের বিপদ ও তার ফলে আর্থিক ক্ষতির কথা চাষিদের জানিয়ে এসেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন