লালগড়ে ধরা পড়ে এই হানাদার। ফাইল চিত্র।
বিডিও-র বাঁশি পারেনি, পুলিশের টর্চ ফেল, পারেনি হোর্ডিং-পোস্টার থেকে টিভি-সিনেমার প্রচার। দাঁতালের দাপাদাপিতেও হুঁশ ফেরেনি। আপাতত সবাইকে টেক্কা দিয়েছে একা এক বাঘ।
মাত্র একবার তার ডোরাকাটা শরীরটার ছবি ক্যামেরা-বন্দি হয়েছে।
তাতেই কেল্লাফতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গললাগোয়া গ্রামের মানুষ বাঘের ভয়ে আপাতত ঝোপে শৌচকর্মে যাচ্ছেন না। ঠেলায় পড়ে বহু দিনের অভ্যাস পাল্টেছেন তাঁরা। লালগড় থেকে শালবনি, চাঁদড়া থেকে মুড়াকাটা— সর্বত্র এক ছবি।
লালগড় লাগোয়া শালবনির লক্ষ্মণপুরে বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছে। এই জঙ্গলে খাঁচাও পেতেছে বন দফতর। জঙ্গল ঘেঁষা লক্ষ্মণপুরে বাড়ি সরস্বতী মাহাতোর। এতদিনে শৌচাগার ব্যবহার করছেন তিনি। বাঘের ভয়েই তবে ঝোপে যাওয়া ছাড়লেন? লাজুক হেসে সরস্বতীদেবীর জবাব, ‘‘ছোটবেলার অভ্যাস তো! তবে বাঘের ভয় বড় ভয়। এখন আর বাড়ির বাইরে যাচ্ছি না।”
স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য সনৎ মাহাতো মানছেন, “বাঘের ভয়ে এই একটা লাভ হয়েছে। এতদিন বুঝিয়ে-সুঝিয়েও যাঁদের শৌচাগার ব্যবহার করানো যাচ্ছিল না, এখন তাঁরা নিজে থেকেই শৌচাগার ব্যবহার করছেন।” গুড়গুড়িপালের তপন তুঙ্গ বলছিলেন, “জঙ্গলে বাঘ ঘুরছে। তার পরে কোন সাহসে কেউ খোলা জায়গায় যাবে!” বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছিল মেদিনীপুর সদর ব্লকের মুচিবেড়ায়। সেখানকার উপপ্রধান অঞ্জন বেরারও স্বীকারোক্তি, “জঙ্গলে বাঘ আসার পরে অনেকেই শৌচাগার ব্যবহার শুরু করেছেন।”
কেন্দ্রের স্বচ্ছ ভারত মিশন আর রাজ্যের মিশন নির্মল বাংলায় কম প্রচার হয়নি। ২০১৪ সালের অক্টোবরে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরে। তারপর থেকে বছর বছর শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। গাঁ-গঞ্জে শৌচাগার তৈরিও হয়েছে। কিন্তু ব্যবহারে ঘাটতি থেকে গিয়েছে। বহু বাড়িতে প্যান উঠোনে পড়ে নষ্ট হয়েছে। জলে গিয়েছে টাকা।
অথচ নির্মল বাংলা নিয়ে কম প্রচার হয়নি জঙ্গলমহলের ব্লকগুলোয়। আকাশ ফরসা না হতেই হাতে মুখে বাঁশি নিয়ে নজরদারিতে নেমেছেন বিডিও। ঝোপের আড়ালে কাউকে বসতে দেখলেই তেড়েফুঁড়ে বাঁশি বাজিয়েছেন, পুলিশ ফেলেছে টর্চের আলো। খোলা জায়গায় শৌচকর্মে পরিবেশ দূষণ, রোগের আশঙ্কা শিবির করে বোঝানো হয়েছে।
এমনকী হাতির হানায় মৃত্যু রুখতে জঙ্গলে শৌচকর্মে যেতে নিষেধ করেছে বন দফতর। কিন্তু হুঁশ ফেরেনি।
বাঘের আবির্ভাবে রাতারাতি ছবিটা পাল্টেছে। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলছিলেন, “যতদিন না বাঘ ধরা পড়ছে, ততদিন গ্রামবাসীকে জঙ্গলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। গ্রামবাসী সহযোগিতাও করছেন।” রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারই কি তবে মিশন নির্মল বাংলায় গতি আনছে? জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতির জবাব, “মানুষ সচেতন হচ্ছেন। এটাই বড় কথা।”