বৃষ্টির জমা জলে ভেসে গিয়েছে উত্তর দমদমের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড। —নিজস্ব চিত্র।
বৃষ্টি সামান্য ধরলেও এখনও জমা জল নামেনি এলাকা থেকে। ঘরেও জল ঢুকে পড়েছে। ঘরের সেই জমা জলেই খাট থেকে পড়ে গিয়ে পাঁচ মাসের শিশুর মৃত্যু হল উত্তর দমদমে। শনিবার সকালে উত্তর দমদম পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দেবীনগর এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। শিশুটির নাম ঋষিকা ঘোড়ই। তার বাবার নাম পাপন ঘোড়ই।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শিশুটিকে খাটে ঘুম পাড়িয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়েছিলেন মা। কাজ করছিলেন তিনি। সেই সময়েই ঘটনাটি ঘটে। এলাকাবাসীরা জানান, শিশুটি ঘুমন্ত অবস্থায় কোনও ভাবে খাট থেকে নীচে জলে পড়ে যায়। জল থেকে শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে প্রথমে উত্তর দমদম পুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে সেখান থেকে ফুলবাগানের শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শিশুটির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনার পরে পুর এলাকার নিকাশি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় পুর প্রতিনিধি প্রশান্ত দাস জানান, পাম্প বসিয়ে জল বার করার চেষ্টা চলছে। নিকাশি নালা প্রকল্পের কাজ চলছে। বৃষ্টি শেষ হলে কাজ শেষ করা হবে।
প্রসঙ্গত, উত্তর দমদম নিচু এলাকা হওয়ার কারণে প্রতি বছরই জমা জলের সমস্যায় ভুগতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। গত কয়েক বছরে সেই সমস্যার সমাধানে একাধিক পরিকল্পনা করেছিল উত্তর দমদম পুরসভা। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ছ’টি প্রকল্পের কাজ শুরুও হয়েছে। সেই কাজ শেষ হলে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে উত্তর দমদমের একাধিক ওয়ার্ডের নিচু জায়গায় জল জমার প্রবণতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
যদিও স্থানীয়দের একাংশের মতে, পুর এলাকার মধ্যে একাধিক নিকাশি খালের সংস্কারই শুধু নয়, সেগুলির পলি তুলে নাব্যতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। সম্প্রতি পুরসভা এবং সেচ দফতর যৌথ ভাবে সেই সব নিকাশি খাল পরিদর্শন করে। এর পরে সেগুলি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই অনুসারে কাজ শুরু হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
তবে বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, খালের পাশাপাশি এলাকার জলাশয়গুলিও সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে। উত্তর দমদম পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রায় ১৯টি ওয়ার্ডে জল জমার সমস্যা রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি জায়গায় সমস্যা কিছুটা কমেছে। পর্যায়ক্রমে ছ’টি প্রকল্প কার্যকর হলে ওই সমস্যা পুরোপুরি মিটবে। তবে আরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদিও নিকাশি খাল সংস্কার হলেও সমস্যা পুরোপুরি মিটবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের মতে, এই সমস্যা মেটাতে এলাকায় ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে।