হুদহুদের ধাক্কায় মাছ, ডিম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা বাজারে

ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের প্রভাব আছড়ে পড়ছে বাঙালির পাতেও! অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকার কোথাও ভেঙে গিয়েছে রাস্তা। কোথাও আবার সমুদ্রের ঝড়ে মৎস্যজীবীদের গ্রামই লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। ঝড়ের পরে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। অথচ অন্ধ্র ও ওড়িশাই কলকাতার মাছের বাজারে একটা বড় অংশ জোগান দেয়। ফলে আগামী কয়েক দিন সেই জোগান বেশ অনেকটাই কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন মাছের ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

দেবাশিস দাশ ও আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৪
Share:

ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের প্রভাব আছড়ে পড়ছে বাঙালির পাতেও!

Advertisement

অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকার কোথাও ভেঙে গিয়েছে রাস্তা। কোথাও আবার সমুদ্রের ঝড়ে মৎস্যজীবীদের গ্রামই লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। ঝড়ের পরে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। অথচ অন্ধ্র ও ওড়িশাই কলকাতার মাছের বাজারে একটা বড় অংশ জোগান দেয়। ফলে আগামী কয়েক দিন সেই জোগান বেশ অনেকটাই কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন মাছের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশঙ্কা, অন্ধ্র, ওড়িশা ও রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে মাছের জোগান কমে গেলে সামগ্রিক ভাবে কলকাতার বাজারে মাছের পরিমাণে টান পড়বেই। মাছ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, যে সব মাছভর্তি ট্রাক ইতিমধ্যে অন্ধ্র বা ওড়িশা থেকে কলকাতা বা এ রাজ্যে ঢুকে গিয়েছে, সেগুলি থেকে মাছের জোগানের সমস্যা নেই। তবে যে সব ট্রাক মাঝপথে রয়েছে অথবা যে ট্রাকগুলি আগামী কয়েক দিনে ওই সব রাজ্য থেকে ছাড়ার কথা ছিল, সেগুলি হয়তো ছাড়বেই না। ফলে আগামী কয়েক দিন কলকাতায় মাছের ট্রাক ঢুকবে না বলে আশঙ্কা মাছ ব্যবসায়ীদের। এর পাশাপাশি ট্রাক না আসার প্রভাব পড়বে এ রাজ্যে ডিমের জোগানেও। কারণ, এ রাজ্যে ডিমের একটা বড় অংশ আসে অন্ধ্র থেকেই।

সোমবার হাওড়ার মাছবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইতিমধ্যেই কমে গিয়েছে মাছের জোগান। অধিকাংশ আড়তেই মাছের জোগান অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। ফলে খদ্দেরও বেশ কম। হাওড়া মাছবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন এই দু’টি রাজ্য থেকে শুধু এ বাজারেই আসে ৬০-৭০ টন মাছ। যা কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। ‘হাওড়া ফিশ মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি অশোক রাই বলেন, “ঝড়ের জন্য অন্ধ্র, ওড়িশা থেকে সামুদ্রিক মাছের ট্রাক আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে আগে থেকেই রুই-কাতলার মতো মাছ মজুত করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তা দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী মাছের পুরো জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে ইতিমধ্যেই টান পড়েছে মাছের মজুতে। আগামী দু’এক দিন পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

Advertisement

এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের আগে প্রায় চার দিন কোনও মৎস্যজীবী সমুদ্রে যাননি। তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। ইলিশ মাছ ধরতে যে সব ট্রলার গভীর সমুদ্রে গিয়েছিল, দিন চারেক আগে ঝড়ের খবর আসার পরে তাদের অধিকাংশ মাছ না ধরেই ফিরে এসেছে। গভীর সমুদ্রে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা ওঠার পরে ট্রলারগুলি ফের গভীর সমুদ্রে গিয়ে ইলিশ ধরে আনতে যে সময় লাগবে, তাতে ইলিশের জোগানেও ভাটা পড়বে বলে মাছ ব্যবসায়ীদের ধারণা।

‘ফিশ ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি অতুল দাস বলেন, “এ রাজ্যে এখন বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ আসা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে ইলিশের সিংহভাগ জোগান এখন আসে এ রাজ্যের দিঘা, নামখানা, রায়দিঘি ও কাকদ্বীপ থেকে। দুর্যোগের কয়েক দিন আগে থেকে এ সব জায়গাতেও মৎস্যজীবীরা ইলিশ ধরতে যেতে পারছেন না। ফলে ইলিশের জোগানও কমে যাচ্ছে।”

মাছের জোগানের প্রায় একই ছবি আর এক পাইকারি বাজার পাতিপুকুরেও। সেখানকার পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য উত্তম হাজরা বলেন, “ওড়িশা, অন্ধ্র থেকে এই বাজারে দৈনিক ১০-১২ ট্রাক মাছ আসে। এক-একটা ট্রাকে থাকে সাত থেকে আট টন মাছ। অন্ধ্র থেকে আসে রুই-কাতলা এবং ওড়িশা থেকে ভোলা, পমফ্রেটের মতো সামুদ্রিক মাছ। ফলে আগামী কয়েক দিনে এই সব মাছের জোগান খুবই কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” পাতিপুকুর মাছবাজারের ব্যবসায়ীদের মতে, শুধু অন্ধ্র বা ওড়িশাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা যেমন দিঘা বা বকখালিতেও ঝড়ের এক দিন আগে থেকে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। আবহাওয়া খারাপ থাকায় ঝড়ের পরেও দিন কয়েক গভীর সমুদ্রে যেতে পারবেন না তাঁরা। ফলে দিঘা বা বকখালি এলাকা থেকে মাছের যে জোগান আসত, তা-ও কমে যাবে বলে আশঙ্কা ওই ব্যবসায়ীদের।

‘মানিকতলা মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি প্রভাত দাস বলেন, “আমাদের বাজারে এক দিকে যেমন অন্ধ্র, ওড়িশা থেকে মাছ ঢোকে, তেমনই আসে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকা ও ভেড়ি থেকেও। তাই আগামী কয়েক দিন বোধহয় ভেড়ির মাছই ভরসা।”

অর্থনীতির নিয়ম মেনে জোগান কম হলেই দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের আশ্বাস, “আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। আগামী কয়েক দিন মৎস্য দফতরের লোকজন প্রধান বাজারগুলিতে থাকবেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জোগান কমলেও মাছের দাম যাতে অযথা না বাড়ে, সে দিকেও নজর রাখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন