কালো, আমিনও দেশদ্রোহী! মন মানছে না অফিসপাড়ার

‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া মুসার সঙ্গে কি না তাঁদের পরিবারের দুই ছেলের যোগ রয়েছে— মানতেই পারছেন না বাবা-মায়েরা।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

লাভপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০১:৫১
Share:

জঙ্গি সন্দেহে ধৃত আমিন শেখের মা মর্জিনা বিবি (বাঁ দিকে), আর এক ধৃত কালো শেখ-এর বাড়ি (ইনসেটে)। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া মুসার সঙ্গে কি না তাঁদের পরিবারের দুই ছেলের যোগ রয়েছে— মানতেই পারছেন না বাবা-মায়েরা। বুধবার আমিন শেখ ওরফে শেখ আব্বাসউদ্দিন এবং সাদ্দাম হোসেন ওরফে কালোর গ্রেফতারের খবর প্রকাশ্যে আসতে কোনও পরিবারই মুসার সঙ্গে তাঁদের ছেলের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে বলে মানতে চায়নি। তবে জানিয়ে দিয়েছে, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি হোক।

Advertisement

আগের দিন লাভপুর ব্লক অফিস লাগোয়া রেজিস্ট্রি অফিসপাড়ার জটলা ‘মুসা’কে নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি। ‘চিনি’, ‘পাড়াতেই বাড়ি’—দায়সারা ভাবে এটুকু বলেই জবাব এড়িয়েছিলেন সকলে। বুধবার মুসার সহযোগী সন্দেহে এলাকারই দুই যুবকের গ্রেফতার হওয়ার খবর শুনে সেই জটলাই একসুরে বলছে, ‘‘নাহ্‌, ওদের মধ্যে কখনও তো কোনও বেচাল দেখিনি!’’

সিআইডি সূত্রের খবর, রবিবার আমোদপুর স্টেশনে মহম্মদ মুসাউদ্দিন ওরফে শেখ মসিউদ্দিন মিয়াঁ ওরফে মুসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বছর বাইশের আমিন এবং কালো। দু’জনেরই বাড়িই রেজিস্ট্রি অফিসপাড়ায়। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এঁদের পরিচয় জানাতে চায়নি সিআইডি। বুধবার সিআইডি সূত্রেই জানা গিয়েছে, দুই যুবককে সোমবার রাত থেকে নজরবন্দি করেছিল পুলিশ। এই নিয়ে আইএস যোগে রাজ্যের মোট পাঁচ জনকে ২০১৪-র ডিসেম্বর থেকে গ্রেফতার করা হল।

Advertisement

বুধবার তাঁদের গ্রেফতারের পর বিকেলে ভবানীভবনে আনা হয়। সেখানে মুসার সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করেন গোয়েন্দারা। মুসার মতো তাঁদের বিরুদ্ধেও দেশদ্রোহের মামলা রুজু করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। সিআইডি-র ডিআইজি (অপারেশনস) দিলীপ আদক দাবি করেছেন, মুসার সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল সাদ্দাম ও আমিনের।

গোয়েন্দাদের দাবি, মুসার দায়িত্ব ছিল, তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় তৈরি হওয়া জঙ্গি মডিউলের জন্য জেহাদি নিয়োগ করা। সেই কাজের জন্য দীর্ঘ দিন বাদে এ রাজ্যে মুসা এসেছিল বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। তাঁদের মনে হচ্ছে, সাদ্দাম ও আমিনকে মুসা আইএসের মডিউলেই নিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল। তবে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ক’জন যুবককে আইএসের কাজে লাগানো হয়েছে, গোয়েন্দারা সেটা খতিয়ে দেখছেন।

এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ আমিন শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল প্রতিবেশীরা ভিড় করে রয়েছেন। চলছে ফিসফাস।

অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেল, দু’জনেই ভাল ছেলে বলে এলাকায় পরিচিত। দু’জনের বন্ধুত্বের কথাও জানিয়েছেন উপস্থিত লোকজন। প্লাস্টারহীন একতলা বাড়ির সামনেই রাখা টিউবওয়েল বসানোর সরঞ্জাম। আমিনের বাবা শেখ আবসার কলমিস্ত্রি। আমিনও কল বসানোর কাজ করে। স্থানীয় হাই মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে আমিন। তিন ভাই এক বোন। আমিন বড়। বাকি দুই ভাইও রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বছর চারেক আগে বিয়ে হয়েছে আমিনেরও। বছর তিনেকের একটি মেয়ে রয়েছে তার।

আমিনের বাবা বাড়ি ছিলেন না। তাঁর মা মর্জিনা বিবি ছেলের গ্রেফতারির খবরে বিষ্মিত। সে প্রসঙ্গ তুলতেই ধরা গলায় বললেন, ‘‘আমার ছেলে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া কোনও যুবকের বন্ধু হতে পারে সেটা বিশ্বাসই করতে পারছি না।’’ একটু থেমে যোগ করলেন, ‘‘আসলে মুসার সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল কালোর। আর কালোর সঙ্গে মেলামেশা ছিল আমার ছেলের। সেই সুবাদে মুসাকে আনতে যাবে বলে কালোই আমার ছেলেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়।’’

কালোর পরিজনেরা সে কথা মানতে চাননি। এ দিন বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল, তখন টিভিতে নজর কালোর বাবা মইনুদ্দিন শেখের। এক সময় কলকাতায় ব্যবসা ছিল তাঁর। এখন মেটিয়াবুরুজে পোশাক প্যাকিং এর কাজ করেন। তাঁর চার ছেলে, দুই মেয়ে। বড় তাজ মহম্মদ কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল। মেজো সাইন শেখও মেটিয়াবুরুজে পোশাক তৈরির কাজ করেন। কালো লাভপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছোট আফতাবউদ্দিন সেকেন্দ্রাবাদে সামরিক কর্মী হিসাবে কর্মরত।

বাড়িতে বসে মইনুদ্দিন দাবি করেন, ‘‘মুসার সঙ্গে আমার ছেলের সম্পর্কই ছিল না। আমিনই মুসাকে আনতে যাবে বলে কালোকে ফোনে ডেকে মোটরবাইকে চাপিয়ে আমোদপুরের দিকে নিয়ে যায়।’’ তবে, একটি ব্যাপারে একসুর দু’টি পরিবারই। অভিযোগের যথাযথ তদন্ত দাবি করেছেন তাঁরা। তাতে বাড়ির ছেলেদের দোষ প্রমাণিত হলে শাস্তি চান তাঁরা। আগের দিন ঠিক এমনটাই বলেছিলেন মুসার বাবা নাসিমউদ্দিন মিয়াঁও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন