Death

বলেছিল রাতে ফোন করবে, বলছেন বাবা

চার জনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পূর্ব তালসুর গ্রাম। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও মৃতদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেকেই অভাবী পরিবারের সন্তান।

Advertisement

বাপি মজুমদার 

হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৩
Share:

হরিশ্চন্দ্রপুরে আলমগীরের পরিবার। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।

করোনার ভয়ে বেঙ্গালুরুতে আর কাজ করতে যেতে চাননি ওঁরা। বদলে চলে গিয়েছিলেন কলকাতায়, জীবিকার সন্ধানে। বৃহস্পতিবার সকালেও মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে পূর্ব তালসুর গ্রামের বাড়িতে বাবাকে ফোন করে কথা বলেছিলেন আলমগীর হোসেন, লিয়াকত আলি। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটে যায় অঘটন। কলকাতার পূর্ব পুটিয়ারিতে নর্দমায় কাজ করার সময়ে নর্দমার বিষাক্ত গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন সাত শ্রমিক। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও মারা যান আলমগীর হোসেন (২৮), লিয়াকত আলি (২২) এবং আলমগীরের আরও দুই ভাই জাহাঙ্গির আলম (২৬) ও সাবির আলি (২৪)।

Advertisement

চার জনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পূর্ব তালসুর গ্রাম। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও মৃতদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেকেই অভাবী পরিবারের সন্তান। দীর্ঘদিন ধরে ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। লকডাউনের আগে বেঙ্গালুরুতে ছিলেন। তার আগে কেরলে। লকডাউন শুরু হতেই বাড়ি ফেরেন তাঁরা। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে ডিসেম্বর মাসে তাঁরা কাজের খোঁজে কলকাতায় যান। পরিবার সূত্রে বলা হচ্ছে, এক সময় তাঁরা কলকাতাতেই কাজ করতেন। সেই কাজের খোঁজে তিন ভাই ফের কলকাতা যান। তাঁদের সঙ্গী হন প্রতিবেশী লিয়াকত।

পরিবার সূত্রে বলা হচ্ছে, ছেলেরা জানিয়েছিলেন, পাইপলাইনের কাজ করেন সেখানে। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার পূর্ব পুটিয়ারিতে একটি ক্লাবের কাছে নর্দমার আবর্জনা সাফাই করার কাজ করার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। নর্দমায় নামার আগে নিয়মমতো মুখোশ থাকার কথা। কিন্তু সেটা তাঁদের কারও ছিল না বলেই পরিবারের লোকেরা জানতে পেরেছেন।

Advertisement

পূর্ব তালসুরের বাসিন্দা দিনমজুর তোরাব আলির তিন ছেলেই মারা গিয়েছেন। বিকেলে বাড়িতে বসে সেই দুঃসংবাদের অভিঘাত সামলানোর চেষ্টা করছিলেন তোরাব। বলছিলেন, ‘‘সকালেই তো ফোন করে আলমগীর সকলের খোঁজ নিল। জানাল, ওরা ভাল আছে। রাতে বউকে ফোন করবে বলেও জানিয়েছিল। তার কিছু ক্ষণের মধ্যে যে সব শেষ হয়ে যাবে, বুঝতেই পারিনি।’’ লিয়াকতের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। বাবা ও দাদাও ভিন্ রাজ্যে গিয়েছেন কাজের খোঁজে। লিয়াকতের মা জাইবুর বিবি কোনও রকমে বলেন, ‘‘সকালে স্ত্রীর শরীর কেমন আছে, খোঁজ নিয়েছিল। ছেলেটা যে এ ভাবে অকালে হারিয়ে যাবে, ভাবতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন