এই গাড়ি লক্ষ্য করেই ছোড়া হয়েছে গুলি। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটের মুখে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। শুক্রবার রাতেও নন্দনপুরের হাঁপুনিয়ার ভিখারীপাড়া মোড়ে এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মজিরুদ্দিন মন্ডল ওরফে ধোলুর গাড়িতে গুলি ছোঁডা হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার নন্দনপুরে জনসভা করবেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
দলের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক সত্যেন রায়ের অনুগামী হিসেবে পরিচিত ধোলুবাবু গঙ্গারামপুর থানায় এলাকার আরেক তৃণমূল নেতা নুরুল ইসলাম সহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। শনিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অথচ, তৃণমূলের অন্দরেই অভিযোগ উঠেছে, নুরুল এলাকায় ঘোরাঘুরি করলেও পুলিশ তাঁকে ধরছে না।
পুলিশের একাংশ সরাসরি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার সকালে তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর হয়ে অন্য গোষ্ঠীকে চমকাতে পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্সে চড়ে সাদা পোশাকে আচমকা অভিযান চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ। সে কারণে নেতার গাড়িতে গুলি বোমা নিয়ে হামলার ব্যাপারে মামলা রুজু করে পুলিশ দায় সেরেছে কি না তা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার রসিদ মুনির খান বলেন, ‘‘গঙ্গারামপুরের নন্দনপুর এলাকায় গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। গঙ্গারামপুর থানার ওসিকে এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের ধরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
এই ঘটনার খবর পৌঁছেছে তৃণমূলের প্রদেশ নেতাদের কাছেও। ভোটের আগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঘিরে গুলি-বোমা ছোড়ার ঘটনায় অস্বস্তিতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাও। সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ গঙ্গারামপুরের নন্দনপুরে জনসভা করবেন পার্থবাবু।
গত ডিসেম্বরে তপনের সভা থেকে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে সকলকে এক হয়ে চলার নির্দেশ দিয়ে যান। তাতে যে কোনও কাজ হয়নি, তা নন্দনপুরে পরপর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে। তার উপর দলের এক পক্ষের হয়ে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানের খবর রটে যাওয়ার পর এই বিরোধ আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পার্থবাবুর সভা ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।
শনিবার সকালে সত্যেন রায় অনুগামী মজিরুদ্দিন ওরফে ধোলুবাবু, বিপ্লব মিত্র অনুগামী এলাকার প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি নুরুল ইসলাম সহ মোট ২২ জনের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা ও গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ নন্দনপুরের ভক্তিপুর বুথে দলীয় প্রার্থী সত্যেনবাবুর হয়ে প্রচার সেরে গাড়ি করে ফিরছিলাম।
সেসময় ভিখারীপাড়া মোড়ে একদল লোক গাড়ি আটকে হামলার চেষ্টা করে। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আততায়ীরা গুলি ছোড়ে। তবে গুলি কারও গায়ে লাগেনি।’’ নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা হয় বলে ধোলুবাবু অভিযোগ করেন। নুরুলের বক্তব্য, আমরা যাঁর অনুগামী হই না কেন। তৃণমূল দলটাতো করি। ভোটটা তো দলের প্রার্থী সত্যেনবাবুকেই দেব? অথচ তাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে শুধু মিথ্যা অভিযোগই করছেন না, পুলিশ দিয়ে শায়েস্তা করতে নানা কৌশল নিচ্ছেন।
বিপ্লব মিত্রের বক্তব্য, ‘‘এলাকার চেয়ারম্যান হিসাবে সত্যেনকেই সকলকে নিয়ে চলতে হবে। দলের কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব মিটিয়ে সকলকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। অথচ মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাসের অভিযোগ, গত সপ্তাহে নন্দনপুরে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়। তারপরেও বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।