ভোগান্তি: উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে শিয়ালদহ পৌঁছলেন যাত্রীরা। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
নদীতে জল কমছে। টানা তিন দিন পরে রবিবার দেখা মিলেছে রোদেরও। তবে এখনও উত্তরবঙ্গের অনেক জায়গায় আকাশ ঢাকা কালো মেঘে।
এখনও জাতীয় সড়ক, গ্রামের রাস্তা থেকে শুরু করে বহু এলাকায় রেল লাইন জলে ডুবে রয়েছে। বাতিল হয়েছে ২০টি ট্রেন, মাঝপথে থমকে গিয়েছে বা অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে আরও ১০টি ট্রেনকে। মহানন্দার জলে জাতীয় সড়ক ছাপিয়ে যাওয়ায় এ দিন সকাল থেকে বিহারের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন। সব নদী থেকে লাল সর্তকতা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কালজানি, সঙ্কোশ, রায়ডাকের জল বিপদসীমার খুব কাছ দিয়ে বইছে। আবার বৃষ্টি হলেই পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। কিছু দিনে বন্যা পরিস্থিতির জেরে এক বালক-সহ উত্তরের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে এ দিন গঙ্গারামপুরের জাহাঙ্গিরপুর অঞ্চলের রামদেবপুর এলাকায় মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে আব্দুল রহমান মিঁয়া (৫৬) ও জুলেখা বিবি (৫০) নামে এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে।
প্রশাসনের তৎপরতাও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। এ দিন উত্তরের বিভিন্ন জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। জেলাশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তিনি। প্রশাসনের নজরে এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশি আলিপুরদুয়ার জেলার উপরেই। সেখানে প্রায় ২ লক্ষ বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত বলে প্রশাসনিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। টানা দু’দিন জলবন্দি ছিল আলিপুরদুয়ার। রবিবার থেকে জল নামতে শুরু করেছে। নদীর জল প্লাবিত হয়ে বিভিন্ন ব্লকের ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে আড়াইশো হেক্টর জমির শস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি, তপন কুশমণ্ডি সহ বিভিন্ন এলাকায় এ দিন সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টিতে ভয় ছড়িয়ে পড়ে। সকালের দিকে বালুরঘাটে অঝোরে বৃষ্টিতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আত্রেয়ী নদীর একাধিক জায়গায় বাঁধ ফুটো হয়ে ও ভেঙে পূর্ব দিকে বেলতলাপার্ক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হুহু করে জল ঢুকে শহরের চকভবানী থেকে ঘাটকালী, বাজারপাড়া হয়ে খিদিরপুর এলাকার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। চকভবানীর ত্রিধারাপাড়ায় স্ল্যুইসগেটে ভেঙে জল ঢুকে ওই এলাকা সহ ১০০ মিটার রাজ্য সড়ক প্লাবিত হয়ে যায়। জেলায় প্রায় ৫০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।
কোচবিহারেও তোর্সার জল নামতে শুরু করলেও ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে জলের স্রোত বইছে। ওই পথে যান চলাচল বন্ধ। দিনহাটার জারিধরলা ও দরিবসে তিন হাজার মানুষ আটকে। তাঁদের উদ্ধার করতে বিএসএফের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী নামে। শনিবারের বৃষ্টির জলে ডুবে রয়েছে মালদহের ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ পুরসভার বহু এলাকায়। পুরসভার ভূমিকায় ক্ষোভে ফুঁসছে দুই শহরের জলবন্দি পরিবারগুলি। এ দিন কালিয়াচক ৩ ব্লকের শোভাপুর এলাকা দিয়ে গঙ্গার জল ঢোকে পারদেওনাপুর-শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু এলাকায়। ফুঁসছে ফুলহারও।
তবে আশার কথা, রবিবার দুপুরের পরে কোচবিহারে রোদের ঝলক দেখা গিয়েছে। শিলিগুড়িতেও নীল আকাশের দেখা মিলেছে।