Jyoti Basu

Left in Bengal: শূন্যও কথা বলে, শুক্রবারের বিধানসভা মনে করাল পুরনো সেই দিনের কথা

জ্যোতি বসুর দাপট দেখেছে এই বিধানসভা। দেখেছে বুদ্ধদেব জমানাও। বাম রেজ্জাক মোল্লার তৃণমূল হয়ে যাওয়াও দেখেছে। কিন্তু এমন শূন্যতা দেখেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২১ ২০:১৯
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

‘‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০।’’ বছর ১৫ আগে এমনটা বলেছিলেন বাম মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু আজ তাঁদের ‘আমরা’ বলার কেউ নেই। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভবন দেখল স্বাধীন ভারতের প্রথম কোনও অধিবেশন যেখানে একজনও ‘আমি বাম’ বলার মতো নেই। শুধু তাই নয়, ‘আমি আছি’ বলে হাত তুলতে পারলেন না কোনও কংগ্রেস বিধায়কও। হাত ধরাধরি করে ভোটে লড়া বাম ও কংগ্রেস দুই শিবিরেরই ঝুলি শূন্য। কংগ্রেসও এ রাজ্যে বিধানসভার ইতিহাসে প্রথম বার শূন্যস্থানে।
বুদ্ধদেবের আগে এই বিধানসভা দেখেছে জ্যোতি বসুর দাপট। দেখেছে সুভাষ চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তীদের। আবার বাম রেজ্জাক মোল্লাকে তৃণমূল হয়ে যেতেও দেখেছে। কিন্তু এমন শূন্যতা দেখেনি।

Advertisement

বাংলায় প্রাক্-স্বাধীনতা পর্বেই বামেদের প্রবেশ ঘটে গিয়েছিল নির্বাচিত প্রাদেশিক আইনসভায়। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে জেতেন জ্যোতি বসু, রতনলাল ব্রাহ্মণ এবং রূপনারায়ণ রায়। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম বিধানসভা নির্বাচন হয় ১৯৫১ সালে। সে বার ২৮টি আসনে জেতে সিপিআই। ফরওয়ার্ড ব্লকের ২টি গোষ্ঠী ১৩টি আসন পায়। তার পর থেকে ক্রমশ বাড়তেই থাকে বামেদের শক্তি। ১৯৬৪ সালে সিপিআই ভেঙে সিপিএম তৈরির পরও কিন্তু বিভিন্ন বাম দলগুলির মোট আসন কমেনি। ব্যতিক্রম ১৯৭২ সাল। ওই ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে অবশ্য অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

স্বাধীনতা পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় দীর্ঘ সময় থেকেছে কংগ্রেস। মাঝে কিছু সময়ের জন্য দু’টি যুক্তফ্রন্ট সরকার বাদ দিলে, ১৯৭৭ পর্যন্ত কংগ্রেসই ক্ষমতায় ছিল বাংলায়। বামেরা শক্তি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস ধারাবাহিক ভাবে দুর্বল হতে শুরু করে। এ বার তারাও একেবারে শূন্যে। কিন্তু বামেদের পতন যেন আকস্মিক। সাতের দশকের শেষ দিক থেকে টানা বাম-রাজত্বের পশ্চিমবঙ্গে এ বারের বিধানসভার ছবিটা একেবারেই অচেনা।

Advertisement

১৯৭৭। মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ জ্যোতি বসুর। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

২০০৬-এ রাজ্য বিধানসভার ২৩৫টি আসনে জিতেছিল বামফ্রন্ট। এর মধ্যে সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক মিলিয়ে ছিল ২২৭। সেই বামফ্রন্টই ২০১১-র বিধানসভায় নেমে এসেছিল ৬২টি আসনে। বড় চার শরিক জেতে ৬০টিতে। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে আসন আরও কমে হয় ৩২। দেড় দশক আগেও দেশে ‘বাম দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত বাংলার বিধানসভায় ২০২১-এ এসে বামেরা শূন্য। একটা সময়ে বাম-বিরোধী রাজনীতিক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পাওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ফল দেখে বলেছিলেন, ‘‘আমি চাইনি কেউ শূন্য হয়ে যাক। ওরা নিজেদের এতটাই বিজেপি-র দিকে ঠেলে দিয়েছে যে নিজেরাই সাইনবোর্ড হয়ে গিয়েছে। বিজেপি-র চেয়ে ওরা কিছু থাকলে ভাল হত।’’

২০১১। ক্ষমতা হারানোর দিনে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দফতরে ঢুকছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

বিজেপি অনেক আশা করলেও এ বার বাংলায় ‘রাম-শাসন’ কায়েম করতে পারেনি। তবে ৩৪ বছরের বাম-শাসন শেষ হওয়ার মাত্র ১০ বছর পরেই যে বামেদের এমন ছবি দেখা যাবে সেটা সম্ভবত কেউই ভাবতে পারেনি। জোটের ফল খারাপ হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চললেও এত তাড়াতাড়ি বাম বিধায়ক-হীন বিধানসভা দেখার কথা ভাবেনি।

কী ভাবে এই বিপর্যকে দেখছেন বাম নেতারা? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি নেতা এবং বিধানসভায় বামফ্রন্টের প্রাক্তন মুখ্য সচেতক রবীন দেব প্রশ্নটা শুনে বেশ খানিক্ষণ চুপ করে রইলেন। তার পর হতাশার সুরেই বললেন, “সত্যিই আজ আমাদের পরিতাপের দিন। কারণ ১৯৪৬ সালের পর এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বামেদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই।” কিছু ক্ষণ থেমে তাঁর সংযোজন, “মানুষের রায় আমরা মাথা পেতে নিয়েছি। এক সময় এই মানুষই আমাদের একক ভাবে ১৮৭ আসনে জিতিয়েছিল। সেই মানুষই আমাদের আজ শূন্য করে দিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন