ফাঁকা ট্রেনে আগুন নাশকতা নয়তো, খড়্গপুরে ফরেন্সিক তদন্ত

মাস খানেক আগে ট্রেনের ফাঁকা কামরায় আগুন লেগেছিল খড়্গপুর স্টেশনে। রেল পুলিশের অনুমান ছিল, বাজি থেকেই এই কাণ্ড। শেষমেশ সেই ঘটনার তদন্তে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা এবং তাঁদের প্রাথমিক ধারণা, বাজি নয়, ইচ্ছে করেই লাগানো হয়েছিল আগুন। এমনকী নাশকতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ২৩:২৪
Share:

অগ্লিদগ্ধ ট্রেনের কামরায় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার, খড়গপুর স্টেশনে।-রামপ্রসাদ সাউ।

মাস খানেক আগে ট্রেনের ফাঁকা কামরায় আগুন লেগেছিল খড়্গপুর স্টেশনে। রেল পুলিশের অনুমান ছিল, বাজি থেকেই এই কাণ্ড। শেষমেশ সেই ঘটনার তদন্তে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা এবং তাঁদের প্রাথমিক ধারণা, বাজি নয়, ইচ্ছে করেই লাগানো হয়েছিল আগুন। এমনকী নাশকতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

Advertisement

ইতিমধ্যে এই ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি। সিআইডি-র আবেদনের ভিত্তিতেই খড়্গপুর স্টেশনের ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন লাইনের ধারে পুড়ে যাওয়া ওই ট্রেনের কামরায় তদন্ত চালাতে শুক্রবার দুপুরে এসেছিলেন কলকাতার ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির আধিকারিকেরা। গত ১২ নভেম্বর সেলুন সাইডিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রিবিহীন এই কামরাটিতেই আগুন জ্বলতে দেখেছিলেন রেলকর্মীরা। পরে দমকলের দু’টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ২১ নভেম্বর মামলা রুজু করে তদন্তে নামে রেল পুলিশ। তবে ২২ নভেম্বরই তদন্তভার নেয় সিআইডি।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১২ নভেম্বর ভোরে পুরী-হাওড়া প্যাসেঞ্জারের সঙ্গে এই কামরাটি মেরামতির জন্য খড়্গপুরে এসেছিল। সেটি রাখা হয় ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন সেলুন সাইডিংয়ে। কথা ছিল খড়্গপুর রেল কারখানায় মেরামতির পরে কামরাটি বিলাসপুরে পাঠানো হবে। তার আগেই সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ আগুন লেগে যায় ওই কামরায়। ১২ নভেম্বর সন্ধ্যাতেই ওড়িশায় একই ধরনের দু’টি ঘটনা ঘটেছিল। ভুবনেশ্বর এবং পুরী স্টেশনে আগুন লাগে নয়াদিল্লি-পুরী নন্দনকানন এক্সপ্রেস ও তিরুপতি এক্সপ্রেসের যাত্রিবিহীন একটি করে কামরায়। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে খড়্গপুরের ঘটনাটি বাজির আগুন বলে উড়িয়ে দিয়েছিল রেল। কিন্তু পুরীতে ট্রেনের কামরায় আগুনের তদন্তে নেমে খুরদা রেল পুলিশের জালে ধরা পড়ে এক যুবক। আর সুভাষ রামচন্দ্র নামে ওই যুবকের বাড়ি তামিলনাডুতে।

Advertisement

এর পরেই শোরগোল পড়ে ওড়িশায়। ক্রমে গয়া, হরিদ্বার, মথুরা-সহ দেশের বিভিন্ন স্টেশনে ফাঁকা ট্রেনের কামরায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে নাশকতার গন্ধ পেয়ে ইতিমধ্যে ওড়িশার মামলা হাতে নিয়েছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। একই দিনে খড়্গপুরে এমন ঘটনা ঘটায় প্রথমে রেল পুলিশ ও পরে সিআইডি তদন্ত শুরু করে। ইতিমধ্যেই ওড়িশায় গিয়ে ধৃতের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন সিআইডির তদন্তকারী অফিসার নীরেন ভট্টাচার্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত ঘটনার কথা স্বীকার করেছে বলে সিআইডির দাবি। এর পরে মামলায় ষড়যন্ত্রের ধারা যুক্ত করে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে আর সুভাষ রামচন্দ্রকে গ্রেফতার দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে সিআইডি সূত্রে খবর।

খড়্গপুরের ঘটনার সঙ্গেও নাশকতার যোগ রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে সিআইডির অনুমান। তার আগে কী ভাবে, কী থেকে আগুন লেগেছিল তা নিশ্চিত হতে সিআইডির তরফে ফরেন্সিক তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই এ দিন দুপুরে খড়্গপুর স্টেশনে পৌঁছন ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার (ফিজিক্স বিভাগ) চিত্রাক্ষ সরকার ও সিনিয়র সায়েন্টিফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট সর্বাণী মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন সিআইডির তদন্তকারী অফিসার নীরেন ভট্টাচার্য। ৮ নম্বর প্যাটফর্মে গিয়ে রেলের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার (প্ল্যাটফর্ম) পুড়ে যাওয়া ট্রেনের কামরাটি খুলে দেন। কামরার বাইরে ও ভিতরে পরীক্ষা চালান বিশেষজ্ঞরা। কামরার ভিতর থেকে পোড়া কাঠের টুকরো, সিট কভার, ফাইবার কভার, কিছু পুড়ে যাওয়া তার-সহ পাঁচ ধরনের নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। এ দিন সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার চিত্রাক্ষবাবু বলেন, “বিবিধ নমুনা সংগ্রহ করেছি। নাশকতার কথা পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পরে নিশ্চিত বলা যাবে।’’

প্রাথমিক তদন্তে কী মনে হচ্ছে? চিত্রাক্ষবাবুর জবাব, “কামরার ভিতরে মধ্যবর্তী অংশ থেকে আগুন ছড়িয়েছিল বলে বোঝা যাচ্ছে। দাহ্যবস্তু কিছু পাইনি। প্রাথমিকভাবে বাজি বা বিস্ফোরণের গন্ধ পাওয়া যায়নি।’’ রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক মুরলিধর সাহুর বক্তব্য, “দীপাবলির দিন থাকায় আমরা প্রাথমিকভাবে বাজি থেকে আগুন লেগেছিল বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু এই ঘটনার পরে পরিত্যক্ত ট্রেনের কামরাতেও যে নজরদারি প্রয়োজন এই শিক্ষা পেয়েছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন