ধর্মঘটের দোসর বৃষ্টি, সুনসান উত্তর

সরকারি অফিস খোলা থাকলেও বুধবার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে বিপর্যস্ত হল উত্তরবঙ্গের জনজীবন। শিলিগুড়ি থেকে কুমারগ্রাম, মালদহ থেকে কোচবিহার প্রায় সর্বত্রই জীবনযাত্রার স্বাভাবিক ছবিটা ছিল উধাও। সুনসান পথে বেসরকারি যানবাহনের দেখা মেলেনি, দোকান বাজারও অধিকাংশই ছিল বন্ধ। সরকারি বাস চললেও, অধিকাংশ শহরেই অটো, রিকশা রাস্তায় কম থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৪৯
Share:

বাস নেই। মালদহে জাতীয় সড়কের ধারে অপেক্ষায় যাত্রীরা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

সরকারি অফিস খোলা থাকলেও বুধবার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে বিপর্যস্ত হল উত্তরবঙ্গের জনজীবন। শিলিগুড়ি থেকে কুমারগ্রাম, মালদহ থেকে কোচবিহার প্রায় সর্বত্রই জীবনযাত্রার স্বাভাবিক ছবিটা ছিল উধাও। সুনসান পথে বেসরকারি যানবাহনের দেখা মেলেনি, দোকান বাজারও অধিকাংশই ছিল বন্ধ। সরকারি বাস চললেও, অধিকাংশ শহরেই অটো, রিকশা রাস্তায় কম থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের।

Advertisement

ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল আটকানোকে কেন্দ্র করে শিলিগুড়িতে পুলিশ এবং ধর্মঘট সমর্থনকারীদের মধ্যে কয়েক দফায় ধস্তাধস্তি হয়। মিছিল আটকে শিলিগুড়ির মেয়র তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য সহ দলের প্রথম সারির জেলা নেতাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জলপাইগুড়িতেও প্রবীণ সিপিএম নেতা মানিক সান্যাল সহ দলের জেলা নেতাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে প্রতিবাদ দিবস পালনের ডাক দিয়েছে সিপিএম। দিনহাটার সিতাইয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের পার্টি অফিসে হামলার অভিযোগও উঠেছে।

এ দিন ডুয়ার্স-তরাইয়ের অধিকাংশ চা বাগানই বন্ধ ছিল বলে জানা গিয়েছে। তবে রেল চলাচল স্বাভাবিক ছিল। নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন ও বাগডোগরা বিমানবন্দরের থেকে ট্যাক্সি মিলেছে। এনবিএসটিসি, পুলিশের তরফে শিলিগুড়ি পৌঁছনোর জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়। বাগডোগরায় দিনভর ১২টি বিমান ওঠানামা করেছে। কর্মীরা নিজেরাই রান্না খাওয়া করে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিমানবন্দর সচল রাখেন।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টি ছিল কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে। বৃষ্টির জন্য সকালে পথে নামতে পারেনি ধর্মঘটী সংগঠনগুলির সদস্যরা। তবে আলিপুরদুয়ারে সকাল দশটা নাগাদ বৃষ্টির মধ্যেই কোর্ট মোড়ের কাছে দু’টি সরকারি বাস থামিয়ে থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেন ধর্মঘট সমর্থনকারীরা। পরে পুলিশ এসে বাসগুলি চালানোর ব্যবস্থা করে। জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়িতেও বাস স্ট্যান্ডগুলিতে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে সরকারি বাসগুলিতে অন্য দিনের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা এ দিন অনেকটাই কম ছিল।

জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার ও হেমতাবাদেও। রায়গঞ্জ শহর ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ছিল সুনসান। ধর্মঘটের বিরোধিতা করে দিনভর তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা বাইক নিয়ে শহরে মিছিল করেছেন। ইসলামপুর পুরসভার অফিসও বন্ধ করে দিয়েছিল বনধ সমর্থকেরা। পুরসভা না খোলায় সেখানে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুরসভার নির্বাহী আধিকারিককে। দুপুর দেড়টা নাগাদ অফিস খোলে। ৩১ ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ করা হয়। করণদিঘিতে প্রায় এক ঘন্টার বেশি সময় অবরোধ চলে। হিলি সীমান্ত দিয়ে এদিন বহির্বাণিজ্য স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গিয়েছে।

এ দিন সকাল থেকে হিলকার্ট রোডে কয়েক দফায় বনধ সমর্থনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তিতে উত্তেজনা ছড়ায়। সকাল সাতটা থেকেই হাসমিচকে পিকেটিং শুরু করে বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনগুলি। পৌনে ১০টা নাগাদ হিলকার্ট রোডে সিপিএমের পার্টি অফিস থেকে কর্মী সমর্থকরা হাসমিচকের দিকে এগোতে শুরু করে। তাঁদের হাতে কোনও পতাকা বা মুখে স্লোগান ছিল না। সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের এগিয়ে আসতে দেখে, হাসমিচকে মোতায়েন থাকা পুলিশ বাহিনীও এগিয়ে যায়। ততক্ষণে সিপিএম কর্মী সমর্থকরা ঘুরে গিয়ে রাস্তার অন্যদিক দিয়ে পার্টি অফিসে ফিরে আসে। পার্টি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন সকলে। সে সময় শিলিগুড়ি থানার আইসি-সহ দু থেকে তিন জন পুলিশকর্মী এসে কয়েকজন সিপিএম কর্মীকে টেনে ভ্যানে তুলতে চাইলে, পুলিশ এবং ধর্মঘট সমর্থনকারীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তার মধ্যেই দু’জনকে টেনে হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তুলে দেয়। এর পরে হাসমি চকে দাঁড়িয়ে থাকা ধর্মঘট সমর্থনকারী বিভিন্ন বাম দলের নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেখান থেকে গ্রেফতার হন সিপিআইএমএলের জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার। টেনে হিঁচড়ে তাঁদের ভ্যানে তোলার সময় পুলিশ কর্মী এমনকী আধিকারিকরা অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ।

সকাল এগারোটার কিছু আগে হিলকার্ট রোডের সিপিএম পার্টি অফিস থেকে মিছিল বের হলে ফের উত্তেজনা শুরু হয়। মিছিলের সামনে ছিলেন মহিলারা। মহিলা পুলিশ এসে তাদের গ্রেফতার করতে গেলেও, ধস্তাধস্তি শুরু হয়। টানতে টানতে ভ্যানে তোলা হয় কয়েকজন সিপিএম সমর্থককে।

দলের কর্মী-সমর্থকদের ছাড়াতে দুপুর বারোটা নাগাদ ফের পথে নামে সিপিএম। মেয়র অশোকবাবু এবং দলের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারের নেতৃত্বে মিছিল শুরু হয়। তবে মিছিল এগোতেই পুলিশ মিছিল আটকে দেয়। এক পুলিশকর্মী অশোকবাবুর দিকে এগোতেই তেড়ে আসেন কর্মী-সমর্থকরা। ঘটনাস্থলে চলে আসেন শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার এবং শিলিগুড়ি থানার আইসি অচিন্ত্য গুপ্ত। মিছিল এগোতে দেওয়া যাবে না বলে পুলিশ অফিসাররা জানালে, অশোকবাবু দাবি করেন তাঁরা হেঁটেই থানায় যাবেন। দুই অফিসারের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয় জীবেশবাবুদের। এরপরে অশোকবাবু, জীবেশবাবুদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। দু’ঘণ্টা পর তাঁদের সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গ্রেফতারের সময় আমার হাত ধরে গাড়িতে তুলতে গিয়েছিল। আমি প্রতিবাদ করেছি। পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছে। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দিয়ে গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছে।’’ এ দিন জলপাইগুড়ির পূর্ত দফতরের মোড় অবরোধ করে সিপিএম। সেখান থেকে প্রবীণ সিপিএম নেতা মানিকবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তবে এ দিন ধর্মঘট সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগও উঠেছে। এদিন দুপুরে গাজলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রভাত পোদ্দার দফতরে ঢুকতে গেলে ধর্মঘট সমর্থনকারীরা বাধা দেয়। সেই সময় স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বাম কর্মীদের ধস্তাধস্তি বেধে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মানিকচকের মথুরাপুরে ভুটভুটির চাকার হাওয়া বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বাম কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।

এদিন দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “অন্য দিনের মতো রাস্তায় উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার গাড়ি চলেছে। বর্ধমান ও ধুলিয়ান এলাকায় দুটি উত্তরবঙ্গ পরিবহন সংস্থার বাস ভাঙচুর করেছে ধর্মঘট সমর্থনকারীরা। ডুয়াসের্র অধিকাংশ চা বাগান খোলা ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন