যত যাত্রী, ততই উন্নয়ন স্টেশনের

রেল বোর্ড পরিকল্পনা করেছে, উন্নয়নের কাজে আর স্টেশনের আয় দেখা হবে না। মাপকাঠি হবে যাত্রীর সংখ্যা। যাত্রী পরিষেবা আরও উন্নত করার জন্য এই বিষয়ে একটি কমিটি গড়া হয়েছিল।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১৯
Share:

প্রতিটি দুর্ঘটনার পরেই রেলের তরফে যাত্রী-সুরক্ষা নিয়ে নড়েচড়ে বসার চেষ্টা দেখা যায় তাদের নানান ঘোষণায়। মুম্বইয়ের এক উড়ালপুলে পদপিষ্ট হয়ে বেশ কিছু প্রাণহানির পরেও একই ভাবে উদ্যোগী হয়েছে তারা। স্টেশন উন্নয়নে এত দিনকার নিয়মনীতিই বদলে ফেলছে রেল।

Advertisement

রেল বোর্ড পরিকল্পনা করেছে, উন্নয়নের কাজে আর স্টেশনের আয় দেখা হবে না। মাপকাঠি হবে যাত্রীর সংখ্যা। যাত্রী পরিষেবা আরও উন্নত করার জন্য এই বিষয়ে একটি কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ার পরে রেল মন্ত্রক এ বার যাত্রী-সংখ্যার ভিত্তিতে স্টেশনে উন্নয়নের কাজ করার সিদ্ধান্তই নিতে চলেছে বলে জানান বোর্ড-কর্তারা।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী রেলের খাতায় একটি স্টেশনের মান ঠিক করা হয়, সেখানকার যাত্রী-সংখ্যা, ট্রেনের সংখ্যা এবং এলাকার অবস্থান দিয়ে। মানের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে থাকে এ-১ ক্যাটিগরির স্টেশন। রাজ্যে এই ধরনের স্টেশন আছে চারটি— হাওড়া, শিয়ালদহ, খড়্গপুর ও নিউ জলপাইগুড়ি। এই সব স্টেশনে উন্নয়নের বিষয়টি আলাদা ভাবে দেখা হয়। কিন্তু ছোট এবং শহরতলির স্টেশনের ক্ষেত্রে এত দিন উন্নয়নের পরিকল্পনা কেমন হবে, সেটা ঠিক করা হতো সংশ্লিষ্ট স্টেশনের আয় যাচাই করে।

Advertisement

রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, রেলের এই পুরনো নিয়ম আর থাকছে না। এখন আয় নয়, স্টেশনের উন্নয়নের বিষয়টি ঠিক করা হবে যাত্রী-সংখ্যার ভিত্তিতেই। উদাহরণ দিয়ে রেলকর্তারা বলছেন, ধরা যাক দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ঝাড়গ্রাম স্টেশন। এই স্টেশনটি এখন জেলার সদর স্টেশন। কিন্তু কোনও সদর স্টেশনে উন্নয়ন যে-অনুপাতে হওয়া উচিত, ঝাড়গ্রামে তা হয়নি। যেমন, দু’তিনটে রাত কাটানোর ঘর, আধুনিক বিশ্রামাগারের মতো অনেক পরিষেবার ব্যবস্থা
হয়নি সেখানে।

ওই স্টেশনে আয় তেমন নয়। তাই এত দিন অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানাচ্ছেন রেলকর্তারা। অথচ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ঝাড়গ্রামে যাত্রী-সংখ্যা প্রচুর। যদিও আয় কম। কী করে হল এমন? রেলকর্তারা বলছেন, যাত্রীদের বেশির ভাগই অন্যত্র টিকিট কেটে কাজের সূত্রে ঝাড়গ্রামে আসেন। ফলে টিকিট বিক্রি হয় অন্যত্র। আর ভিড়টা হয় ঝাড়গ্রামে। সমীক্ষায় এ-সব তথ্যই উঠে আসায় রেল মন্ত্রক নিয়ম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের মনে হয়েছে, উন্নয়নের বিষয়টিকে আর আয়ের মাপকাঠিতে দেখা ঠিক হবে না।

নিয়ম বদলের ফলে স্টেশনগুলির অনেকটাই হাল ফিরবে বলে মনে করছেন রেলকর্তারা। তাঁদের আশা, এ বার ফুটব্রিজ থেকে আন্ডারপাস, প্ল্যাটফর্ম শেড, পানীয় জলের বুথ, টিকিট ভেন্ডিং মেশিন-সহ অনেক পরিষেবাই দেওয়া সম্ভব হবে।

রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, নিয়ম বদলের বিষয়টি উঠে আসে মুম্বইয়ের ওই দুর্ঘটনার পরে। সেখানে পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে গিয়েই কর্তাদের মনে হয়, অসঙ্গতি আছে নিয়মনীতির গোড়াতেই। সমীক্ষার রিপোর্টে বিভিন্ন স্টেশনের সবিস্তার হালহকিকত উঠে আসায় নীতি বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন