ডাক্তার তৈরির ভুয়ো কলেজ জগাছায়

চিকিৎসক তৈরির এমনই ভুয়ো মেডিক্যাল কলেজের সন্ধান মিলল হাওড়ার জগাছায় জিআইপি কলোনির তস্য গলির ভিতরে এক চারতলা বাড়িতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ০৪:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

চারতলা বাড়ির নীচে একটা ছোট কোলাপসিবল গেট। আকারে ছোট হলেও এর ব্যাপ্তি অনেক। কারণ এই গেট দিয়েই বেরিয়েছেন ১৫ হাজার চিকিৎসক! সকলেই ভুয়ো।

Advertisement

চিকিৎসক তৈরির এমনই ভুয়ো মেডিক্যাল কলেজের সন্ধান মিলল হাওড়ার জগাছায় জিআইপি কলোনির তস্য গলির ভিতরে এক চারতলা বাড়িতে। একতলায় চলত মেডিক্যাল কলেজ। বাকি তিনতলা জুড়ে সপরিবার থাকেন কলেজের মালিক। বাড়িটিতে মঙ্গলবার রাতভর তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ উদ্ধার করেছে ডাক্তারি ডিগ্রির বিভিন্ন ভুয়ো সার্টিফিকেট-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি। গ্রেফতার করেছে বাড়ির মালিক অমল খাটুয়াকে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, তিনি কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালের এক জন ইসিজি টেকনিসিয়ান। তাঁর বাড়িতে ১৯৭৪ সাল থেকে চলছে এই ভুয়ো মেডিক্যাল কলেজ। ১৫ হাজার বা তারও বেশি জাল সার্টিফিকেট বেরিয়েছে এখান থেকে। সেই সার্টিফিকেট নিয়ে এ রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের বহু ব্যক্তি ডাক্তারি করছেন।

কয়েক সপ্তাহ আগে বাউড়িয়ার জাল চিকিৎসক রমাশঙ্কর সিংহ ধরা পড়ার পরে এই মেডিক্যাল কলেজের নাম জানা যায়। রামশঙ্করের সার্টিফিকেটে ওই কলেজের নাম ছিল। পুলিশ জানায়, ‘হাওড়া সেন্ট্রাল ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ’ নামে ওই ভুয়ো কলেজের ঠিকানা দেওয়া ছিল শঙ্করমঠ রামরাজাতলা, হাওড়া-৪। তদন্তকারীরা জানান, সেই ঠিকানা ধরে প্রথমে অনুসন্ধান করে জানা যায়, ওই ধরনের একটি কলেজ আগে শঙ্করমঠের একটি বাড়িতে ছিল। কিন্তু সেটি অনেক বছর আগে উঠে গিয়েছে। কিন্তু কোথায় গিয়েছে কেউ জানে না।

Advertisement

জগাছা থানার পুলিশ অবশেষে জিআইপি কলোনিতে ওই মেডিক্যাল কলেজের সন্ধান পায়। জানা যায়, এক মাসে আগে এই নিয়ে নড়াচড়া হওয়ার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কলেজটি। এই তথ্য জানার পরই মঙ্গলবার রাতে এসিপি (পশ্চিম) গুলাম সরোয়ারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ওই বাড়িতে হানা দেয়। তিনি বলেন, ‘‘এই ভুয়ো মেডিক্যাল কলেজটি চলছিল রাজ্য সরকারের সোসাইটি অ্যাক্টের একটি সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে। যা দিয়ে একটি মেডিক্যাল কলেজ চালানো যায় না। এই ঘটনার শিকড় আরও গভীরে। আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, খাটুয়া পরিবারটি কারও সঙ্গে মেলামেশা করত না। পুলিশ জানতে পেরেছে, এই পরিবারের আদি বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায়। সেখানে তাঁদের কয়েকটি হোটেলও রয়েছে। এই মেডিক্যাল কলেজ খোলার আগে ‘নিরাময় ফিজিওথেরাপি’ নামে একটি সেন্টার চালাতেন ধৃতের বাবা ক্ষিতীশ খাটুয়া। তিনি ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক জন কর্মী। পুলিশ জানায়, মূলত তাঁর হাতেই তৈরি হয় ওই হাওড়া সেন্ট্রাল ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ। ওই মেডিক্যাল কলেজে রেজিস্টার্ড মেডিক্যাল প্রাকটিশনার্স, ফিজিওফেরাপি, হোমিওপ্যাথির বিএইচএমএস, নার্সিংয়ের এড পড়ানো হতো এবং সার্টিফিকেট দেওয়া হতো। সাড়ে তিন বছরের কোর্সের জন্য মাসে সাড়ে ৬ হাজার টাকা নিত কলেজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন