অন্য রাজ্য থেকে শহরে ঘাঁটি গাড়ছে কেপমার পরিবার

সম্প্রতি ভাঙড় থানা এলাকা থেকে কাওয়াদি নাগেশ্বর ও শ্রীকান্ত নামে ওডিশার জাজপুরের দুই বাসিন্দাকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এক সোনা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গয়না ছিনতাই করে চম্পট দেওয়ার সময়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে ওই দুই দুষ্কৃতী।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৮ ০১:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভিন্ রাজ্য থেকে এসে শহর লাগোয়া এলাকায় সপরিবারে ঘাঁটি গেড়ে বসছে কেপমারের দল— এমনই দাবি পুলিশকর্তাদের।

Advertisement

সম্প্রতি ভাঙড় থানা এলাকা থেকে কাওয়াদি নাগেশ্বর ও শ্রীকান্ত নামে ওডিশার জাজপুরের দুই বাসিন্দাকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এক সোনা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গয়না ছিনতাই করে চম্পট দেওয়ার সময়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে ওই দুই দুষ্কৃতী।

ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, মাস চারেক আগে ওডিশার জাজপুর থেকে সপরিবার বারুইপুরের সীতাকুণ্ডু এলাকায় এসে ওঠে নাগেশ্বর ও শ্রীকান্ত। বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্ত্রী, সন্তান-সহ ওই এলাকায় ঘর ভাড়া নেয় তারা। আর পরিবারের সব সদস্যই কেপমারিতে জড়িত। সকাল থেকেই নানা দিকে কেপমারি করতে ছড়িয়ে যান সবাই। বৃদ্ধ বাবা-মা অথবা শ্বশুর-শাশুড়ি সঙ্গে পুত্রবধূ কোলে বছরে দেড়েকের শিশু নিয়ে বাসে-ট্রেনে উঠে পকেটমারি বা মোবাইল চুরিতে সিদ্ধহস্ত।

Advertisement

তদন্তকারীদের কথায়, ভিড় বাস ও ট্রেনে কোলে শিশু নিয়ে উঠে পড়ে তারা। ভিড়ের চাপে কেউ একটু বেখেয়াল হলেই নিপুণ ‘অপারেশনে’ কেপমারদের ঝুলিতে চলে যায় মোবাইল বা মানিব্যাগ। তা ছাড়া কোলে শিশু বা পাশে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকলে সাধারণত লোকজন সন্দেহ করে না।

লালবাজারের এক পুলিশকর্তা জানান, ভাঙড়ের ওই দুই দুষ্কৃতীকে তাঁরাও জেরা করেছেন। তাঁর দাবি, জাজপুর এলাকার এমন প্রায় শ’দুয়েক পরিবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আপাতত পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, দিল্লিতে ওই গ্যাং সক্রিয় বলে জেরায় জানিয়েছে ধৃতেরা। এরা শহর লাগোয়া বিভিন্ন বস্তি এলাকায় ঘর ভাড়া নেয়। তার পরে এলাকায় নজরদারি শুরু করে। শুধু বাস-ট্রেনে হাতসাফাই নয়, বাড়ি ও দোকানেও হামলা চালানো হয়।

ভাঙড়ে গয়না ছিনতাইয়ের তদন্তে নেমে মহিলাদের নজরদারি বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ভাঙড়ের পাগলাহাট এলাকায় ওই সোনা ব্যবসায়ী রাতে দোকান বন্ধ করার পর গয়না বাড়িতে নিয়ে যেতেন। পরের দিন তা ব্যাগে ভরে দোকানে নিয়ে আসতেন। তা নজর করেছিল কেপমার পরিবারের মহিলা সদস্যেরাই। ওই ব্যবসায়ী দোকানে আসার কিছু আগেই রাস্তা থেকে দুই দুষ্কৃতী গয়না সমেত ব্যাগ হাতিয়ে মোটরসাইকেল চেপে চম্পট দিয়েছিল। ওই ব্যবসায়ীর চিৎকারে আশপাশের লোকেরা মোটরসাইকেল সমেত দুই দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলে। ধৃতদের একটি মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করে দেখা যায় সেটিও চুরি করা।

যদিও ওই দু’জন ধরা পড়ার পর সীতাকণ্ডু থেকে তাদের পরিবার উধাও হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা। ধৃতদের জেরায় পুলিশ জেনেছে, পরিবারের কেউ ধরা পড়লেই রাজ্য ছেড়ে জাজপুরে ফিরে যায় বাকিরা। তার পরে নতুন আস্তানা খুঁজে ঠিকানা জানিয়ে দেয় জাজপুরের আত্মীয়দের। ধৃত জেল থেকে ছাড়া পেয়ে জাজপুরে ফিরে পরিবারের নতুন ঠিকানা জেনে নেয়। সেখানে পৌঁছে যোগ দেয় কেপমারির কাজেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন