Car Factory in Hooghly

হুগলি থেকেই বেরোবে ১ লাখি গাড়ি! ভোটের বছরেই পথে, ১৭ বছর আগে বিদায় নেয় ন্যানো, ১৭ কিমি দূরত্বে নতুন কারখানা

১৭ বছর আগে ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে যাওয়ার পরেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সিঙ্গুর থেকে নিজেদের গাড়ি প্রকল্প গুটিয়ে নিয়েছিল টাটাগোষ্ঠী। দুর্গাপুজোর চতুর্থীর দিন অধুনাপ্রয়াত রতন টাটা কলকাতায় এসে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা কারখানা গড়বেন না। সেই কারখানা চলে গিয়েছিল গুজরাতের সানন্দে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:০৪
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সিঙ্গুর থেকে সুগন্ধার দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। ২০০৮ থেকে ২০২৫ সালের ব্যবধান ১৭ বছরের। কাকতালীয়। কিন্তু ১৭ বছর পর ১৭ কিলোমিটারের দূরত্বে নতুন ঘোষণা হল শনিবার। ঘোষণা হল, হুগলি জেলা থেকেই বেরোবে ১ লক্ষ টাকার কম দামের চারচাকা গাড়ি। ঘোষণা করল ‘সাইনোসোর’ কোম্পানি।

Advertisement

শনিবার এই সংস্থার তৈরি বিদ্যুৎচালিত তিনচাকার গাড়ি বাজারে এসেছে। সেই মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করা হয়েছে, এর পরে পথে নামতে চলেছে চারচাকার গাড়ি। দীপাবলির পরে ‘শুভ’ কোনও দিন দেখে নতুন সেই গাড়ির ‘প্রোটোটাইপ লঞ্চ’ হবে। তার পরে ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে পথে নামবে নতুন গাড়ি। সময়টি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। কারণ, সব পরিকল্পনা মতো চললে তার তিন মাসের মধ্যেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন।

শনিবারের অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান এবং উজ্জ্বল বিশ্বাস। ছিলেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও। সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগে যখন সংস্থার তরফে কুণালকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তিনিই তখন কর্ণধারদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনচাকা হলে চারচাকা নয় কেন? পরে পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে সংস্থার তরফে কুণালকে জানানো হয়, চারচাকা পথে নামাতে তাঁরা তৈরি। শনিবার তিনচাকা উদ্বোধনের দিন কুণালই ‘ফাঁস’ করেন চারচাকার ‘গোপন কথা’। অনুষ্ঠানমঞ্চেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, চারচাকার বিষয়টি কী হল? তার পরে সংস্থার তরফে ঘোষণা করা হয়, দীপাবলির পরেই হবে চারচাকা গাড়ির ‘প্রোটোটাইপ লঞ্চ’। গাড়ি পথে নামবে পৌষ মাস কাটলেই।

Advertisement

সংস্থাটির অন্যতম কর্ণধার সম্পূর্ণা ঘোষ শনিবার জানান, এক লক্ষ টাকার চেয়েও কম দামে বাজারে আসবে তাঁদের সংস্থার গাড়ি। চলবে বিদ্যুতে। অর্থাৎ ব্যাটারি চার্জ দাও আর গাড়ি ছোটাও। ১৭ বছর আগে ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে যাওয়ার পরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় সিঙ্গুর থেকে নিজেদের গাড়ি প্রকল্প গুটিয়ে নিয়েছিল টাটাগোষ্ঠী। দুর্গাপুজোর চতুর্থীর দিন অধুনাপ্রয়াত রতন টাটা কলকাতায় এসে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা কারখানা গড়বেন না। পুরো ঘটনার জন্য তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছিলেন রতন। বাম সরকারের আমলে সিঙ্গুরে ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলনের মুখ ছিলেন মমতা। টাটাদের সেই কারখানা চলে গিয়েছিল গুজরাতের সানন্দে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বারংবার বলেছেন, তাঁর লড়াই টাটাদের বিরুদ্ধে ছিল না। ছিল তৎকালীন রাজ্য সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতির বিরুদ্ধে।

টাটাদের সেই গাড়ির নাম ছিল ‘ন্যানো’। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছিল, মধ্যবিত্তের সাধ্যের নাগালে চারচাকা গাড়ি আনা। ১৭ বছর পরে সিঙ্গুর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে তেমনই চারচাকা গাড়ি তৈরির কথা ঘোষণা করল ‘সাইনোসোর’। এই সংস্থারও উদ্দেশ্য, মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তদের নিজস্ব গাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা। চালক-সহ চার জন বসার মতো গাড়ি তৈরি করবে সংস্থাটি। তাঁদের নির্মিত গাড়ির নাম কী হবে? সম্পূর্ণা জানালেন, এখনও নাম চূড়ান্ত হয়নি। রাজ্যে বিভিন্ন প্রকল্প বা ভবনের নামকরণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। নতুন গাড়ির নামকরণের ক্ষেত্রেও কি মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন তাঁরা? সম্পূর্ণার জবাব, ‘‘ওঁর আশীর্বাদেই সবটা হবে।’’

২০২৬ সালের ভোটের কয়েক মাস আগে যদি ন্যানো-পরিত্যক্ত সেই হুগলি থেকেই এক লক্ষ টাকার গাড়ি বাজারে আসে, ‘রাজনৈতিক বৃত্ত’ সম্পূর্ণ হবে মমতারও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement