সময় পেরোল, এল না নীল বরফ

কেন্দ্রীয় খাদ্য নিরাপত্তা কমিশন সূত্রের খবর, এ রাজ্যে এখনও নির্দেশিকাটি কার্যকর হয়নি। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:২৪
Share:

এমন বাণিজ্যিক বরফই মিশছে পানীয়ে। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নির্দেশিকা জারির পরে এক মাস পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও শহরে নীল বরফের দেখা মিলল না!

Advertisement

গত মে মাসে কেন্দ্রীয় খাদ্য নিরাপত্তা কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাণিজ্যিক বরফ বা মাছ-মাংস সংরক্ষণে ব্যবহৃত বরফকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করার জন্য তাতে নীল রং করার কথা বলা হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়া চালু হওয়ার কথা ছিল জুন থেকেই। কিন্তু এক মাস পেরোলেও তা চালু হয়নি বলেই খাদ্য নিরাপত্তা কমিশন সূত্রের খবর। কবে হবে, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বরফ যে ভাবে পানীয়ে মেশানো হচ্ছে, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, শহরের পথঘাটে বিক্রি হওয়া শরবতে খাওয়ার যোগ্য বরফের কিউব (খণ্ড) না ব্যবহার করে বাণিজ্যিক বরফের চাঁই ব্যবহার হচ্ছে। খাবারে শুধু সাদা বরফের কিউবই ব্যবহার হওয়ার কথা। কলকাতা পুরসভা এ নিয়ে দফায় দফায় অভিযান চালালেও তা আটকানো যায়নি। মহারাষ্ট্র সরকার ইতিমধ্যেই বাণিজ্যিক বরফে নীল রং করা বাধ্যতামূলক করেছে। কেন্দ্রীয় খাদ্য নিরাপত্তা কমিশনের নির্দেশিকাতেও বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক বরফ আলাদা ভাবে চিহ্নিত করার জন্য তাতে ‘ইন্ডিগো কারমাইন’ নামে একটি রাসায়নিক ১০ পার্টস পার মিলিয়ন (পিপিএম) পর্যন্ত মেশানো যাবে। প্রসঙ্গত, ‘ইন্ডিগো কারমাইন’ বা চলতি কথায় ‘ব্রিলিয়ান্ট ব্লু’ ফুড গ্রেড রং। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট মাত্রায় ওই রং খাবারেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

Advertisement

কেন্দ্রীয় খাদ্য নিরাপত্তা কমিশন সূত্রের খবর, এ রাজ্যে এখনও নির্দেশিকাটি কার্যকর হয়নি। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কমিশনের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, এটি আইন নয় যে সারা দেশে একই ভাবে লাগু হবে। কেন্দ্রীয় খাদ্য নিরাপত্তা কমিশনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘এটা আইন নয়, শুধু নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। এ বার রাজ্য নিজের মতো করে বিষয়টা দেখবে। সাধারণ মানুষ যাতে আলাদা করে চিনতে পারেন কোনটা খাওয়ার বরফ এবং কোনটা মাছ-মাংস সংরক্ষণের বরফ, তার জন্য এই প্রক্রিয়া জরুরি।’’

তবে মহারাষ্ট্রে এই নিয়ম চালু হলেও এ রাজ্যে কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বলে জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় খাদ্য নিরাপত্তা কমিশনের আধিকারিকদের একাংশ। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে পানীয়ে মেশানোর জন্য বরফ তৈরির কারখানার সংখ্যা হাতে গোনা। বরফকলগুলির বৈধ লাইসেন্স রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। কমিশনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বরফের মূল উপাদান তো জল। জল যদি শুদ্ধ না হয়, বরফেও ভেজাল থাকবে। রাজ্যে পানীয়ে মেশানোর বরফ তৈরির কারখানা ক’টা আছে, তা আগে দেখতে হবে!’’

কলকাতা পুরসভাও জানাচ্ছে, এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি। নিয়ম চালু হলে নির্দেশিকা মানা হচ্ছে কি না, তা যাচাই করতে বরফকলগুলিতে অভিযান চালাবে পুরসভা। এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে এই প্রক্রিয়া শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে। অনেক দিক দেখতে হবে।’’

বরফে নীল রং করেও কতটা লাভ হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ফুড টেকনোলজির গবেষক-অধ্যাপকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, বরফে নীল রঙের জন্য ‘ইন্ডিগো কারমাইন’ মেশানো হচ্ছে না কি বাজারচলতি নীল রং মেশানো হচ্ছে, তা যাচাই করে দেখা হবে কী করে! সেই পরিকাঠামো কি পুরসভার আছে! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড বায়ো-কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক প্রশান্তকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাজার চলতি নীল রং শরীরে ঢুকলে খুবই ক্ষতি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের ভিত্তিতে তা থেকে ক্যানসার পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। খারাপ জলে তৈরি বরফ থেকে পেটের বহু রোগ হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন