Nirmala Sitharaman

সিএএ থেকে করোনা, মমতাকে তোপ নির্মলার, পাল্টা উত্তর ডেরেকের

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও  বেকারত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগেছেন তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২০ ২১:৩১
Share:

নির্মলা সীতারামন ও ডেরেক ও’ব্রায়েন।

রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে নিশানা করে ‘জন সংবাদ’ র‌্যালি থেকে একের পর এক ইস্যু তুলে ধরে আক্রমণ সাজিয়েছিলেন অমিত শাহ। রবিবার এ রাজ্যের জন্য ভার্চুয়াল জনসভা থেকে ঠিক সেই তিরই ছুড়লেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তৃণমূলের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরোধিতা নিয়ে এ দিন আক্রমণ শানিয়েছেন নির্মলা। একে একে টেনে এনেছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে অসহযোগিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ। নির্মলার আক্রমণের জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও বেকারত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগেছেন তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।

Advertisement

জুনের শুরুর দিকে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে ভার্চুয়াল জনসভায় তৃণমূলের সিএএ বিরোধিতা নিয়ে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন অমিত শাহ। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান যোজনা-সহ কয়েকটি প্রকল্পে এ রাজ্যের যুক্ত না হওয়া নিয়ে তোপ দেগেছিলেন তিনি। দুর্নীতির অভিযোগ তুলেও নিশানা করেছিলেন তৃণমূলকে। এ দিন সেই একই গতিপথে গিয়ে জোড়াফুল শিবিরকে টার্গেট করেন নির্মলা সীতারামন। বক্তব্যের শুরুর দিকেই তিনি টেনে আনেন সিএএ প্রসঙ্গ। তাঁর দাবি, ‘‘শুধু মাত্র উত্তরপ্রদেশের পিলভিটেই ৩৭ হাজার বাংলাভাষী রয়েছেন। তাঁরা পূর্ব পাকিস্তান থেকে এসেছেন।’’ এর পরেই তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনি সিএএ-এর বিরোধিতা কেন করছেন? এই আইন নাগরিকত্ব দেওয়ার।’’

নির্মলার দাবি, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান যোজনার মাধ্যমে প্রায় ৯ কোটি কৃষকের কাছে বছরে ৬ হাজার টাকা পৌঁছেছে। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল সরকারের জন্য এ রাজ্যের ৭২ লক্ষ কৃষক ওই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই প্রসঙ্গেই তিনি টেনে এনেছে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কথাও।

Advertisement

আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণরেখায় এ বার মার্শাল আর্ট ফাইটার আনছে চিন​

করোনা পরিস্থিতি নিয়েও রাজ্যকে বিঁধেছেন নির্মলা। তাঁর দাবি, ‘‘কেন্দ্র ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকা বাংলাকে দিয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে করোনার চিকিৎসার উপযুক্ত হাসপাতাল নেই। মুখ্যমন্ত্রী ৪২টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কথা বললেও, করোনার সময় ২টির বেশি হাসপাতাল দেখা যায়নি।’’ করোনা সংক্রান্ত তথ্য নিয়েও রাজ্য অনেক ভুল করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রের পাঠানো প্রতিনিধি দলকেও পদে পদে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বলে খোঁচা দিয়েছেন নির্মলা।

পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থা নিয়ে রাজ্য বার বার অভিযোগ করেছে কেন্দ্রের দিকে। তার জবাব দিতে গিয়ে এ দিন রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন নির্মলা। তাঁর অভিযোগ, এ রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কোনও তথ্য কেন্দ্রকে দেয়নি। তার দাবি, সে কারণেই দেশের ১১৬ টি জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের রোজগারের জন্য যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তাতে বাংলা নেই।

নির্মলার আরও অভিযোগ, আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন)-এর সতর্কতা ১১ দিন আগে দেওয়া হলেও রাজ্য সরকার প্রস্তুতি নেয়নি। তাঁর মতে, সে কারণেই ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যে শিল্পায়ন নিয়ে অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘বাংলায় শিল্প আসতে রাজি, কিন্তু যে ভাবে হিংসার রাজনীতি চলছে, তাতে পুঁজি ও বিনিয়োগ পিছিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ঠিক থাকলে এখানে পুঁজি ও বিনিয়োগ আসবে।’’

এ দিন একের পর এক ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন নির্মলা সীতারামন। কিন্তু সীমান্তে চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তৃণমূলের অবস্থানের প্রশংসাও করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন তখন অন্তত দেশের জন্য দিদি কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন করেছেন।’’

আরও পড়ুন: চিন ঢুকছে, আগেই সাবধান করেছিলেন লাদাখের এই বিজেপি জনপ্রতিনিধি​

নির্মলার সভা শেষ হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে তৃণমূলের তরফে। ডেকেক ও’ব্রায়েন টুইটে লিখেছেন, ‘‘এটা একটা নির্লজ্জ উদাহরণ যে, এক জন ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী নুইয়ে পড়া অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং রেকর্ড বেকারত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ না করে করোনা এবং আমপানের সময় সিএএ এবং টিটি নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন। এটা বাংলায় ডুবতে বসা বিজেপিকে টেনে তোলার একটা মরিয়া চেষ্টা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন