শীতের মরসুমে দক্ষিণরায়ের মনমেজাজ যে বেশ শরিফ রয়েছে, সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়ে তার প্রমাণ পাচ্ছেন অনেকেই। কেননা পর্যটকদের ক্যামেরায় প্রায়ই ধরা দিচ্ছেন তিনি।
গত বছর জানুয়ারিতেই নেওড়ার জঙ্গলে গাড়িচালক অনমোল ছেত্রীর সামনে প্রথম বার আত্মপ্রকাশ করেছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। তার পর থেকে পর্যটকদের কাছে নেওড়ার আকর্ষণ কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে বাঘের ডেরায় আরও গভীর ভাবে নজরদারি চালাতে চাইছে বন দফতর। সুন্দরবনে এই কাজে বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয়ও রাখা হচ্ছে বলে জানান বনকর্তারা।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিনহা জানান, সুন্দরবন ও উত্তরবঙ্গের জঙ্গল মিলিয়ে উন্নত মানের মোট এক হাজার ক্যামেরা-ফাঁদ পাতা হবে। এই প্রথম গভীর জঙ্গলেও ফাঁদ পাতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনের একাংশ বাংলাদেশের এলাকায়। তাই এই প্রথম বাঘের উপরে নজরদারিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা ভাবা হয়েছে হচ্ছে। আগামী মাসেই ক্যামেরা-ফাঁদ পাতার কাজ শুরু হবে। সেই ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবির সাহায্যে বাঘের হিসেব করা সহজ হবে বলে বন দফতরের আশা।
উত্তরবঙ্গের নেওড়া ভ্যালি, বক্সার মতো বাঘের চিহ্নিত ডেরাগুলিতে ৪০০টি ক্যামেরা পাতা হবে বলে বন দফতরের খবর। ৬০০টি ক্যামেরা বসবে সুন্দরবনে। এত দিন এক-একটি ক্যামেরা-ফাঁদ পাতার জন্য চার বর্গকিলোমিটার এলাকা বেছে নেওয়া হত। এ বার দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় এক-একটি ফাঁদ পাতবে বন দফতর। এ ব্যাপারে বনকর্মীদের প্রশিক্ষণও শুরু হয়ে গিয়েছে।
বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলার কোন জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা কত, তা নিয়ে ধন্দ আছে। বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে এক-এক রকম তথ্য মেলে। বাঘ-বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর মতে, এই নতুন পদ্ধতিতে অনেক নিবিড় তথ্য মিলবে। বাঘের সংখ্যা কত, সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট ধারণা মিলতে পারে। বাঘের গতিবিধি জঙ্গলের কোন কোন এলাকায়, জানা যাবে তা-ও। বাঘ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই সব তথ্য অত্যন্ত জরুরি।
বনকর্তাদের একাংশের মতে, বক্সার মতো আন্তর্জাতিক সীমানা লাগোয়া জঙ্গলে বাঘের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন আছে। বক্সার বাঘেরা ভুটানে পাড়ি দিচ্ছে কি না, তা নিয়েও হাজার মত। ক্যামেরা-ফাঁদে বাঘের হাজিরা এবং গতিবিধি ধরা পড়লে সেই সব প্রশ্নের সদুত্তর মিলতে পারে। ‘‘নেওড়ার মতো দুর্গম জঙ্গলে ক’টা বাঘ রয়েছে বা তাদের অবস্থা কী, সেই ব্যাপারেও তথ্য মিলতে পারে,’’ বলছেন এক বনকর্তা।