সময়ে চাল দাও, নইলে জেল যাও

সোজা আঙুলে কাজ হয়নি। খাদ্যসাথী প্রকল্পে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে তাই এ বার আঙুল বাঁকাচ্ছে রাজ্য সরকার। সরকারি ধান চালকলে ঢোকার পরে ১৭ দিনের মধ্যে তা ভাঙিয়ে দিতে হবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছে খাদ্য দফতর।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:১৬
Share:

সোজা আঙুলে কাজ হয়নি। খাদ্যসাথী প্রকল্পে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে তাই এ বার আঙুল বাঁকাচ্ছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

সরকারি ধান চালকলে ঢোকার পরে ১৭ দিনের মধ্যে তা ভাঙিয়ে দিতে হবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছে খাদ্য দফতর। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট চালকল-মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করে মামলা দায়ের করবে তারা। খাদ্যসচিব মনোজ অগ্রবাল এই নির্দেশ জারি করেছেন।

রাজ্যের খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, দু’টাকা কিলোগ্রাম দরে ওই চাল বিলি করা হয় খাদ্যসাথী প্রকল্পে। চালকল-মালিকদের একাংশ সংগৃহীত সরকারি ধান ঠিক সময়ে না-ভাঙানোয় ওই প্রকল্প মার খাচ্ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে কড়া ব্যবস্থা চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নির্দেশে বলা হয়েছে, যে-সব চালকলের মালিক ১৭ দিনের মধ্যে সরকারি ধান ভাঙিয়ে চাল দিতে পারবেন না, খাদ্য দফতরের জেলা স্তরের অফিসারেরাই তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারবেন। ফলে এ বার চাল সংগ্রহ আরও দ্রুত শেষ হবে বলে মনে করছেন খাদ্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের আশা, কল-মালিকদের একাংশ যে-ভাবে সরকারি ধান নিয়ে লেভির চাল দিতে গড়িমসি করতেন, তার অবসান হবে।

‘‘গত বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এ বার চালকলগুলিকে আগে থেকেই সতর্ক করে দেওয়া হল: সময় মেনে ধান ভাঙিয়ে চাল দাও। নইলে জেলের ঘানি টানো,’’ বলছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

রাজ্যে এখন প্রায় ১৬০০ চালকল রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৯০০টি কলে ধান কিনে ভাঙাতে দিয়েছে সরকার। চালকলগুলি সরকারের দেওয়া ধান ভাঙিয়ে খাদ্য দফতরের গুদামে পাঠাবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু অনেক সময়েই চালকল-মালিকদের একাংশ সরকারের দেওয়া ধান ভাঙিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ। কখনও কখনও এক বছরের লেভির চাল সরকারকে দিতে পরের বছরও গড়িয়ে যায়।

এ বার ধান সংগ্রহে নেমে খাদ্য দফতর প্রথমে অনলাইনে শুধু বৈধ পরিচয়পত্র থাকা চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেই পদ্ধতিতে বিশেষ সাড়া না-মেলায় পরিস্থিতি যাচাইয়ে সাত সচিবের কমিটি জেলায় জেলা সফরে গিয়েছিল। তাদের পরামর্শে যে-কারও কাছ থেকে যত খুশি ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার।

কিন্তু এক শ্রেণির চালকল সেই ধান ভাঙিয়ে চাল না-দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। সেই সমস্যার সুরাহা করতে চালকলগুলিতে নিয়মিত পরিদর্শন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনও চালকল-মালিক যদি সরকারি ধান নিয়ে চাল না-দেন, তা হলে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

সময় মেনে ধান ভাঙিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের যে-নির্দেশ দিয়েছে, তা অবাস্তব বলে মনে করেন চালকল-মালিকেরা। রাজ্য চালকল-মালিক সংগঠনের মুখপাত্র আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘প্রতিটি চালকলেরই ধান ভাঙানোর ক্ষমতা নির্দিষ্ট। কিন্তু সরকার এত বেশি ধান দিচ্ছে যে, ১৭ দিনের মধ্যে কোনও ভাবেই তা ভাঙিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।’’ মালেকের বক্তব্য, কোনও চালকলই এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন