রেল মাফিয়াই ভরসা, বিজেপি-কে ভাঙল তৃণমূল

হাওয়ায় খবর ভাসছিল। খড়্গপুর পুরসভায় হলও তাই। রাতারাতি সেখানে বিজেপি হয়ে গেল তৃণমূল! অথচ দু’দিন আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বলেছিলেন, ‘খড়্গপুরে রামধনু জোট হচ্ছে’। সে দিন তাঁর নিশানায় ছিল বিরোধী বাম-কংগ্রেস-বিজেপি। বৃহস্পতিবার সেই রেল শহরেই চার বিজেপি কাউন্সিলর গেলেন তৃণমূলে। ফলে, পুরবোর্ড গঠনের এক সপ্তাহ আগে বৃহত্তম দল হয়ে উঠল তৃণমূল। শহরে কিন্তু জোর গুঞ্জন, রেল-মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুকে সামনে রেখেই বিজেপি-কে ভেঙে বোর্ড গড়ার লড়াইয়ে এক ধাপ এগোল শাসক দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:৪৯
Share:

রেল মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী পূজাকে অভ্যর্থনা খড়্গপুরের পুরপ্রধান পদপ্রার্থী প্রদীপ সরকারের। বৃহস্পতিবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

হাওয়ায় খবর ভাসছিল। খড়্গপুর পুরসভায় হলও তাই। রাতারাতি সেখানে বিজেপি হয়ে গেল তৃণমূল!

Advertisement

অথচ দু’দিন আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বলেছিলেন, ‘খড়্গপুরে রামধনু জোট হচ্ছে’। সে দিন তাঁর নিশানায় ছিল বিরোধী বাম-কংগ্রেস-বিজেপি। বৃহস্পতিবার সেই রেল শহরেই চার বিজেপি কাউন্সিলর গেলেন তৃণমূলে। ফলে, পুরবোর্ড গঠনের এক সপ্তাহ আগে বৃহত্তম দল হয়ে উঠল তৃণমূল। শহরে কিন্তু জোর গুঞ্জন, রেল-মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুকে সামনে রেখেই বিজেপি-কে ভেঙে বোর্ড গড়ার লড়াইয়ে এক ধাপ এগোল শাসক দল।

৪ জুন খড়্গপুরে পুরবোর্ড গঠন। তার আগে এ দিন বিকেলে খরিদার তৃণমূল কার্যালয়ে জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বিজেপি-র টিকিটে জয়ী শ্রীনুর স্ত্রী পূজা নায়ডু, সুনিতা গুপ্ত, লক্ষ্মী মুর্মু এবং জগদম্বা গুপ্ত দলবদল করেন। ক’দিন আগে পর্যন্তও এঁরা তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলছিলেন। পূজা প্রার্থী হওয়ার পরই বোমাবাজির ঘটনায় শ্রীনু গ্রেফতার হওয়ায় অভিযোগ উঠেছিল, তৃণমূল পুলিশকে দিয়ে এ সব করাচ্ছে। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে আবার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী জগদম্বার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা রুজু হয়। তখনও বিজেপি-র অভিযোগ ছিল, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তাদের কাউন্সিলরকে। গত রবিবার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুনিতা গুপ্তের স্বামী রাজুকে লক্ষ করে গুলি ছোড়াতেও নাম জড়ায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের। তার পরই বাম-কংগ্রেস-বিজেপি একজোট হয়ে পথে নামে। বিজেপি কর্মী সেই রাজুও এ দিন তৃণমূলে ভিড়েছেন।

Advertisement

এত কিছুর পরেও তৃণমূলে কেন?

পূজা, জগদম্বা, সুনীতাদের যুক্তি, “রাজ্যে তৃণমূলের সরকার চলছে। তাই মানুষকে পরিষেবা দিতে গেলে তৃণমূলের হাত ধরা উচিত বলে মনে করেছি।” যদিও বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “এক দিকে, কাউন্সিলরদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়েছে দুষ্কৃতীরা। অন্য দিকে, টাকার ব্যাগ নিয়ে হাজির হয়েছেন তৃণমূল নেতারা। আর পুলিশ তাতে মদত দিয়েছে। তাই এই নতি স্বীকার স্বাভাবিক।’’ সিপিএমের জোনাল সদস্য অনিল দাসেরও মত, “দুষ্কৃতীদের হুমকির কাছে নতি স্বীকার করেছেন ওই কাউন্সিলরেরা।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের দাবি, ‘‘খড়্গপুরে তিনটি দলের নীতিহীন জোট বিজেপি-র এই কাউন্সিলররা মানতে পারেননি। তাই উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের সঙ্গে এসেছেন।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব যা-ই বলুন দল ভাঙানোর খেলাটা শুরু হয়েছিল আগেই। পুরভোটের ফলপ্রকাশের পরে মেদিনীপুর সংশোধনাগারে বন্দি শ্রীনুর সঙ্গে দেখা করতে যান তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল। সেই সাক্ষাতের পরই শ্রীনু জামিন পান। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, এর পর শ্রীনুকে সামনে রেখেই বিজেপি কাউন্সিলরদের ভাঙানোর খেলা শুরু। খড়্গপুরের রাজনীতির সঙ্গে রেল-মাফিয়াদের যোগাযোগ নতুন নয়। সেই রামবাবুর আমল থেকে দেখা গিয়েছে, রেল-মাফিয়ারা যার দিকে ঝুঁকে, খড়্গপুরে সেই দলেরই দাপট। এ বারও পুরভোটের আগে তৃণমূলের প্রচারে ছিলেন রামবাবু। শ্রীনু অবশ্য রাজনীতির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মানতে নারাজ। এ দিন তিনি বলেন, “আমি কোনও রাজনৈতিক দল করি না। ফলে, কারও স্বার্থে কাজ করার প্রশ্ন ওঠে না।”

৩৫ আসনের খড়্গপুর পুরসভার ফল হয়েছিল ত্রিশঙ্কু। কংগ্রেস ও তৃণমূল ১১টি করে আসন পেয়েছিল। বামেরা জেতে ৬টিতে আর বিজেপি পায় ৭টি আসন। এ দিন দলবদলের পরে তৃণমূলের আসন বেড়ে দাঁড়াল ১৫। ফলে, বৃহত্তম দল হিসেবে বোর্ড গঠনে অগ্রাধিকার পাবে তৃণমূল। কিন্তু তাতে বোর্ড গঠন নিশ্চিত হচ্ছে না। কারণ, জহরলালের নাম মামলায় জড়ানোয় তিনি ভোটাভুটিতে যোগ দিতে পারবেন না। তাই তৃণমূলের সংখ্যা কমে দাঁড়াল ১৪।

অন্য দিকে, বামেদের সমর্থন চেয়েছে কংগ্রেস। সে ক্ষেত্রে জোটের আসন হবে ১৭। তা ছাড়া, বিজেপি-র তিন কাউন্সিলর ভোটাভুটিতে কোন দিকে যান, সেটাও দেখার। এ সব অঙ্কের প্রেক্ষিতেই শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস বলছেন, “বোর্ড গঠন নিয়ে আমরা এখনও আশাবাদী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন