Death

ছেলে আসবে না আর

বিপুলের মৃত্যুর খবরে বাড়ির উঠোনে উপচে পড়ছিল গোটা গ্রাম।

Advertisement

রাজু সাহা

বিন্দিপাড়া শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৮:১৯
Share:

শোকার্ত: নিহত জওয়ানের দিদি সুজাতা রায়। ছবি: নারায়ণ দে

‘‘খুব মিশুকে ছিল ছেলেটা। বাড়ি এলেই খোঁজ নিত সবার,’’ বলছিলেন কল্যাণী রায়। টটপাড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। সম্পর্কে বিপুল রায়ের কাকিমা।

Advertisement

বিপুলের মৃত্যুর খবরে বাড়ির উঠোনে উপচে পড়ছিল গোটা গ্রাম। সকলের মুখে একই কথা, ছেলেটা বড় ভাল ছিল গো!

কাছেই থাকেন রথীন রায়। বলছিলেন, ‘‘পড়াশোনাতেও বিপুল ভালই ছিল। ভাটিবাড়ি হাইস্কুল থেকে ২০০২ সালে মাধ্যমিক পাশ করে। ওখানেই একাদশ শ্রেণিতে পড়ছিল। তার মধ্যে ২০০৩ সালে চাকরি পেয়ে যায়।’’ চোখ মুছে আবার বললেন, ‘‘গ্রামটাকে খুব ভালবাসত। বলেছিল, অবসর নিয়ে গ্রামেই চলে আসব। জমিও কিনেছিল কিছুটা। আর তো ফেরা হল না তার!’’

Advertisement

উঠোনে সকাল থেকেই বসে বিজেপির জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা এবং আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। বিপুলের বাবা নীরেন রায়কে দু’জনই দু’পাশ থেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। তৃণমূল নেতা মোহন শর্মা, দলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী থেকে শুরু করে আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মীনা, সকলেই হাজির হয়েছেন কোনও না কোনও সময়।

এখানেই সৌরভ জানান, বৃহস্পতিবার বিপুলের দেহ আসবে সেনা কপ্টারে। মেরঠ থেকে তাঁর স্ত্রী রুম্পা ও কন্যাকেও আলিপুরদুয়ারের এই বিন্দিপাড়া গ্রামে নিয়ে আসবে সেনাবাহিনী। শুনে কেঁদে ওঠেন দিদি সুজাতা। কাছেই বিয়ে হয়েছে তাঁর। তিনি ও তাঁর স্বামী তরণীকান্ত দাস হাজির ছিলেন সারাদিন। তরণীবাবু জানান, বিপুলের মা কুসুমবালা মানসিক ভাবে সুস্থ নন। তাই তাঁকে ছেলে বিয়োগের কথা জানানোই হয়নি। বিপুলের ছোট ভাই ভুটানে চাকরি করেন। সকলেরই চোখে জল।

বিপুলের বাবা নীরেনবাবু কখনও চুপ করে বসেছিলেন। পিঠে হাত দিয়ে ডাকেন সৌরভ। চমকে তাকান সে দিকে। তখন এগিয়ে এসে নীরেনবাবুর হাত চেপে ধরেন গঙ্গাপ্রসাদ। পরে দু’জনেই জানান, সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও তাঁদের ছিল না। যে ছেলে আট মাস পরে অবসর নিয়ে গ্রামে ফিরে আসবে ভেবেছিল, বাবার সুখ-দুঃখে থেকে গ্রামের পাঁচজনকে নিয়ে চলতে চেয়েছিল, তার মৃত্যুতে গ্রাম তো ভেঙে পড়বেই, বলছিলেন এক পড়শিও।

নীরেনের চোখের জল শুকিয়ে এসেছে। এত লোকের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, ‘‘এর পর তো সবাই চলে যাবে। আমরা আবার একা হয়ে যাব। তখন কী হবে!’’ ঘরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলেন, ‘‘বিপুল তো আর ফিরে আসবে না এই ঘরে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন