ভোটের মুখে কমিশনের মাথাব্যথা ফুটিসাঁকো

চার মাথার মোড়ে একটা বটগাছ। দিনভর তার ছায়া পায় তিনটি জেলা। অবস্থানগত কারণেই ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ শ্যাডো জোন’ বর্ধমানের কেতুগ্রামের এই ফুটিসাঁকো মোড়। ফুটিসাঁকো মোড় আসলে বর্ধমান, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ— তিন জেলার সংযোগস্থল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৭
Share:

তিন জেলার সংযোগস্থল ফুটিসাঁকো। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

চার মাথার মোড়ে একটা বটগাছ। দিনভর তার ছায়া পায় তিনটি জেলা। অবস্থানগত কারণেই ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ শ্যাডো জোন’ বর্ধমানের কেতুগ্রামের এই ফুটিসাঁকো মোড়।

Advertisement

ফুটিসাঁকো মোড় আসলে বর্ধমান, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ— তিন জেলার সংযোগস্থল। মঙ্গলবার কলকাতায় জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ফুটিসাঁকোর উপরে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ দেন খোদ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। সেখানে উপযুক্ত নজরদারি ‘মেজর চ্যালেঞ্জ’ বলেও উল্লেখ করেছে কমিশন। ইতিমধ্যেই সেখানে বসেছে ছ’টি সিসি ক্যামেরা।

কিন্তু ফুটিসাঁকো নিয়ে প্রশাসনের এত মাথাব্যথা কেন?

Advertisement

ফুটিসাঁকো মোড় থেকে পশ্চিমে কিছুটা গেলেই বীরভূমের কীর্ণাহার, পূর্বে কেতুগ্রাম হয়ে কাটোয়া, দক্ষিণে মঙ্গলকোট হয়ে সোজা বর্ধমান, উত্তরে সামান্য গেলেই মুর্শিদাবাদের পাঁচথুপি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনৈতিক অশান্তি হোক বা খুন-জখম-ডাকাতি, যে কোনও দুষ্কর্মের পরে এই এলাকা দিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। কারণ, ভৌগোলিক অবস্থান এমন, যে অল্প সময়ে এক জেলা থেকে পৌঁছে যাওয়া যায় অন্য জেলায়। নানা জেলার পুলিশ-প্রশাসন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে যতক্ষণে ধরপাকড় শুরু করে, দুষ্কৃতীরা ততক্ষণে পগারপার।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কান্দির অপহৃত কাউন্সিলর দেবজ্যোতি রায় উদ্ধার হন এই মোড়ের কাছেই বাদশাহী সড়ক থেকে। ২০১০ সালে মুর্শিদাবাদের এক সিটু নেতাকে খুন করে এখানেই ফেলে গিয়েছিল আততায়ীরা। রাজ্য পুলিশের এক প্রাক্তন কর্তা বলেন, “বছর আটেক আগে কেতুগ্রামের নানা গ্রামে যখন নিয়মিত লুঠপাট হচ্ছিল, আমরা সব জেনেও কিছু করতে পারছিলাম না। কারণ, দুষ্কৃতীরা ফুটিসাঁকো হয়ে অনায়াসে পালিয়ে যেতে পারত।”

প্রশাসনের কর্তাদের মতে, অপরাধীদের কাছে ফুটিসাঁকো একটি ‘স্ট্র্যাটেজিক জোন’। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরেও গোয়েন্দাদের নজরে পড়েছিল এই মোড়। এনআইএ-র এক কর্তার দাবি, নিজেদের যোগাযোগের জাল ছড়াতে এই এলাকাকে জঙ্গিরা কাজে লাগিয়েছিল। তিনি বলেন, “ফুটিসাঁকো দিয়ে জঙ্গিরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় আসা-যাওয়া করতে পারত।”

ফুটিসাঁকো থেকে ছ’কিলোমিটার দূরে মারুট মোড়কেও ‘শ্যাডো জোন’ ধরা হচ্ছে। শুক্রবার এ ধরনের ‘ছায়া অঞ্চল’ নিয়ে তিন জেলা প্রশাসনের বৈঠকের পরে, গত রবিবার ফুটিসাঁকো মোড়ে সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা বসেছে।

তাতে কাজ কতটা হয়েছে? স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বড় রাস্তায় মোটরবাইকের উৎপাত কমলেও গ্রামের ভিতরের গলি বা খেতজমি ধরে অচেনা লোকজনের হাঁটাচলা বেড়েছে। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, “ক্যামেরা বসানোর পর থেকে মাঝরাতে গ্রামের অলিগলি ধরে মোটরবাইক চলছে!”

এক সময়ে বর্ধমান ও বীরভূম জেলায় কাজ করা এক পুলিশ-কর্তার মতে, ভোটের মরসুমে এ ধরনের ‘শ্যাডো জোন’-এ বিভিন্ন দলের ‘অনুগত’ সমাজবিরোধীদের সংখ্যা বাড়তে পারে। সে বাড়বাড়ন্ত বন্ধ করতে তিন জেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় থানার অফিসারদের মধ্যে বারবার আলোচনা করে যৌথ অভিযান চালাতে হবে।

বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের অবশ্য আশ্বাস, “সিসিটিভির পাশাপাশি, নাকাবন্দি ও টহলদারি চলছে। তিন জেলা যৌথ ভাবে তল্লাশি চালাছে। আচমকা হানা দিয়ে গাড়ি পরীক্ষাও করা হচ্ছে। শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন