ট্রাম-বাস পাল্টাতে জার্মান সাহায্য

বৃহস্পতিবার ফ্রাঙ্কফুর্টে শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, এই বিষয়গুলি নিয়ে দুই জার্মান সংস্থা জিআইজেড ও কেএফডব্লিউ-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যসচিব মলয় দে এবং পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বন্দনা যাদব।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

ফ্রাঙ্কফুর্ট শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:০০
Share:

ফ্রাঙ্কফুর্টের রাস্তায় ট্রাম। নিজস্ব চিত্র

ঐতিহ্য বিপুল কিন্তু গতি মন্থর। স্মৃতির ভিড় অনেক কিন্তু টান সফরের আরামে। কলকাতার এই ট্রাম-ছবি বদলাতে এ বার জার্মান সরকারি সংস্থার হাত ধরতে চাইছে রাজ্য। একই রকম গাঁটছড়ায় পাল্টাতে চাইছে বাস, ফেরিঘাট আর যেখানে-সেখানে ই-জঞ্জাল উপুড় হয়ে থাকার ছবিও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ফ্রাঙ্কফুর্টে শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, এই বিষয়গুলি নিয়ে দুই জার্মান সংস্থা জিআইজেড ও কেএফডব্লিউ-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যসচিব মলয় দে এবং পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বন্দনা যাদব। গাঁটছড়া বেঁধে কাজ করার জন্য প্রাথমিক ভাবে বৈদ্যুতিক বাস, ব্যাটারিচালিত ফেরি এবং বৈদ্যুতিক ট্রলি বাসের বিষয়টি বাছা হয়েছে। আর চতুর্থটি হল, শহরকে ই-জঞ্জালমুক্ত রাখার বন্দোবস্ত।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথমে ১০০টি বৈদ্যুতিক বাস রাস্তায় নামানোর কথা ভাবা হচ্ছে। পরিকল্পনা রয়েছে ২০টি বৈদ্যুতিক ট্রলি বাস চালু করার। কলকাতা থেকে হাওড়ার মধ্যে ব্যাটারিচালিত ফেরি পরিষেবা শুরুর বিষয়েও কথা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে ই-বর্জ্য নিয়েও।’’ মন্ত্রীর দাবি, শেষ পর্যন্ত সমস্ত কিছু পরিকল্পনা মাফিক এগোলে, লগ্নি এবং প্রযুক্তি যেমন আসবে, তেমনই তা হবে পরিবেশবান্ধব।

Advertisement

রাজ্যে লগ্নি টানতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জার্মানির যে শহরে এসেছেন, সেই ফ্রাঙ্কফুর্টে ট্রামে চড়ে সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত চষে ফেলা যায় পুরো শহরই। বাতানুকূল, দ্রুত গতি— নিতান্ত কেজো সফরও তাতে আরামদায়ক। আবার ট্রলি বাস বিদ্যুতে চললেও তা কিছুটা ট্রামের ধাঁচে একাধিক বাসের কোচকে জুড়ে দেওয়ার মতো। তবে ট্রামের মতো লোহার চাকায় লাইনের উপরে তা চলে না। এর টায়ার গড়াতে পারে রাস্তার উপরেই। এর মধ্যে ঠিক কোনটিকে ঘিরে কলকাতার ট্রামের চেহারা বদলের চিন্তা চলছে, তা সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয় এখনও। তবে সব ঠিকঠাক চললে, খুব দ্রুতই এই নতুন যান কলকাতার রাস্তায় দেখা যাবে বলে অমিতবাবুর দাবি। একই ভাবে পরিবেশবান্ধব যান হিসেবে উঠে এসেছে বৈদ্যুতিক বাস এবং ব্যাটারিচালিত ফেরির কথা।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এজন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো কোথায়? বৈদ্যুতিক বাসের জন্য চার্জিং পয়েন্ট কি তৈরি আছে বা হচ্ছে? সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এখনও পর্যন্ত বৈদ্যুতিক বাস বা গাড়ির উপযুক্ত পরিকাঠামো সারা দেশেই নগণ্য। তবে ধীরে ধীরে তার প্রতি ঝোঁক বাড়লে, পরিকাঠামো তৈরিতেও গতি আসবে বলে তাদের অভিমত। ই-বর্জ্য মোকাবিলায় হাত মেলানোর বিষয়েও জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অমিতবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপের মতো বৈদ্যুতিন সামগ্রী খারাপ হওয়ার পরে তার ঠাঁই হয় আস্তাকুঁড়ে। পরিবেশে তার প্রভাব মারাত্মক।’’

এই চার বিষয়ে সহযোগিতার জন্য যে দু’টি জার্মান সরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে জিআইজেড সম্ভাব্যতা সমীক্ষা থেকে পরিকল্পনা রূপায়ণ— পুরো বিষয়টিই দেখে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেএফডব্লিউয়ের কাজ মূলত প্রকল্পে টাকা জোগানো। অমিতবাবু বলেন, ‘‘প্রকল্পের প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করে সম্ভাব্য খরচের ভিত্তিতে নিজেদের লগ্নির অঙ্কের কথা জানাবে জার্মান সংস্থাগুলি। সেই অনুসারে তার সম পরিমাণ টাকা দেবে রাজ্য।’’ তবে বিনিয়োগের টাকার থেকেও উন্নত প্রযুক্তি বড় প্রাপ্তি হতে পারে বলে মন্ত্রীর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন