West Bengal News

তেজ উধাও, দেখা মেলাও ভার, জল্পনায় মান্নান

সাম্প্রতিক একের পর এক ঘটনায় বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকে নিয়ে প্রবল জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। চাঁপদানির বিধায়ক মান্নানের তৃণমূল-বিরোধিতা সুবিদিত। এমন ‘জেহাদি’ মান্নানের হঠাৎ সুর নরম কেন? জল্পনা তা নিয়েই।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ১৫:৫৬
Share:

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

গোটা একটা অধিবেশন চলে গেল। তিনি বিধানসভায় নেই। সাকুল্যে থাকলেন এক দিন। তা-ও সাম্প্রদায়িকতার উপরে প্রস্তাব নিয়ে সাদামাঠা বক্তৃতা।

Advertisement

ঘন ঘন তিনি পাড়ি দিচ্ছেন দিল্লি। কখনও বলছেন, হাইকম্যান্ডের নেতাদের সঙ্গে দেখা করার কর্মসূচি আছে। কখনও বলছেন, সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব অহমেদ পটেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে থাকতে চেয়েছিলেন।

বিধানসভার অধিবেশন এড়াবেন বলে প্রবীণ প্রাক্তন বিধায়ক জ্ঞানসিংহ (চাচা) সোহনপালের মরদেহ নিয়ে শেষযাত্রা এবং অন্ত্যেষ্টির জন্য পাক্কা দু’দিন কাটিয়ে দিলেন খড়্গপুরে! তালাক মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে শাসক দল চুপ। তাঁর ‘বন্ধু’ সিপিএমের নেতারা ওই নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। কিন্তু জিজ্ঞাসা করা হলেও তিনি মন্তব্যে নারাজ। বরং ধর্মীয় অধিকারে আদালতের হস্তক্ষেপ কাম্য নয় বলে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মতোই মনে করছেন!

Advertisement

সাম্প্রতিক এই একের পর এক ঘটনায় বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকে নিয়ে প্রবল জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। চাঁপদানির বিধায়ক মান্নানের তৃণমূল-বিরোধিতা সুবিদিত। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের দুঁদে আইনজীবী নেতারা যখন মামলা লড়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছেন, তখন সিপিএমের আইনজীবী-নেতা বিকাশ ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে সারদা মামলায় লড়ে গিয়েছেন মান্নানই। সেই মামলায় সর্বোচ্চ আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কংগ্রেস ছেড়ে ‘দলবদলু’ হয়ে যাওয়া বিধায়কদের শাসক দল ইস্তফা দিতে না বলায় স্পিকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তাতে শুধুই সময় বয়ে যাচ্ছে দেখে সটান চলে গিয়েছেন আদালতে। এমন ‘জেহাদি’ মান্নানের হঠাৎ সুর নরম কেন?

এ ছবি এখন বেশ বিরল। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্য নেতাদের সঙ্গে অনেক দিনই এক ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে না বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানকে। —ফাইল চিত্র।

ঘটনা যে, রাজ্যসভার নির্বাচনকে ঘিরে ব্যক্তিগত ভাবে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন মান্নান। সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতার তিনি প্রবল প্রবক্তা। সীতারাম ইয়েচুরির জন্য অপেক্ষা করে রাজ্যসভায় তাঁরা যেন প্রার্থী না দেন, অধীর চৌধুরীর সঙ্গে এআইসিসি নেতাদের তা বুঝিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতাই। কিন্তু সিপিএম শেষমেশ কংগ্রেসের হাত ধরতে রাজি হল না। শেষবেলায় কংগ্রেস প্রার্থী করল বিদায়ী সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যকেই। সিপিএম আবার মনোনয়ন দেওয়াল বিকাশবাবুকে। রাজ্যসভায় ‘বন্ধু’ বিকাশের বিরুদ্ধে দলীয় বিধায়কদের ভোট দেওয়ার নির্দেশ দিতে প্রবল বিবেকের তাড়নায় ভুগছিলেন মান্নান। বিকাশবাবুর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ায় সে যাত্রায় ঘোর অস্বস্তি থেকে রক্ষা পান তিনি। কিন্তু রাজনীতির চলতি ধারার সঙ্গে তাঁর মানিয়ে নিতে না পারার বাস্তব তখন থেকেই স্পষ্ট।

আরও পড়ুন: রাশ ধরুন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের, পার্থকে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

বিজেপি-কে রোখার তাগিদে সনিয়া-রাহুল গাঁধীরা এখন জাতীয় স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে চলছেন। অথচ রাজ্য রাজনীতিতে মান্নান তৃণমূল-বিরোধিতার সুর নামাতে রাজি নন। দিল্লির নেতাদের সঙ্গে তিনি দফায় দফায় দেখা করে যুক্তি দিয়েছেন, কংগ্রেস যদি তৃণমূলের সঙ্গে আপস করে, তা হলে নিচুতলার কর্মীরা এ বার বিজেপি-তে চলে যাবেন। আর কিছু সুযোগসন্ধানী নেতা ভিড়ে যাবেন তৃণমূলে। মাঝখান থেকে কংগ্রেসের যে টুকু অস্তিত্ব আছে, তা-ও বিপন্ন হবে। আর তিনি কী করবেন? ঘনিষ্ঠ মহলে মান্নান বলে রেখেছেন, ‘‘আমি তৃণমূলে যেতে পারব না। আমি ধর্মে মুসলিম, রাজনীতিতে কংগ্রেস। তেমন হলে সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে বসে যাব বাড়িতে!’’

আরও পড়ুন: প্রতিবাদে সিদ্দিকুল্লা, তৃণমূল চুপই

যখন থেকে এই ভাবনা তাঁর মাথায় ঢুকেছে, তখন থেকেই তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দেখা যাচ্ছে না মান্নানকে। বিধানসভা থেকে পালিয়ে বেড়ালেন? ঘনিষ্ঠ মহলেই মান্নান হাসতে হাসতে উত্তর দিচ্ছেন, ‘‘পালিয়ে বেড়ানো বললে খারাপ লাগে। আমার অনেকের সঙ্গে দেখা করার ছিল।’’ কার সঙ্গে দেখা করছেন, কী চাইছেন— এই নিয়েই তো যাবতীয় ধোঁয়াশা! দলের এক বিধায়কের মন্তব্য, ‘‘মান্নানদা’র মধ্যে কী রকম একটা সন্ন্যাসী ভাব। ভাল ঠেকছে না ব্যাপারটা!’’

মতিগতি বুঝতে রাজনীতির ফেলুদা’দের মগজাস্ত্র সক্রিয় এখন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন