পুজোর বইয়ে নেই, তবু বইয়েই বেঁচে বুদ্ধ

বাইরে দৃশ্যমান হওয়ার প্রশ্নই নেই। দলের সদর দফতরে সামনের টেবিলে স্তূপ হয়ে আছে বই আর পত্রিকা। বেছে বেছে কিছু লেখা পড়ছেন। পায়ের কাছে পোর্টেবল সিলিন্ডার। দমে টান পড়লে যখন তখন দরকার হতে পারে অক্সিজেন। শেষ জীবনে বলিউডের অভিনেতা মাহমুদকে যেমন অক্সিজেনের স্বচ্ছ নলের সঙ্গে দেখা যেত, অনেকটা সেই রকম।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০৭
Share:

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।

বর্তমানের ফুরসত নেই দম ফেলার। এক মণ্ডপ থেকে আর এক মণ্ডপে চলছে পুজো উদ্বোধন। প্রাক্তনের দম নিতেই সমস্যা।

Advertisement

বাইরে দৃশ্যমান হওয়ার প্রশ্নই নেই। দলের সদর দফতরে সামনের টেবিলে স্তূপ হয়ে আছে বই আর পত্রিকা। বেছে বেছে কিছু লেখা পড়ছেন। পায়ের কাছে পোর্টেবল সিলিন্ডার। দমে টান পড়লে যখন তখন দরকার হতে পারে অক্সিজেন। শেষ জীবনে বলিউডের অভিনেতা মাহমুদকে যেমন অক্সিজেনের স্বচ্ছ নলের সঙ্গে দেখা যেত, অনেকটা সেই রকম। টানা কথা বলতে অস্বস্তি স্পষ্ট।

আরও পড়ুন: করে খাচ্ছে সিপিএম, ঘরছাড়া তৃণমূলই!

Advertisement

এ বার তা হলে পুজোয় লিখলেন না কোথাও? আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে যে তিনটি পূজাবার্ষিকী সংখ্যা বেরোয়, তার একটারও লেখক তালিকায় তাঁর নাম নেই তো! ‘‘নাহ্! লিখলাম না। প্রতি বার কি আর লিখতে হবে?’’ হেসেই জবাব দিচ্ছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মাত্র গত বছরই যাঁর ‘ফিরে দেখা’র দ্বিতীয় ভাগ পুজোর ক’দিনে পুজো প্যান্ডেলের স্টল থেকে নিঃশেষিত হয়েছিল! এখনও তিনি মুখ খুললে খবর, লিখলে বাজার টানটান। তবু তিনি, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, এ সবে অদ্ভুত নিস্পৃহ!

ধুলোয় অসুবিধা প্রবল। সেই সঙ্গে রাজনীতির প্রত্যক্ষ দুনিয়ায় থাকতে অনীহা। পরবর্তী স্তরের নেতৃত্বের হাতে সব ভার তুলে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেই আরও বেশি করে আজকাল দলীয় মিটিং-মিছিলে মুখ দেখাতে যান না। শেষ পূর্ণাঙ্গ সাংবাদিক সম্মেলন বলতেও সেই ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কলকাতা প্রেস ক্লাবের ‘মিট দ্য প্রেস’! আলিমুদ্দিনের চার দেওয়ালের মধ্যে অবশ্য এখনও যথেষ্ট সক্রিয়। এই ক’দিন আগেই তিন তালাক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রশ্নে দলের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়িয়ে দিতে স্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছিলেন। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে নিয়মিত থাকেন, পরামর্শ দেন। দলের বিভিন্ন প্রকাশনার কাজ দেখভালও করেন।

কিন্তু সে সবই অন্তরালে। বহির্জগতের সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ইদানীং কালের যোগাযোগের মাধ্যম বলতে ছিল তাঁর কলম। এই পুজোর মরসুমে সেটাও নেই! সিপিএমের মুখপত্রের পুজোসংখ্যার সম্পাদক তথা রাজ্য কমিটির সদস্য অভীক দত্ত বলছেন, ‘‘এখানে যে তিনটে সংখ্যা বেরোয়, তার কোনওটাতেই এ বার লেখেননি বুদ্ধদা। লিখতে চাননি।’’ তা হলে কি লেখালেখি থেকেও অব্যাহতি নিয়ে ফেললেন?

আবার স্মিত হাসছেন বুদ্ধবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘লেখালেখি একেবারে বন্ধ করছি না। একটা কাজ করছি। হয়ে যাক, তার পরে জানতে পারবেন সবাই!’’ গত বারের ‘ফিরে দেখা’তেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের ইনিংসের উপরে লেখা হয়ে গিয়েছে। এ বার তা হলে কি আত্মজীবনী হতে পারে? ভাঙছেন না গ্যাব্রিয়েল মার্কেজের ভক্ত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘নিজেকে নিয়েই সব সময় ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই! একটু বড় করে ভাবছি।’’

বড় করে ভাবছেন বলেই হালফিল টালিগঞ্জের দু’টি ছবিতে তাঁর ভূমিকার কথা, তাঁর ছায়ায় চরিত্র থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। সেই দু’টি ছবির মধ্যে একটির পরিচালক আবার এক কালে তাঁর পরিচিতই ছিলেন। ঘনিষ্ঠ মহলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শুধু বলে রেখেছেন, ব্যাপারগুলো জানলেও এ সব নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর কোনও ইচ্ছা তাঁর হয়নি।

বড় করে ভাবনার বহিঃপ্রকাশের জন্যই আপাতত অপেক্ষা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন