রাজ্য রাজনীতির বিরোধী পরিসরে তৈরি হচ্ছে ‘ফাঁকা জায়গা’। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভাবে তৎপর হয়ে দ্রুত ওই ফাঁকা জায়গা ভরাট করার চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ডাক শোনা গেল সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের গলায়। রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী ও দলের প্রাক্তন পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেনের স্মরণসভায় নিজেদের জন্য এই লক্ষ্যই বেঁধে নিল সিপিএম।
প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে রবিবার ওই স্মরণসভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘রাজ্যে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। একটা দিনও যাচ্ছে না, যে দিন তৃণমূলের সঙ্গেই তৃণমূলের কোথাও না কোথাও গন্ডগোল হচ্ছে না। আবার বিজেপি আসলে কী, সেটাও মানুষ দেখছেন। তৃণমূলকে হারাতে বিজেপির দিকে যাওয়ার প্রবণতা একটু কম হয়েছে। একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হচ্ছে।’’ সূর্যবাবুর আহ্বান, ‘‘যত দ্রুত আমরা ফাঁক ভরাট করে মানুষের পাশে থাকতে পারব, ততই আমাদের সুযোগ। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভাবে মানুষকে আমাদের দিকে টেনে আনতে হবে, এটাই চ্যালেঞ্জ।’’
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মতে, ‘‘মতাদর্শগত লড়াইয়ে নিরুপমবাবুর পারদর্শিতা ছিল। আজকের পরিস্থিতিতে মতাদর্শগত ভাবে সতর্ক থেকেই বিজেপি-আরএসএসকে পরাস্ত করার জন্য আমাদের চেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।’’ নানা মহলেই সমালোচনা আছে, সিপিএম এখন নির্বাচনী কৌশল নিয়েই বেশি ব্যস্ত। লড়াই-আন্দোলনে নজর কম। তার জবাব দিয়েই এ দিন ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আন্দোলন আর নির্বাচনী কৌশলের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। সরকারকে সরাতে না পারলে নীতি বদল এবং দাবি আদায় হবে কী ভাবে? আন্দোলনকে পরিণতি দেওয়ার জন্যই নির্বাচনী কৌশলের গুরুত্ব।’’ বাংলায় যেমন বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব ভোট একত্র করার চেষ্টা তাঁরা করবেন বলে ফের জানিয়েছেন ইয়েচুরি। কলকাতায় আসার আগে রাঁচীর জেলে আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের সঙ্গেও দেখা করে এসেছেন তিনি।
ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক আন্দোলনে হাত পাকিয়ে সংগঠনে কাজ করে নিরুপমবাবু সরকারে দায়িত্ব সামলেছিলেন— এই কাহিনি তুলে ধরেন বিমান বসু। সূযর্বাবুরও বক্তব্য, ‘‘সংগঠনের কাজ বা পার্টি ক্লাস এবং দলের কথাকে জনগণের মধ্যে নিয়ে যাওয়া— দু’টো কাজেই সমান সাবলীল ছিলেন নিরুপমবাবু।’’ বাম দলে কিছু লোক সংগঠনের কাজে দড়, আবার কিছু নেতা রাজনীতির তর্কে পটু কিন্তু সংগঠনে নেই— এই পৃথক কাজের ধারণা যে ঠিক নয়, তা বোঝাতেই নিরুপমবাবুর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন বিমানবাবু, সূর্যবাবুরা। দলের নেতারা চেষ্টা চালালেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শেষ পর্যন্ত স্মরণসভায় আসেননি।